শিক্ষকের দান দুনিয়ার সেরা

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

শিক্ষকরা মানুষের হৃদয়ে চিরস্মরণীয়, বরণীয় হয়ে থাকেন, ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষকরা মানুষের হৃদয়ে চিরস্মরণীয়, বরণীয় হয়ে থাকেন, ছবি: সংগৃহীত

মানবসমাজে সাধারণত যেব্যক্তি বেশি পরিমাণে দান-খয়রাত করে, তিনি মানুষের কাছে দানবীর হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু ইসলামে তাকে সত্যিকারের দানবীর বলা হয়নি। কারণ অর্থ-সম্পদের দান বস্তুগত সাহায্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে দানগ্রহীতা তা দ্বারা অন্যের দুঃখ-কষ্টে সহযোগিতা করতে পারে না। পক্ষান্তরে একজন শিক্ষক শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর জীবনকে আলোকিত করে আবার সেই শিক্ষার্থী স্বীয় জ্ঞান দ্বারা অন্যের জীবনকে আলোকিত করতে সক্ষম হয়। শিক্ষকের অবদান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, শিক্ষার্থীর জীবনপ্রবাহে ও মানবসমাজে চিরকাল অবিস্মরণীয় হয়ে থাকে। তাই একজন আদর্শ শিক্ষক দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দানবীর। তার সুশিক্ষা দানের ধারাবাহিকতায় সমাজ থেকে মূর্খতা বিতাড়িত হয়। মানবসমাজ ও রাষ্ট্র কলুষমুক্ত হয়, শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

হাদিসে দুনিয়াবি সম্পদ না থাকলেও একজন আদর্শ শিক্ষক তাকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দানবীর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা বলতে পারো কি, দানের দিক দিয়ে সর্বাপেক্ষা বড় দাতা কে? সাহাবারা বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলই অধিক অবগত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, দানের দিক দিয়ে আল্লাহই হচ্ছেন সর্বাপেক্ষা দাতা। অতঃপর বনি আদমের মধ্যে আমিই সর্বাপেক্ষা বড় দাতা। আর আমার পর বড় দাতা হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করবে এবং তার প্রচার-প্রসার করতে থাকবে। কিয়ামতের দিন সে একাই দলবলসহ একজন আমির অথবা একটি উম্মত হয়ে উঠবে। -বায়হাকি

বিজ্ঞাপন

শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। মহৎ এ পেশার দরুণ একজন শিক্ষক মানুষের হৃদয়ে চিরস্মরণীয়, বরণীয় হয়ে থাকেন। শিক্ষকের মৃত্যু হলেও কালের আবর্তনে তার প্রদত্ত অবদান ক্ষয় হয় না। তাদের পাঠদানের প্রতিদান প্রবহমান থাকে অনন্তকাল। তারা মরেও অমর। সওয়াবের ধারাবাহিকতায় শিক্ষকদের আত্মা শান্তি পায়। কারণ একজন শিক্ষকের জ্ঞান দ্বারা অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবন উপকৃত হয়। এ উপকারই একজন শিক্ষকের জন্য সদকায়ে জারিয়ার রোপিত বীজ।

এ প্রসঙ্গে হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমলের সওয়াব কখনও বন্ধ হয় না। ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. ওই জ্ঞান, যার দ্বারা মানুষের উপকার সাধিত হয় ও ৩. যে সন্তান তার (মা-বাবা) জন্য দোয়া করে।’ -সহিহ মুসলিম: ৪৩১০

বিজ্ঞাপন

যেহেতু শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষার্থীদের সুন্দর ভবিষ্যৎ জীবন নির্ভর করে শিক্ষক সমাজের ওপর। শিক্ষকের আন্তরিকতা ও ভালোবাসায় ছাত্রের জীবন আলোকিত হয়। তাই শিক্ষার্থীরা স্বীয় শিক্ষককে আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। তবে এ সম্মান ও শ্রদ্ধা অর্জনের প্রথম শর্ত হলো- শিক্ষককে আদর্শবান ও নীতিবান হওয়া। কারণ শিক্ষকের স্বভাব দ্বারা ছাত্ররা প্রভাবিত হয়। আর ওই প্রভাব ছাত্রজীবনের মূল উদ্দীপক। তাই একজন শিক্ষকের জীবনে শিক্ষকতার পাশাপাশি নৈতিকতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইসলামে শিক্ষককে বাবার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তাই একজন শিক্ষকের ছাত্রের প্রতি বাবার মতো ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। সন্তানকে সুশিক্ষিত করার বিষয়ে বাবা-মাকে যেভাবে আল্লাহতায়ালার দরবারে জবাবদিহি করতে হবে, সে রকম শিক্ষককেও ছাত্রছাত্রীদের আদর্শ ও সভ্যতা শিক্ষা প্রদানের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালার কাছে জবাবদিহি করতে হবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে অভিভাবকদের রক্ষিত আমানত। এতে তাদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের খেয়ানত করা যাবে না। সবসময় শিক্ষার্থীদের সুন্দর ও আলোকিত জীবন গড়ার প্রত্যয় নিয়ে শিক্ষকদের কাজ করে যেতে হবে।

শিক্ষকের মর্যাদাদানের পাশাপাশি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শিক্ষা, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষক ও শিক্ষার ব্যাপকীকরণে সদা সচেষ্ট ছিলেন। তাই তো তিনি বদরের যুদ্ধবন্দিদের মুক্তির জন্য মদিনার শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার চুক্তি করেছিলেন। যার মাধ্যমে তিনি বন্দিদের মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন, যা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল।

বাংলাদেশে স্বাধীনতার চার দশক পেরিয়ে গেলেও শিক্ষকসমাজ অনেকটা অবহেলিত ও চরমভাবে উপেক্ষিত। অনেক সময় তো শিক্ষকদের অপমান-অপদস্ত ও শারীরিকভাবে নিগ্রহের খবর আসে। আবার অনেক শিক্ষক নিজেই নৈতিকতার পদস্খলন ঘটিয়ে নানা অপকর্ম করেন, লেজুড়বৃত্তিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে নিজেকে বিতর্কিত করে তুলেন। এর ফলে শিক্ষক সমাজ হয়ে পড়েছেন মানুষের উপহাসের পাত্র। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সময়ের এমনই এক ক্রান্তিলগ্নে ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হচ্ছে। বিশ্বের সব শিক্ষকের অবদানকে স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেসকোর ডাকে ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

আমরা আশা করি, বিশ্বব্যাপী শিক্ষকদের যাবতীয় বৈধ অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা, শিক্ষকদের জীবনের মান উন্নত করার বিষয়ে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি এবং শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি- সর্বোপরি দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করাই হোক এ দিবসের অঙ্গীকার।