সুদ ও মুনাফা এক জিনিস নয়



মুফতি সাদেক হোসাইন, অতিথি লেখক, ইসলাম
আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন, সূরা আল বাকারা

আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন, সূরা আল বাকারা

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন।’ -সূরা আল বাকারা: ২৭৫

আল্লাহতায়ালা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হিসেবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের রিজিকের ব্যবস্থাও করেছেন। এজন্য তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যকে হালাল ঘোষণা করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। সুদ ও মুনাফা দু’টি আলাদা বিষয়। যার একটি শরিয়তসম্মত আর অপরটি হারাম।

সুদের সংজ্ঞা
সুদের আরবি প্রতিশব্দ হলো- আর রিবা। আভিধানিক অর্থ- বৃদ্ধি, অতিরিক্ত, প্রবৃদ্ধি, বিকাশ ইত্যাদি। বাংলা পরিভাষায় ব্যবহৃত সুদ শব্দটি মূলতঃ ফার্সি ও উর্দু ভাষা থেকে আগত। ইংরেজিতে বলা হয়- Interest, profit, usary.

ইসলামি শরিয়তে রিবা বলতে বুঝায়, যা ঋণের শর্ত হিসেবে মেয়াদ শেষে ঋণগ্রহীতা মূল অর্থসহ অতিরিক্ত অর্থ ঋণদাতাকে পরিশোধ করতে বাধ্য হয়।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ঋণ কোনো মুনাফা টানে তাই সুদ।

সুদ ও মুনাফার পার্থক্য
অনেকেই বলেন, সুদ ও মুনাফা একই জিনিস। কিন্তু আসলে তা নয়। সুদ ও মুনাফার পার্থক্যগুলো হলো-

এক. লেনদেনের ক্ষেত্রে ঋণের অতিরিক্ত গ্রহণ করলে তা সুদ। অপরদিকে ব্যবসায় মূলধন খাটানোর মাধ্যমে মূলধনের অতিরিক্ত আয় হলো- মুনাফা।

দুই. সুদের উপাদান সময়, সুদের হার ও ঋণের পরিমাণ। মুনাফা নির্ভর করে ব্যয় সাশ্রয় ও অনুকূল বাজার চাহিদার ওপর।

তিন. সুদের উৎপত্তি ঋণ থেকে। মুনাফার উৎপত্তি ব্যবসার মূলধন বিনিয়োগ থেকে।

চার. সুদে ঋণদাতা ঝুঁকি বহন করে না। কিন্তু মুনাফায় ক্ষতির ঝুঁকি থাকে।

পাঁচ. সুদের ফলাফল ঋণদাতা একা ভোগ করে। অপরদিকে মুনাফা যোগানদার ও ব্যবহারকারী উভয়ই ব্যবহার করে।

ছয়. সুদ পূর্ব নির্ধারিত। অপরদিকে মুনাফা অর্জিত হয় পরে।

সুদের প্রকারভেদ
ইসলামি অর্থনীতিতে সুদকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়।
১. রিবা আন নাসিয়াহ ও
২. রিবা আল ফজল।

রিবা আন নাসিয়া বা মেয়াদি সুদ
এটা হলো- প্রকৃত সুদ বা প্রাথমিক সুদ। কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে এ ধরনের সুদকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রিবা আন নাসিয়ার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যে ঋণ পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট মেয়াদ দেওয়া থাকে এবং মূলধনের অতিরিক্ত প্রদানের শর্ত থাকে, সেটাই রিবা আন নাসিয়াহ।

রিবা আল ফজল
রিবা আল ফজল। এ প্রকারের সুদ হারাম হওয়ার বিষয়টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। পণ্য সামগ্রী হাতে হাতে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে রিবা আল ফজলের উদ্ভব। এক জাতীয় পণ্যের কম পরিমাণের সঙ্গে বেশি পরিমাণ পণ্য হাতে হাতে বিনিময় করা হলে পণ্যটির অতিরিক্ত পরিমাণকে বলা হয় রিবা আল ফজল।

সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি হতে বর্ণিত, একদা হজরত বিলাল (রা.) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট কিছু উন্নতমানের খেজুর নিয়ে হাজির হলো। হজরত রাসূলুল্লা (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথা থেকে এ খেজুর পেলে? হজরত বিলাল (রা.) বললেন, আমাদের খেজুর নিকৃষ্টমানের ছিলো। আমি তা দু’সা এর বিনিময়ে এক ‘সা’ বারমি খেজুর বদলিয়ে নিয়েছি। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ওহ! এতো নির্ভেজাল সুদ, এতো নির্ভেজাল সুদ, এতো নির্ভেজাল সুদ। কখনও এরূপ করো না। তোমরা যদি উত্তম খেজুর পেতে চাও নিজেরগুলো বাজারে বিক্রি করবে তারপর উন্নতমানের খেজুর কিনবে।

অনেক ইসলামি স্কলারের মতে, শুধুমাত্র হাদিসে বর্ণিত ৬টি পণ্যের ব্যাপারে রিবা আল ফজলের সীমা নির্ধারিত। কিন্তু অধিকাংশ ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞ মনে করেন, হাদিসে উল্লেখিত পণ্য ব্যতিত অন্য যেকোনো পণ্য বদলের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য।

আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন, সূরা আল বাকারা

কোরআনে কারিমে সুদ প্রসঙ্গ
ইসলামে সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে অসংখ্য রেওয়ায়েত বিদ্যমান। কোরআনে কারিমে সুদ সম্পর্কিত ১৫টি আয়াত রয়েছে। তন্মধ্যে ৭টি আয়াতে সরাসরি সুদকে হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। সুদ সম্পর্কিত ১ম আয়াত নাজিল হয় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মক্কি জীবনে ৬১৫ খ্রিস্টাব্দে।

হাদিসে সুদ প্রসঙ্গ
হাদিসে অনেকবার, নানা প্রসঙ্গে সুদ হারাম হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ওই সব হাদিসে সুদের ভয়াবহতা উল্লেখ করা হয়েছে। এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, যারা সুদ খায়, সুদ দেয়, সুদের হিসাব লিখে এবং সুদের সাক্ষ্য দেয়- হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের ওপর লানত (অভিশাপ) করেছেন এবং তারা অপরাধের ক্ষেত্রে সবাই সমান। হাদিসে আরও বলা হয়েছে, সুদ দ্বারা সম্পদ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন, তার শেষ পরিণতি নি:স্বতা।

বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং প্রসঙ্গ
বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং নিয়ে নানা ধরনের ভুল ধারণা বিদ্যমান। অনেকে বলেন, সুদ ও মুনাফা শুধু শব্দের পার্থক্য; জিনিস আসলে একই। এ কথা যথার্থ নয়। ইসলামি ব্যাংকের বিনিয়োগপদ্ধতি প্রধানত তিনটি মূলনীতির ভিত্তিতে হয়।

এগুলো হলো- ক্রয়-বিক্রয় নীতি, অংশীদারিত্বের নীতি এবং ভাড়াদান নীতি। ক্রয়-বিক্রয় নীতির আওতায় বাকি বিক্রি (বাই মুয়াজ্জাল), মুনাফার ভিত্তিতে বিক্রি (বাই মুরাবাহা), অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় (বাই সালাম ও বাই ইস্তিসনা) ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

এই নীতির মূল কথা হলো, গ্রাহকের পক্ষে তার প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করে ক্রয়মূল্যের সঙ্গে আনুষঙ্গিক খরচ, সেইসঙ্গে যুক্তিসঙ্গত এবং ব্যাংক ও গ্রাহকের সম্মতির ভিত্তিতে নির্ধারিত মুনাফা যোগ করে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে তা গ্রাহকের কাছে বিক্রয় করা হয়। একজন খুচরা ব্যবসায়ী যখন কোনো পণ্য পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকে বাকিতে ক্রয় করে, তখন টাকা পরিশোধের একটা সময় নির্ধারণ করে দেয়। পরে খুচরা ব্যবসায়ী ওই পণ্য বিক্রি করে যদি ক্ষতির সম্মুখীন হন, তাহলে পাইকারি বিক্রেতা ওই ক্ষতির অংশ নিতে মোটেও বাধ্য নন।

কারণ এখানে পণ্য ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে, লাভ-ক্ষতির অংশ নেওয়ার কোনো চুক্তি সম্পাদিত হয়নি এবং ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের মধ্যে দেনাদার ও পাওনাদারের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেহেতু ব্যাংক এখানে ক্রয়-বিক্রয় নীতি মেনে গ্রাহকের সঙ্গে পণ্য কেনাবেচা করে, তাই তা মোটেও শরিয়ত পরিপন্থী হতে পারে না।

ভাড়া বা ইজারা পদ্ধতিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও সম্পদের ভাড়া হিসেবে ব্যাংক মুনাফা নিয়ে থাকে বিধায় তা শরিয়ত পরিপন্থী নয়। শুধু অংশীদারিত্বের নীতিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লাভ-ক্ষতি বণ্টন হয়ে থাকে; কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসলামি ব্যাংকগুলো মুশারাকা বা মুদারাবা ব্যবসায়ে এখনও বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে শুরু করেনি বলা যায়।

আরেকটি কথা, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইতোমধ্যে ইসলামি ব্যাংকিং গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়েছে এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘কোনো ব্যাংক কোম্পানি, উহাকে প্রদত্ত বা উহা কর্তৃক রক্ষিত জামানত আদায়ের ক্ষেত্র ছাড়া, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো পণ্যের ক্রয়, বিক্রয় বা বিনিময় ব্যবসা করিবে না, অথবা আদায় বা কারবারের জন্য প্রাপ্ত বিনিময় বিলসংক্রান্ত কারণ ব্যতীত, অন্যের জন্য কোনো ব্যবসায় বা কোনো পণ্য ক্রয়, বিক্রয় বা বিনিময়ে লিপ্ত হইতে পারিবে না, তবে শর্ত থাকে যে, ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংক কোম্পানি কর্তৃক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বীকৃত ইসলামিপদ্ধতি অনুসরণপূর্বক মালামাল বা পণ্য ক্রয়, বিক্রয় বা বিনিময়ের ক্ষেত্রে এই ধারার কোনো কিছুই প্রযোজ্য হইবে না।‘’ অর্থাৎ বর্তমান ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে আইনের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

১৯৭৪ সালে ইসলামি সম্মেলন সংস্থাভুক্ত দেশগুলো শরিয়া ভিত্তিক ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সনদ স্বাক্ষর করেছিল এবং ওই সনদের ভিত্তিতে ১৯৭৫ সালে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক যাত্রা শুরু করে। ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন দেশে ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং ধারার প্রচলন শুরু হয় এবং দেশে বর্তমানে আটটি ব্যাংক পূর্ণাঙ্গরূপে এবং বেশকিছু ব্যাংক আংশকিভাবে ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

   

যে গ্রামে জাকাত-ফেতরা নেওয়ার কেউ নেই



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গ্রামের মানুষের মাঝে ছাগল বিতরণ করা হচ্ছে, ছবি : সংগৃহীত

গ্রামের মানুষের মাঝে ছাগল বিতরণ করা হচ্ছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্মিলিত ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগে বদলে গেছে প্রত্যন্ত একটি গ্রামের চিত্র। গ্রামটির সকল পরিবার হয়েছে সচ্ছল। ওই গ্রামে এখন আর ফেতরা কিংবা জাকাত নেওয়ার মানুষ নেই। সবাই স্বাবলম্বী।

কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের চাঁদের হাসি গ্রাম। এই চাঁদের হাসি গ্রামের দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের এমন উদ্যোগের ফলে বদলে গেছে গ্রামের দৃশ্যপট।

সংগঠনটি নিজ গ্রামের গন্ডি পেরিয়ে এখন পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষদের স্বাবলম্বী করতে উদ্যোগ নিয়েছে। এমন প্রশংসনীয় কাজ করা সংগঠনটির নেই নিবন্ধন, নেই বাহারি অফিস। তারা প্রচারে নয়, কাজে বিশ্বাসী। যার প্রমাণ, ফাউন্ডেশনের জনকল্যাণমূলক নানা কাজ।

