কথা কম বলা ও কম হাসা মুমিনের গুণ

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কথা কম বলা ও কম হাসা মুমিনের গুণ, প্রতীকী ছবি

কথা কম বলা ও কম হাসা মুমিনের গুণ, প্রতীকী ছবি

সত্যিকারের মুমিনের পরিচয় হলো, সে কথা কম বলবে ও কম হাসবে। বেশি বেশি আমল করবে ও কাঁদবে আল্লাহর দরবারে। বেশি কথা বলা, অপ্রয়োজনীয়-অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা করা, নিরর্থক হাসি মানুষের ব্যক্তিত্বকে খাটো করে দেয়।

কথা কম বলার অনেক উপকারিতার একটি হলো, এতে মানুষ পাপ মুক্ত থাকে। কেননা বেশিরভাগ পাপ হয় বান্দার মুখ ও লজ্জাস্থান থেকে।

বিজ্ঞাপন

আরেক হাদিসে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ওই ব্যক্তি প্রকৃত মুমিন নয়, যে উপহাস করে, মানুষকে অভিশাপ দেয়, অশ্লীল কথা বলে এবং যে বাচাল। -তিরমিজি

এভাবে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদিসে অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে নিষেধ করেছেন নানা সময়ে নানা প্রসঙ্গে। এখানে এ সম্পর্কে কিছু হাদিস উল্লেখ করা হলো-

বিজ্ঞাপন

এক. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস স্থাপন করে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়, মেহমানের সম্মান করে এবং কথা বলার সময় উত্তম কথা বলে অথবা চুপ করে থাকে। -সহিহ বোখারি: ৬০১৮

দুই. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুনাফিক চেনার লক্ষণ হলো- চারটি। সেগুলো হলো- ক. যে কথায় কথায় মিথ্যা কথা বলে, খ. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, গ. তার কাছে কোনো জিনিস আমানত রাখলে খেয়ানত করে এবং ঘ. ঝগড়া-বিবাদে অশ্লীল গালিগালাজপূর্ণ শব্দ বলে। -সহিহ বোখারি: ৩৪

তিন. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, কোনো মানুষকে গালি দেওয়া ফাসিকি। -সহিহ বোখারি: ৪৮

চার. হজরত হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, চোগলখোর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না। -সহিহ বোখারি: ৬০৫৬

পাঁচ. হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না, পরস্পর হিংসা করো না, পরস্পর বিরুদ্ধাচরণ করো না। -সহিহ বোখারি: ৬০৬৫

ছয়. হজরত উম্মে কুলসুম (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি আল্লাহর রাসুল (সা.) কে বলতে শুনেছেন, সে ব্যক্তি মিথ্যাচারী নয়, যে মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য উত্তম কথা পৌঁছে দেয় অথবা সুন্দর কথা বলে। -সহিহ বোখারি: ২৬৯২

সাত. হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার জিহবা (ভাষা) এবং লজ্জাস্থানের জামানত আমাকে দেবে আমি তার জন্য জান্নাতের জামিনদার হবো। -সহিহ বোখারি: ৬৪৭৪

আট. হজরত সুফিয়ান বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর নবী (সা.) কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার দৃষ্টিতে আমার জন্য সবচেয়ে আশঙ্কাজনক বস্তু কোনটি? তিনি তার জিহবা ধরে বললেন, এই যে এটি। -ইবনে মাজা: ৩৯৭২

অতএব আসুন, কথার বাণে মানুষকে শরাহত না করে, কথার কাঁটায় মানবহৃদয় ক্ষত-বিক্ষত না করে, কথার বিষে অপরের অন্তর জর্জরিত না করে, কথার ঘায়ে অন্যের শরীরে ভীমরুলের বিষাক্ত সুঁচালো হুল না ফুটিয়ে ভালোবাসার সুবাস ছড়িয়ে, স্নেহের পরশ বুলিয়ে, ভক্তির ফুল ফুটিয়ে কাঁচের মতো অতিমাত্রায় সংবেদনশীল মানুষের ভগ্ন হৃদয় জোড়া লাগানোর কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখি সর্বক্ষণ। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।