মনোমুগ্ধকর মসজিদ ও সৎমানুষের দেশ বুর্কিনা ফাসো

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বুর্কিনা ফাসোর একটি মসজিদে মুসল্লিদের ভিড়, ছবি: সংগৃহীত

বুর্কিনা ফাসোর একটি মসজিদে মুসল্লিদের ভিড়, ছবি: সংগৃহীত

সৎমানুষের দেশ বলে পরিচিত পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুর্কিনা ফাসোতে রাজনৈতিক অশান্তির ধাক্কা লেগেছে।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) দেশটির একটি মসজিদে সশস্ত্র হামলায় অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে দেশটির ওদালান প্রদেশের সালমোসি গ্রামের মসজিদে এই হামলা হয়েছে। বুর্কিনা ফাসোতে সম্প্রতি সন্ত্রাসী হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে সশস্ত্র সংঘর্ষে ৬০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

বুর্কিনা ফাসোকে বলা হয় সৎমানুষের দেশ। আফ্রিকা মহাদেশের পশ্চিমভাগে অবস্থিত এই দেশটি আগে আপার ভোল্টা নামে পরিচিত ছিল। ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা অর্জনের আগ পর্যন্ত এটি একটি ফরাসি উপনিবেশ ছিল।

বুর্কিনা ফাসো
বামে বুর্কিনা ফাসোর নাগরিকদের নামাজের দৃশ্য, ডানে মক্কায় দেশটির এক হজযাত্রী নামাজ আদায় করছেন

বুর্কিনা ফাসো অর্থ- সৎমানুষের দেশ কিংবা নৈতিক জাতির দেশ। ১৯৮৪ সালের ৪ আগস্ট দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট থমাস সাঙকারা এই নামকরণ করেন। সেখানে বসবাসকারী দু’টি প্রধান আদিবাসীদের ভাষা থেকে একটি করে শব্দ নিয়ে দেশটির নামকরণ করেন। বুর্কিনা শব্দটি নেন মুরি ভাষা থেকে এবং ফাসো শব্দটি নেন দিওলি ভাষা থেকে। মুরিদের বুর্কিনা সততা আর দিওলাদের ফাসো অর্থ পিতৃভূমি। এভাবে বুর্কিনা ফাসো শব্দের অর্থ দাঁড়িয়েছে ল্যান্ড অব অনেস্ট পিউপিল বা সৎলোকদের আবাসভূমি।

বিজ্ঞাপন

উয়াগাদুগু দেশের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মুসলমান। মুসলিমের হার শতকরা ৮৫ ভাগ। ২ লাখ ৭৪ হাজার বর্গকিলোমিটারের দেশটিতে লোকসংখ্যা প্রায় ১৬.৭৫ মিলিয়ন।

বুর্কিনা একটি ল্যান্ডলক কান্ট্রি। যে সব দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় কোনো সাগর নেই, চারদিকে স্থলভূমিই হলো সীমানা প্রচীর, সেসব দেশকে বলে ল্যান্ডলক কান্ট্রি। পৃথিবীতে ৪৮টি ল্যান্ডলক দেশ আছে। আফগানিস্তান, ভুটান, নেপাল, তাজিকিস্তান, বলিভিয়া ও মালি প্রভৃতি দেশগুলো ল্যান্ডলক দেশ।

ববো ডিওলাসো গ্র্যান্ড মসজিদ
ববো ডিওলাসো গ্র্যান্ড মসজিদ

বুর্কিনা ফাসোর মুসলমানরা ধর্মেকর্মে বেশ সচেতন। দেশটির প্রচুর মানুষ হজপালনের সৌদি আরব আসেন। আফ্রিকার অন্যদেশের মানুষের তুলনায় তাদের খুব সহজে চেনা যায়। কারণ তাদের প্রায় সবাই নির্দিষ্ট রংয়ের পোশাক পরিধান করেন। ওই পোশাকে আরবিতে লেখা থাকে বুর্কিনা ফাসো। নারীদের লম্বা স্কার্ফেও এটা দেখা যায়।

ধর্মীয় বিশ্বাসের পাশাপাশি বুর্কিনা ফাসোর নারীরা মনে করেন, হেডস্কার্ফ তাদের অশুভ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করে। এটা দেশটির একটি ঐতিহ্যও বটে।

বানি গ্র্যান্ড মসজিদ
বানি গ্র্যান্ড মসজিদ

বুর্কিনা ফাসোর শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক স্তরে কোরআন শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো হয়। রোজা, নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতে তারা বেশ মনোযোগী। দেশটিতে আফ্রিকার নিজস্ব নির্মাণশৈলীতে নির্মিত কয়েকটি মসজিদ রয়েছে। স্থাপত্যের দিক থেকে অতিসাধারণ হলেও নির্মাণশৈলীর কারণে প্রকৃত অর্থে মনোমুগ্ধকর। মাটির তৈরি ইট আর কাঠ দ্বারা কাদার প্রলেপে নির্মিত এ ধরনের স্থাপনা সহজেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

ববো ডিওলাসো গ্র্যান্ড মসজিদ ও বানি গ্র্যান্ড মসজিদ এর অন্যতম। ববো ডিওলাসো গ্র্যান্ড মসজিদটি ১৮৮০ সালে মসজিদটি নির্মিত হয়। অন্যদিকে বুর্কিনো ফাসোর একটি মরু গ্রাম বানিতে গ্র্যান্ড মসজিদটি বুর্কিনো ফাসোর অন্যতম একটি আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য।