ওয়াজ মাহফিলের বক্তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
ওয়াজ মাহফিলের বক্তাদের কাছে সাধারণ মানুষ ভালো কিছুর প্রত্যাশা করে, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ওয়াজ মাহফিলের বক্তাদের কাছে সাধারণ মানুষ ভালো কিছুর প্রত্যাশা করে, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ওয়াজ মাহফিল ও ওয়ায়েজদের (বক্তা) নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক বক্তার বক্তব্য নিয়ে ট্রল হচ্ছে। তাদের দেখানো নানা দৃশ্য হাসির খোরাকে পরিণত হয়। সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়িয়ে ‘চা খাব? খাই একটু? আপনারা খাবেন? ঢেলে দেই?’ গিয়াস উদ্দিন তাহেরির এই কথা সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। এর সঙ্গে ছড়িয়েছে, ‘ভাই! পরিবেশটা সুন্দর না? কোনো হৈ চৈ আছে?’

এর আগে দেশে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো, জঙ্গিবাদে উসকানি, নারী বিদ্বেষ, গণতন্ত্র ও দেশিয় সংস্কৃতি বিরোধী বক্তব্য এবং বিশেষ ওয়াজ মাহফিলে সরকারের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করার কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশের ১৫ জন আলেমকে চিহ্নিত করে তাদের ওপর নজরদারি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কতিপয় দিকনির্দেশনা দিয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং বিভাগীয় কমিশনারদের নিকট পরিপত্র পাঠায়।

তখন থেকে এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী, মিডিয়াকে ওয়াজ মাহফিল ও বক্তাদের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্বেষ উগড়ে দিতে দেখা গেছে। অনেকে সরাসরি ওয়াজ মাহফিল বন্ধের দাবিও তুলেছেন। এমতাবস্থায় সারাদেশের বক্তাদের তত্ত্বাবধান, দিক-নির্দেশনা দেওয়ার উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। এ লক্ষে ‘ইত্তেফাকুল ওয়ায়েজীন বাংলাদেশ’ শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে ‘ওয়ায়েজ, খতিব ও দায়ী ওলামায়ে কেরামের করণীয়’ শীর্ষক এক কর্মশালার আয়োজন করেছে।

সংগঠনের উপদেষ্টা শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক, পীরে কামেল মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবি ও মুফাসসিরে কোরআন মাওলানা হাসান জামিল স্বাক্ষরিত প্রচারপত্রে বলা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে ওয়াজ-নসিহত দ্বীনি দাওয়াত ও তালিমের একটি শক্তিশালী মাধ্যম। আল্লাহর মেহেরবানী, বাংলাদেশে সারাবছর ব্যাপকহারে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মাহফিলগুলোর মাধ্যমে দেশব্যাপী ইসলামি পরিবেশ বিরাজমান থাকে। নানা ধরনের ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়। মানুষ দ্বীনের পথে পরিচালিত হয়। বিপুল পরিমাণ নবীণ ও প্রবীণ ওলামায়ে কেরাম এ ময়দানে খেদমত আঞ্জাম দিয়ে থাকেন। কিন্তু ধীরে ধীরে এ ময়দানকে নিয়ে বাতিলপন্থীরা ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। দ্বীনের এই মহান ক্ষেত্রটিকে সংকুচিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের সরলমনা অনেক ভাইয়ের কিছু কিছু অপরিণামদর্শী কার্যকলাপ ষড়যন্ত্রের যাচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে রসদ জোগাচ্ছে।’

লিফলেটে আরও বলা হয়, ‘ওয়াজ-নসিহতের ময়দান নির্বিঘ্ন থাকা দ্বীনের জন্য একান্ত জরুরি। আগামী দিনে মসজিদ ও ওয়াজের মিম্বর নির্বিঘ্ন, নিরাপদ ও কার্যকর রাখতে হলে আমাদের সকলের সম্মিলিত ভূমিকা অপরিহার্য। বিশেষত নবীন ওয়ায়েজ, খতিব ও দাঈ ভাইদের দায়িত্ব ও কর্মকৌশল বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা ও সচেতনতা প্রয়োজন।’ আর এসব বিষয়কে মাথায় রেখে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে।

কর্মশালা প্রসঙ্গে পীরে কামেল মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবি বলেন, এর উদ্দেশ্য হলো- কমেডি বক্তা, উগ্রপন্থা ও পরস্পর বিদ্বেষ রোধ করা। মাঝে মাঝে মাহফিলের মঞ্চে বিভিন্ন রকমের কমেডি দেখা যায়। যা শোভনীয় নয়। কারণ, ওয়াজের মূল উদ্দেশ্য মানুষের আত্মশুদ্ধি। পরস্পরে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করা। কোনো বিষয়ে বিদ্বেষ ছড়ানো ও কৌতুক করা মাহফিলের উদ্দেশ্য নয়। এ সব বিষয়কে সামনে রেখে বাংলাদেশের মুরুব্বি আলেমদের তত্ত্বাবধান ও নির্দেশে গঠিত হয়েছে ইত্তেফাকুল ওয়ায়েজীন বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের প্রখ্যাত তিন বক্তা
ইত্তেফাকুল ওয়ায়েজীন বাংলাদেশের তিন উপদেষ্টা মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবি ও মাওলানা হাসান জামিল 

 

অন্যদিকে সংগঠনের আরেক উপদেষ্টা শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক বলেন, এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, ‘দাওয়াত ও নসিহতের লক্ষ্যে যারা মাঠে-ময়দানে বক্তব্য দিয়ে থাকেন, তাদেরকে সহযোগিতা করা; তাদের সামনে ওয়াজ-নসিহত ও দাওয়াতের উদ্দেশ্য এবং কর্মপন্থা বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া। সেই সঙ্গে এই ময়দানে কর্মরতদের মধ্যে সমন্বয় সাধন ও তাদেরকে সংগঠিত করে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মোকাবিলা করা ও জবাবদিহিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। এটা কোনো সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনী কিংবা শোডাউন নয়, এটি প্রশিক্ষণমূলক একটি কর্মসূচি।’

মুফাসসিরে কোরআন মাওলানা হাসান জামিল বলেন, ওয়াজ মাহফিল যেহেতু একটি দ্বীনি বিষয়, তাই দ্বীনের অন্যান্য বিষয়ের মতো এক্ষেত্রেও হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও সালফে সালেহিনের অনুকরণ করা জরুরি। মানুষের ব্যক্তি জীবনের পরিশুদ্ধি ও আকিদা-বিশ্বাসের সংশোধনের ক্ষেত্রে ওয়াজ মাহফিলের গুরুত্ব অপরিসীম। এ বিষয়গুলোই কর্মশালায় আলোচনা করা হবে।

বস্তুত ওয়াজ ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারমূলক কাজ। তাই বক্তার কোরআন-হাদিসের অর্থ, ব্যাখ্যা, বিশুদ্ধতা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা দরকার। সেই সঙ্গে তাকে আলেম, দ্বীনদার, মুত্তাকি ও পরিপূর্ণ সুন্নাহর অনুসারী ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত হওয়া আবশ্যক। আমরা মনে করি, সত্যিকারের বক্তা পেশাদার ওয়ায়েজ নন। তার দ্বারা সমাজে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় না।

এ কথা মানতে দ্বিধা নেই, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, খুতবা, ওয়াজ মাহফিল, সিরাত মাহফিল, ইসলাহি মাহফিল ও তাফসির মাহফিলসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আলেমরা ইসলামের বাণী ও শিক্ষাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। সৎ, ঈমানদার, যোগ্য ও দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন নাগরিক তৈরিতে ওয়াজ মাহফিলের ভূমিকা অসামান্য।

ইসলামে ব্যভিচার, মদ, জুয়া, ঘুষ, সুদ, জবর দখল, অশ্লীলতা, জুলুম, নির্যাতন, অন্যের সম্পদহরণ, কারও অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, নারী নির্যাতন, যৌতুক নেওয়া, মিথ্যা বলা, ওজনে কম দেওয়া, অফিস ফাঁকি দেওয়া পাপের কাজ। সাধারণ মুসলমান যেহেতু এ সম্পর্কে কম ওয়াকিবহাল, সেহেতু আলেমরা কোরআন-হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে মানুষকে এসব পাপাচার থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। সে হিসেবে বলা চলে, ওয়াজ মাহফিল হলো- মানুষ সংশোধনের কেন্দ্র। আলোকিত শিক্ষালয়। এটাকে বন্ধ করা কিংবা নিয়ন্ত্রণ করার অর্থ হলো- সমাজকে আরও অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

