বাড়িকে মাদরাসা দেখিয়ে ইফা ডিজির অর্থ আত্মসাৎ

  • মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইফা ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল, ছবি: সংগৃহীত

ইফা ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল, ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর জোনের চাঁদ উদ্যান দারুল আরকাম ইবতেদায়ী মাদরাসার অস্তিত্ব না থাকা সত্ত্বেও ২ জন শিক্ষকের বেতন-বোনাস বাবদ ৪৫ হাজার ২শ’ টাকা অনিয়মিতভাবে পরিশোধ করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) আওতাধীন মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের ২০০৯-২০১৮ আর্থিক সালের বিশেষ নিরীক্ষাকালে দারুল আরকাম মাদরাসার নথি ও রেকর্ডপত্র এবং বিল-ভাউচার যাচাইয়ে এ অনিয়ম ধরা পড়ে।

নিরীক্ষার সময় সরেজমিনে পরিদর্শনকালে মাদরাসায় কোনো ছাত্র-ছাত্রী পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, চাঁদ উদ্যান হাউজিংয়ের ১৩ নম্বর প্লটটি আসলে কোনো মাদরাসা নয়, এটি ইফার বর্তমান মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালের বাড়ি। আর এই বাড়িটিকে মাদরাসা দেখিয়ে মো. শাহাদাত ও মো. আলী নামের দু’জন শিক্ষককে বেতন-বোনাস দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিষ্ঠানটির এমন অনেক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের বিষয় উঠে এসেছে সিভিল অডিট অধিদফতরের এক রিপোর্টে। সরকারি এই সংস্থার বর্তমান ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজালের মেয়াদকাল ২০০৯-১৮ পর্যন্ত ১০ বছরের বিশেষ নিরীক্ষা পরিচালনা করে সুনির্দিষ্ট ৯৬টি খাতে সর্বমোট ৭৯৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকার অনিয়মের বিষয় উদঘাটন করেছে।

নিরীক্ষার প্রাথমিক প্রতিবেদনে ইফার ১৩৪টি খাতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগের ব্যাপারে ইফার জবাব চাওয়া হয়। এরপর ইফা ডিজির পক্ষ থেকে কয়েক দফায় প্রায় ৮২ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেওয়াসহ জবাব দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

সিভিল অডিট অধিদফতরের উপ-পরিচালক এম এম নিয়ামুল পারভেজের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল এ নিরীক্ষা পরিচালনা করে। এতে ইফার ১২টি কার্যালয়ের ২০০৯-১৮ সালের বরাদ্দ ও ব্যয় খতিয়ে দেখা হয়।

গত ৯ জুলাই থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত পরিচালিত এ নিরীক্ষার খসড়া রিপোর্টটি ২৪ নভেম্বর ধর্ম মন্ত্রণালয়ে এগ্রিড মিটিংয়ের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও অডিট সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বার্তা২৪.কমকে।

অডিট দলের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ইফার বিরুদ্ধে আনিত কোনো অভিযোগের সন্তোষজনক জবাব পাওয়া যায়নি। তবে ফেরত দেওয়া অর্থ সমন্বয় করা হয়েছে। আরও কিছু ফেরত পেলে তাও সমন্বয় করা হবে। বিশেষ নিরীক্ষার খসড়া রিপোর্টটিই চূড়ান্ত হয়েছে। তাতে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন করে চূড়ান্ত রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। রিপোর্টে অনিয়মের পুরো টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত প্রদান এবং অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।’

নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা বলার জন্য বারবার চেষ্টা করেও ইফা ডিজির সঙ্গে কথা বলা যায়নি। এর আগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এগুলো ষড়যন্ত্র। জামায়াত-বিএনপির চক্রান্ত। তাহলে আপনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু বলছেন না কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে ডিজি বলেন, আমি রাষ্ট্রের চাকরি করি। আমি জবাব দেবো রাষ্ট্রের কাছে। এ ছাড়া কারও কাছে কিছু বলতে আমি বাধ্য নই।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সরকারের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান ইসলামের আদর্শ ও মূল্যবোধ প্রচার করে এবং সে সম্পর্কিত কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইসলামের শাশ্বত শিক্ষা বাংলাদেশের মুসলমানের মনে চিরজাগরূক রাখার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন নানা যুগান্তকারী কাজ ও কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দুর্নীতির যে খবর গণমাধ্যমসমূহে প্রকাশিত হয়েছে তা রীতিমত আঁতকে উঠার মতো। ইফার বেপরোয়া দুর্নীতি নিয়ে যখন সারাদেশেই আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

ইসলামি মূল্যবোধভিত্তিক এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটিতে পবিত্র কোরআন ও অন্যান্য ধর্মীয় বই ছাপানোর নামে কোটি কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। সেই সঙ্গে গণশিক্ষা প্রকল্পের আরবি শিক্ষাবিষয়ক টিচার্স গাইড, অনুশীলন ও ড্রয়িং খাতা মুদ্রণ, সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে ইসলাম শীর্ষক কর্মসূচির পুস্তক মুদ্রণ ও বাঁধাই, নিয়ম বহির্ভূতভাবে রয়্যালিটি গ্রহণ, নিয়োগ ও পদোন্নতি, প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ ফেরত না দেওয়া, কেনাকাটায় অনিয়ম, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষায় অনিয়ম, দারুল আরকাম ইবতেদায়ি মাদরাসার জন্য শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, বোগদাদিয়া কায়দা ছাপাতে অনিয়ম, রাতের বেলায় নিজের রুমে খাতায় লিখিয়ে আত্মীয়-স্বজনকে নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করানো, জাল সনদপত্রে চাকরি দেওয়াসহ ৯৬টি খাতে অনিয়ম চিহ্নিত করে বিশেষ নিরীক্ষা দল।

প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারিক কর্মকর্তা সামীম মোহাম্মদ আফজাল ২০০৯ সাল থেকে ইফা ডিজির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নিয়মিত চাকরি শেষে ২ দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি। আগামী ৩১ ডিসেম্বর তার সর্বশেষ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবে।