হাজিরা মক্কা ছাড়তে শুরু করেছেন

  • মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কংকর নিক্ষেপ শেষে জামারা থেকে বের হয়ে আসছেন হাজিরা◢

কংকর নিক্ষেপ শেষে জামারা থেকে বের হয়ে আসছেন হাজিরা◢

মক্কা (সৌদি আরব) থেকে: হাজিরা মঙ্গলবার (১২ জিলহজ) মিনায় তিন জামারায় ২১টি কংকর নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে হজের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মক্কায় ফিরেছেন। মঙ্গলবার জোহরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্তের আগে তিন জামারায় কংকর নিক্ষেপের বাধ্য-বাধকতা থাকায় যে যেভাবে পেরেছেন মিনায় যেয়ে কংকর নিক্ষেপের কাজ শেষ করেছেন। মক্কা থেকে স্বাভাবিক সময়ে ১০-১৫ রিয়ালে মিনা যাওয়া যায়, কিন্তু এদিন হাজিদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়েছে। জনপ্রতি ৫০ রিয়াল থেকে শুরু করে ১০০ রিয়াল পর্যন্ত ভাড়া দিয়েছেন অনেকে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/14/1565792778474.jpg
একদল হাজি স্মৃতি ধরে রাখতে নিজেরা ছবি তুলছেন◢

 

বিজ্ঞাপন

যেহেতু পবিত্র হজের সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ, এবার নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার পালা। সৌদি আরবের নিকটবর্তী দেশের হাজিরা দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে যেসব হাজিরা এখনও মদিনায় যাননি, তারা বৃহস্পতিবার থেকে পালাক্রমে মদিনা মোনাওয়ারা যাবেন। সেখান থেকে কেউ মদিনা এয়ারপোর্ট হয়ে সৌদি আরব ত্যাগ করবেন, অনেককেই আবার সড়কপথে মদিনা থেকে জেদ্দা হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যাবেন।

হাজিদের জন্য নিজ দেশ কিংবা মদিনা যাওয়ার আগে বিদায়ি তাওয়াফ করতে হয়। বিদায়ি তাওয়াফ করা ওয়াজিব। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হাজিরা বায়তুল্লাহর সঙ্গে শেষ সাক্ষাত না করে যেন ফিরে না আসে।’-সহিহ মুসলিম

বিজ্ঞাপন
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/14/1565792829583.jpg
তিন জামারার একটি, এই স্তম্ভে কংকর নিক্ষেপ করতে হয়◢

 

তাই মক্কা ত্যাগ করার আগে বুধবার (১৪ আগস্ট) সারাদিন হারাম শরিফে প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। হাজিরা বিদায়ি তাওয়াফ করছেন, কেউ নফল তাওয়াফ করছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি তাওয়াফের জায়গাগুলো লোকে লোকারণ্য ছিলো। হাজিরা নিচতলা, দোতলা, তিনতলা ও মসজিদে হারামের ছাদে তাওয়াফ করেছেন।

মিকাতের বাইরে যেসব হাজিরা এসেছেন, তাদের জন্য মক্কা মোকাররমা ত্যাগ করার সময় বিদায়ি তাওয়াফ করা ওয়াজিব। আর যারা মক্কা এলাকার ভেতরে থাকেন, তাদের জন্য বিদায়ি তাওয়াফ মোস্তাহাব।

ফরজ তাওয়াফ করার পর কেউ যদি নফল তাওয়াফ করে থাকেন, তাহলেও তার বিদায়ি তাওয়াফ আদায় হয়ে যাবে। তবে বিদায়ি তাওয়াফ আলাদাভাবে করে নেওয়াই ভালো।

বিদায়ি তাওয়াফে কোনো রমল, ইজতেবা ও সায়ি নেই। শুধুমাত্র কাবাকে সাত চক্করে তাওয়াফ করে ও দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। নামাজ শেষে খুব অনুনয়-বিনয় করে চোখের পানি ছেড়ে দোয়া করতে হয়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/14/1565792855383.jpg
কেনাকাটায় ব্যস্ত হাজিরা◢

 

নারীদের ঋতুজনিত কারণে বিদায়ি তাওয়াফ করতে না পারলে কোনো ক্ষতি নেই। তার ওপর দম ওয়াজিব হবে না।

তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ তাওয়াফ) আদায়ের পর থেকে যে কোনো সময় বিদায়ি তাওয়াফ করা যায়। তবে উত্তম হলো- দেশে ফেরার আগে বিদায়ি তাওয়াফ করা।

হজরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) একবার বিদায়ি তাওয়াফ করে এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যান। এরপর তিনি আবার বিদায়ি তাওয়াফ আদায় করেন।

মসজিদের হারামে সারাদিন দেখা গেছে পরিচিতরা একে অপরের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছেন। সবার চোখে বিরহের অশ্রু। আপনজনকে হারানোর ব্যাথা মনে নিয়ে কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে মোনাজাত করছেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/14/1565792942517.jpg
ফুটপাত থেকে টুকটাক কেনাকাটা সারছেন হাজিরা◢

 

ঢাকার মাওলানা মাসুম আহমদ মঙ্গলবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, ‌আমার ফিরতি ফ্লাইট বুধবার, জানা নেই জীবনে আর কোনোদিন আর আসতে পারবো কিনা, তাই যতক্ষণ মক্কায় আছি এই সময়টুকু মসজিদে হারামেই কাটিয়ে দিতে চাই।

মাওলানা মাসুমের মতো অনেকই আছেন, যারা নিজ নিজ দেশে চলে যাবেন তারা মক্কায় থাকা শেষ মুহূর্তগুলো বিদায়ি তাওয়াফ, নফল তাওয়াফ ও মসজিদে হারামে নামাজ আদায় করে কাটাচ্ছেন। কেউ আবার টুকটাক কেনাকাটাও করছেন।

এদিকে বাংলাদেশ হজ মিশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশি হাজিদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শনিবার (১৭ আগস্ট) থেকে শুরু হবে। বাংলাদেশ থেকে এবার ১ লাখ ২৭ হাজার ১৫২ জন হজযাত্রী হজপালনের জন্য সৌদি আরব এসেছেন। তন্মধ্যে ইন্তেকাল করেছেন ৬৯ জন।