আমরা মনে করি, দেশের সম্মানিত ও বিজ্ঞ আলেমদের তত্বাবধানে পরিচালিত ওয়াজ মাহফিলে বিশুদ্ধ কোরআন-হাদিসের চর্চা অব্যাহত থাকবে। দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল জানার পাশাপাশি এখান থেকে শ্রোতারা নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত সম্পর্কে জানা ছাড়াও ইসলামি জীবন বিধানের সন্ধান পাবেন। এসব মাহফিল থাকবে অমুসলিমদের জন্যও উন্মুক্ত। এখান থেকে ইসলাম ধর্মের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হবে যুক্তির আলোকে। গোঁড়ামি, উগ্রপন্থা, বিশেষ মতবাদ প্রচার যেনো ওয়াজ মাহফিলকে কলুষিত না করে সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখবেন বক্তারা। আমাদের প্রত্যাশা এই কর্মশালায় মাহফিল চলার একটি সময়সীমা নির্ধারণ করার পাশাপাশি ভিডিওধারণ, ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার, ওয়াজের বিষয় নির্ধারণ এবং উপস্থাপনা পদ্ধতি নিয়েও প্রয়োজনীয় আলোচনা হবে।

   

দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতা প্রকাশ পেয়েছে যে আয়াতে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন মাজিদ, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন মাজিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাসজুড়ে দেখা গেছে, মানুষ সবসময়ই তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কারণ মানুষ প্রকৃতিগতভাবে অভাব নিয়েই দুনিয়ায় এসেছে। দুইভাবে মানুষ বিপদগ্রস্ত হচ্ছে কিংবা বিপদে পড়ছে। এক. মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ঠিকমতো চিহ্নিত না করা। দুই. ভুল পথে চাহিদা মেটানোর প্রবণতা।

এই দুই বিপদজনক পথ সঠিকভাবে অতিক্রমের জন্যই আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসুলদেরকে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী নবীরা মানুষকে শিক্ষা দিতেন। যেমন কোরআনের বক্তব্য যদি মানুষ বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী আমল করে তাহলে তার শক্তিসামর্থ্য যেমন বাড়বে তেমনি পরিত্রাণ পাবে এবং যেকোনো বিপদ বা ভুল পথে পরিচালিত হওয়া থেকে নাজাত পাবে।

কোরআন মাজিদের সুরা হাদিদের ২০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা জেনে রাখো যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র।

এর উপমা হলো- বৃষ্টির মতো, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদের আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখেরাতে আছে কঠিন আজাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’

বর্ণিত আয়াতটি আমাদের কাছে জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরেছে এভাবে-
ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া মোটেই ভরসা করার যোগ্য নয়। পার্থিব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা কিছু হয় এবং যাতে দুনিয়াদার ব্যক্তি মগ্ন ও আনন্দিত থাকে, প্রথমে সেগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে পার্থিব জীবনের মোটামুটি বিষয়গুলো যথাক্রমে এই- প্রথমে ক্রীড়া, এরপর কৌতুক, এরপর সাজ-সজ্জা, এরপর পারস্পরিক অহমিকা, এরপর ধন ও জনের প্রাচুর্য নিয়ে পারস্পরিক গর্ববোধ।

উল্লেখিত ধারাবাহিকতায় প্রতিটি অর্থেই মানুষ নিজ অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু কোরআন মাজিদ বলে যে, এ সবই হচ্ছে সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী।

প্রকৃতপক্ষে, কোরআন মাজিদের এই আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘মানুষ যখন শিশু থাকে তখন সে খেলা করে, সে তার যৌবনকে উদ্দেশ্যহীনভাবে অতিবাহিত করে, তার যৌবনে সে পৃথিবীর সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যে মগ্ন থাকে এবং তার মধ্য বয়সে ও বার্ধক্যে সে অহংকার এবং সম্পদ ও সন্তানদের নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়!’

তাই পৃথিবীটা একটা খেলা। এমতাবস্থায় খেয়াল রাখা, কোনোভাবেই ধোঁকায় না পড়া। আমরা যদি কোনো উচ্চ অবস্থানে পৌঁছি তাহলে অহংকারী না হওয়া, যদি পতন ঘটে কিংবা অবস্থা নীচের দিকে চলে যায়- তাহলেও নিরাশ না হওয়া।

আয়াতে বর্ণিত পাঁচটি বিশেষ শব্দ দিয়ে মানবজাতির জন্য তাদের বাস্তবতাকে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে এর প্রতিটিই হচ্ছে একেকটি ফাঁদ এবং মানুষ এসবে জড়িয়ে পড়ে।

;

৯ বছর পর উমরার সুযোগ পেলেন ইরানিরা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ ৯ বছরের বিরতির পর পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরানের নাগরিকরা পবিত্র উমরা পালনের জন্য তেহরান থেকে পবিত্র মক্কা নগরীর উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। সোমবার (২২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল সোমবার পবিত্র উমরা পালনের জন্য সৌদি আরবের উদ্দেশে যাত্রা করেছে বলে ইরানের সরকারি বার্তাসংস্থা জানিয়েছে। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে।

এর আগে দীর্ঘদিন দূরে থাকার পর গত বছরের মার্চ মাসে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয় মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান ও সৌদি আরব। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের মধ্যে আবারও সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়। আর উভয় দেশের সম্পর্কের অগ্রগতির পেছনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিল চীন।

২০১৬ সাল থেকে থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই বড় দেশের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। ওই বছর সৌদি আরব সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের দায়ে শিয়া ধর্মীয় নেতা শেখ নিমর আল নিমরসহ ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা হয়েছিল। আর তারপর দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটে।

মূলত ইরানি বিক্ষোভকারীরা তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলার পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারপর থেকে সুন্নি এবং শিয়া-নেতৃত্বাধীন এই প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা প্রায়ই জারি ছিল। এই দুই দেশ একে অপরকে নিজের আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে থাকে।

এ ছাড়া সিরিয়া এবং ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংঘাতে ইরান ও সৌদি একে অপরের বিরোধী পক্ষ হয়ে কার্যত পরোক্ষ লড়াইয়ে নিয়োজিত ছিল। আর তাই সুন্নি-সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরব এবং শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরানের মধ্যে উত্তেজনা ছিল প্রায়ই অনেক বেশি।

গত বছর সম্পর্ক পুনরায় শুরু হওয়ার আগে ইরানিরা শুধুমাত্র হজপালন করতে সৌদি আরব যেতে পারত।

রয়টার্স বলছে, তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে ৮৫ জন উমরাযাত্রীর বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইরানে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ বিন সৌদ আল আনজি।

;

পানি ও বৃষ্টির জন্য ইস্তেসকার নামাজ জরুরি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে বৃষ্টির জন্য ইস্তেসকার নামাজ আদায় করা হয়েছে, ছবি : বার্তা২৪.কম

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে বৃষ্টির জন্য ইস্তেসকার নামাজ আদায় করা হয়েছে, ছবি : বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রচণ্ড দাবদাহ ও পানি সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার দরবারে তওবা-ইস্তেগফার, প্রার্থনা ও ইস্তেসকার নামাজ আদায় জরুরি।

প্রচণ্ড গরমে পুড়ছে সারাদেশ। কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে মরু-কারবালার মতো তীব্র পানি সঙ্কট। অনাবৃষ্টি ও শুষ্ক বৈরি আবহাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। হিটস্ট্রোকে ইতোমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছে কমপক্ষে একডজন মানুষ। বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে বিভিন্ন স্থানে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। রাজধানী ঢাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে ৬ থেকে ৭ ফুট করে। বরেন্দ্র অঞ্চলে ১১০ ফুট থেকে ১২০ ফুট নিচে নেমে গেছে কোথাও কোথাও। ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির। খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে। পশু-পাখিরাও পড়েছে নিদারুণ কষ্টে। এমন দুর্যোগ অব্যাহত থাকলে তার ভয়াবহ পরিণতি কোথায় গিয়ে পৌঁছবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন।

মনে রাখতে হবে, একমাত্র দয়াময় আল্লাহতায়ালাই এই মহাবিপদ থেকে পরিত্রাণ দিতে পারেন। তিনিই অনতিবিলম্বে ফিরিয়ে আনতে পারেন স্বাভাবিক অবস্থা। তাই আমাদের উচিৎ তার দ্বারস্থ হওয়া। সব ধরনের পাপের কাজ পরিত্যাগ করে গোনাহের জন্য একনিষ্ঠভাবে তওবা করা। তিনি রহমতের ভাণ্ডার। তার কাছে কাতরভাবে প্রার্থনা করা রহমত কামনায়।

অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড দাবদাহ থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য ইসলামে রয়েছে ইস্তেসকার নামাজের ব্যবস্থা। মুমিন-মুসলমান হিসেবে দেশের সর্বত্র এ নামাজের ব্যবস্থা করে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে সকাতরে প্রার্থনা জানানোর এখনই সময়।

