পিউ রিসার্চের গবেষণা
প্রতিবেশী হিসেবে আমেরিকানদের পছন্দ মুসলমানরা!
আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের নাগরিকদের মধ্যে মুসলিম এবং ইসলাম সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মতামত পরিলক্ষিত হয়েছে। এই দুই এলাকার বেশিরভাগ নাগরিকরা বলেছেন, তারা মুসলমানদের প্রতিবেশী হিসেবে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক এবং তাদের বেশিরভাগই পরিবারের সদস্য হিসেবে একজন মুসলমানকে মেনে নিতে প্রস্তুত।
অমুসলিম আমেরিকান এবং পশ্চিম ইউরোপীয়রা কীভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের দেখে তার ভিত্তিতে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টার মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
পিউ রিসার্চ কর্তৃক পরিচালিত গবেষণায় আটলান্টিকের উভয় পারের মানুষদের মতামত নেওয়া হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের ১৫টি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বলেছেন, মুসলিম প্রতিবেশী থাকা এমন একটি বিষয় যা তারা মেনে নিতে ইচ্ছুক। তবে কিছু দেশের বাসিন্দা মুসলিমদের প্রতি বিরুপ মনোভাবও প্রকাশ করেছে।
পশ্চিম ইউরোপ বনাম যুক্তরাষ্ট্র: পিউ রিসার্চের সাক্ষাৎকারে অমুসলিম আমেরিকানদের মধ্যে ৮৯ শতাংশ বলেছেন, তারা প্রতিবেশী হিসেবে মুসলিমদের গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। তাদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ বলেছেন, পরিবারে একজন মুসলমানকে স্বাগত জানাতে তাদের কোনো সমস্যা নেই।
এই পরিসংখ্যান সম্পর্কে অবাক করা বিষয়টি হলো, আমেরিকানরা পশ্চিম ইউরোপীয়দের চেয়ে মুসলমানদের গ্রহণে বেশি আগ্রহী।
প্রকৃতপক্ষে, মুসলমানদের নিয়ে পশ্চিম ইউরোপের লোকদের আলাদা ও বৈরী ধারণা রয়েছে। আমেরিকার তুলনায় সেখানে মুসলিম প্রতিবেশীদের গ্রহণ করতে ইচ্ছুকদের সংখ্যা কিছুটা কম। পরিবারেও মুসলমানদের গ্রহণ করতে ইচ্ছুকদের সংখ্যা সেখানে আরও কম।
উদাহরণস্বরূপ ফ্রান্সে, পিউর গবেষণায় উত্তরদাতাদের মধ্যে কেবল ৬৬ শতাংশ মুসলমানদের পরিবারের সদস্য হিসাবে গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যে এমন লোকেরা সংখ্যা আরও কম। সেখানে কেবলমাত্র ৫৩ শতাংশ ইতিবাচক মতামত দিয়েছেন। অস্ট্রিয়ানদের মধ্যে এই প্রবণতা ৫৪ শতাংশ, জার্মানদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ এবং ইতালীয়দের মধ্যে ৪৩ শতাংশ।
কিন্তু তার কেন মুসলমানদের তাদের পরিবারে তাদের থাকতে দিতে অস্বীকার করে? পিউ রিসার্চের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এর কারণও। আর সেটা হলো, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অমিল। প্রকৃতপক্ষে, পিউ রিসার্চ লক্ষ্য করেছে, আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের মতো উভয় জায়গাতেই মুসলমানদের গ্রহণযোগ্যতা উচ্চশিক্ষিত লোকদের মধ্যে বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকায় যারা কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়নি এমন নাগরিকদের তুলনায় কলেজ ডিগ্রি প্রাপ্তরা মুসলমানদের পরিবারের সদস্য হিসেবে গ্রহণ করতে বেশি আগ্রহী। কলেজে ডিগ্রি প্রাপ্তদের মধ্যে শতকরা ৭৫ শতাংশ মুসলমানদের মেনে নিতে আগ্রহী। পশ্চিম ইউরোপে মোটামুটি একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সেখানেও তুলনামূলকভাবে কলেজের ডিগ্রি প্রাপ্ত বেশিরভাগ লোকই তাদের পরিবারে একজন মুসলমানকে গ্রহণ করতে রাজি। জার্মানি উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ ও অল্প শিক্ষিতদের মধ্যে ৫২ শতাংশ মুসলমানদের গ্রহণ করতে আগ্রহী। বৃটেন এবং অস্ট্রিয়া এই পরিসংখ্যান যথাক্রমে ৭১ ও ৪৪ শতাংশ এবং ৬৭ ও ৫১ শতাংশ।
পিউ রিসার্চ এই মতভেদের রাজনীতি জনসংখ্যার ভিত্তিতে ব্যাখা করার চেষ্টা করেছে। রাজনীতির ভিত্তিতে পিউ রিসার্চের গবেষণায় দেখা গেছে, পশ্চিম ইউরোপে যারা ইউরোপীয় রাজনীতির ডানপন্থা অনুসরণ করেন তারা বামপন্থীদের তুলনায় মুসলমানদের গ্রহণ করতে কম আগ্রহী। একই বিষয় আমেরিকাতেও আসে। সেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টিকে যারা সমর্থন করেন তাদের ৮৮ শতাংশ পরিবারের সদস্য হিসেবে মুসলমানদের মেনে নিতে প্রস্তুত। কিন্তু রিপাবলিকানদের মধ্যে এই সংখ্যা মাত্র ৬৭ শতাংশ।
আবার নিজেদের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে তুলনা করে তারা কীভাবে ইসলামকে দেখেছে তার সঙ্গেও এই মতভেদ সম্পর্কিত হতে পারে। যদিও আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের বেশিরভাগ মানুষই মুসলমানদের গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, কিন্তু তারা ইসলাম সম্পর্কে মিশ্র অনুভূতি রাখে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইসলাম ধর্মকে পাশ্চাত্যের মতো জীবনধারা ও মূল্যবোধের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হিসেবে দেখেন না। প্রকৃতপক্ষে, প্রায় অর্ধেক আমেরিকান বলেছেন, ইসলাম মূলধারার আমেরিকান সমাজের অংশ নয়, তাদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ বলেছেন, ধর্মটি তাদের গণতন্ত্রের সঙ্গে বেমানান। একইভাবে জার্মানি এবং বৃটেনসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশেও প্রায় অর্ধেক জনগণই এমন ধারণা পোষণ করেন।