‘ইস্তেসকা’ অর্থ পানি প্রার্থনা করা। অনাবৃষ্টিতে মানুষ ও জীবজন্তুর কষ্ট হতে থাকলে আল্লাহর দরবারে পানি প্রার্থনা করে দোয়া করা সুন্নত। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, নবী কারিম (সা.) বৃষ্টির প্রার্থনার সময় বলতেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি তোমার বান্দাকে এবং তোমার জীব-জানোয়ারকে পানি দান করো।

‘ইস্তেসকা’ নামাজ আদায়ের পদ্ধতি
এলাকার সব মুসলমান পুরুষ বালক ও বৃদ্ধদেরসহ গরু, ছাগল নিয়ে পায়ে হেঁটে, অবনত মস্তকে মিনতির সঙ্গে খোলা মাঠে উপস্থিত হতে হয়। এরপর উপযুক্ত ইমামের পেছনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। এ নামাজে আজান-ইকামত নেই। ইমাম উচ্চস্বরে কেরাত পড়বেন এবং সালাম ফেরানোর পর ঈদের খুৎবার ন্যায় দুইটি খুৎবা পাঠ করবেন। এরপর কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত প্রসারিত করে মুসল্লিদের নিয়ে আল্লাহর দরবারে রহমতের পানির জন্য মোনাজাত করবেন।

উল্লেখ্য, মাঠে যাবার পূর্বে দান-সদকা করা উত্তম।

;

দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার দোয়া



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার দোয়া, ছবি : সংগৃহীত

দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচার দোয়া, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হাদিসের ভাষ্য মতে, মহান আল্লাহ কেয়ামতের আগে দাজ্জালকে পাঠাবেন। সে এসেই পৃথিবীতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে। ধোঁকা ও প্রতারণায় মানুষের ঈমান ছিনিয়ে নেবে। তার ভয়াবহ ফেতনা সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হজরত আদম (আ.) থেকে কেয়ামত কায়েম হাওয়া পর্যন্ত দাজ্জালের ফেতনার চেয়ে কোনো ফেতনা বড় নয়।

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার ফেতনার বিষয়ে সতর্ক ছিলেন। উম্মতের জন্য দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন।

দোয়াটি হলো- (উচ্চারণ) : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া মিন আজাবিন্নারি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল।

অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কবরের শাস্তি, জাহান্নামের শাস্তি, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এ দোয়া পাঠ করতেন। -সহিহ বোখারি : ১৩৭৭

দাজ্জাল এখন কোথায়?
হজরত ফাতেমা বিনতে কায়েস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে দাজ্জালের অবস্থানের কথা বর্ণিত হয়েছে। দীর্ঘ হাদিসের সারাংশ হলো, একদিন নামাজ শেষে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবি হজরত তামিম দারি (রা.)-এর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা বর্ণনা করেন। তারা নৌভ্রমণে বের হয়ে ঘটনাচক্রে একটি দ্বীপে উপনীত হয়েছিল। সেখানে দাজ্জাল ও তার গুপ্তচরের সঙ্গে কথোপকথন হয়েছিল।

হাদিসের শেষাংশে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মনে রেখো, দাজ্জাল শাম কিংবা ইয়েমেনের কোনো সাগরে নেই। সে পূর্বের কোনো এক স্থানে আছে। এ কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। -সহিহ মুসলিম : ৭১১৯

দাজ্জালের আত্মপ্রকাশের স্থান
হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বলেছেন, দাজ্জাল পূর্বাঞ্চলীয় কোনো স্থান থেকে বের হবে। স্থানটির নাম হলো খোরাসান। কিছু কওম তার অনুসরণ করবে। তাদের চেহারা হবে স্তরবিশিষ্ট ঢালের মতো। -জামে তিরমিজি : ২২৩৭

দাজ্জালের নিষিদ্ধ এলাকা
হজরত আনাস (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মক্কা-মদিনা ছাড়া পৃথিবীর সব জনপদে দাজ্জাল বিচরণ করবে। কেননা এই দুই শহরের প্রতিটি রাস্তায় ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পাহারাদারিতে নিয়োজিত থাকবে। অবশেষে দাজ্জাল মদিনার এক নিকটবর্তী স্থানে অবতরণ করবে। তখন মদিনায় তিনবার ভূকম্পন হবে। যার ফলে প্রত্যেক মুনাফেক ও কাফের মদিনা থেকে বের হয়ে তার নিকট চলে যাবে। -সহিহ মুসলিম : ৭১২৩

আল্লাহতায়ালা সবাইকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

;