জানা গেছে, ২০০৩ সালে চাঁদের হাসি গ্রামের প্রয়াত মাওলানা হেলান উদ্দিনের প্রচেষ্টায় দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে গ্রামে সকল পরিবারের ফেতরা ও জাকাত একসঙ্গে করে অসহায়-গরীব মানুষের মাঝে বিতরণ করে আসছে। এভাবে দীর্ঘ ২১ বছরে এই কার্যক্রমের ফলে চাঁদের হাসি গ্রামে এখন আর ফেতরা ও জাকাত নেওয়া মতো মানুষ নেই। ইতোমধ্যে সংগঠনটি গ্রামের ৮০ জন অসহায় গরীব মানুষকে ঘর তৈরি করে দিয়েছে।

২ বছর আগে চাঁদের হাসি গ্রামের দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের সহায়তা ঘর পেয়েছেন ওহেদ আলী। তিনি জানান, ঘর পেয়ে মাথা গুজার ঠাঁই হয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই চলছে তার সংসার।

মাহমুদ বেগম নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী জানান, তার পরিবার দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের সহায়তা ঘর ও সেলাই মেশিন পেয়েছেন। তার বাবা নেই মা ও ছোট বোনকে নিয়ে ঘরে বসবাস করছেন। সেলাই মেশিনের মাধ্যমে মানুষের জামা কাপড় সেলাই করে নিজেও স্বাবলম্বী হয়েছেন।

চাঁদের হাসি দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ আলম জানান, ২০০৩ সালে আমাদের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এলাকার চলনশীল মানুষের ফেতরা ও জাকাত একসঙ্গে করে আমরা কাজ করে থাকি। এভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করার পর থেকে ইসলামের বিধি মোতাবেক যে ৮টি খাত রয়েছে সে হিসাবে বর্তমানে আমাদের গ্রামে জাকাত-ফেতরা নেওয়ার মতো কোনো মানুষ নেই।

সংগঠনটি গ্রামের অসহায় ও গরীব মানুষকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহায়তাও দিয়ে আসছে। গ্রামের বেকারত্ব ঘোচাতে অসহায় ও গরীব মানুষের মাঝে গরু, ছাগল, সেলাই মেশিন, অটোরিকশা ও ভ্যান গাড়ি বিতরণ করেছে।

;

রাজধানীতে শীতল পানি বিতরণ করল ইসলামী ছাত্র আন্দোলন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
দেশব্যাপী শীতল পানি ও শরবত বিতরণ কর্মসূচী পালন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের, ছবি : সংগৃহীত

দেশব্যাপী শীতল পানি ও শরবত বিতরণ কর্মসূচী পালন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র তাপদাহে সৃষ্ট সংকটে দেশব্যাপী শীতল পানি ও শরবত বিতরণ কর্মসূচী পালন করছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ।

বিভিন্ন জেলা, থানা, ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভ্রাম্যমাণ ভ্যান নিয়ে পথচারী, দিনমজুর, রিকশাচালকসহ তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে ঠান্ডা পানি বিতরণ করেছে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। এছাড়া খাবার স্যালাইন ও পকেট রুমাল বিতরণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬৬ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডে শ্রমজীবী ও পথচারীদের মাঝে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর পূর্বের ডেমরা থানা শাখার উদ্যোগে বিশুদ্ধ শীতল পানি, স্যালাইন ও ওয়ালেট টিস্যু বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হয়।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখার সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ মাইনুল ইসলাম, ডেমরা থানা শাখার সভাপতি শাহাদাত হোসেন মৃধা, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাফিইন বিন আমজাদ, কফিল উদ্দিনসহ থানা ও ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দ।

এ সময় প্রধান অতিথি শেখ মুহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাধার ভরাট ও অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলেই অসহনীয় তাপদাহে নগরে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। সাময়িক স্বস্তির জন্য আমরা শীতল পানির বিতরণ কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানের জন্য নগরকে সবুজায়ন ও বসবাসের উপযোগী করতে রাষ্ট্রকেই যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।

নগর সহ-সভাপতি মাইনুল ইসলাম বলেন, যতদিন তীব্র তাপদাহ থাকবে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর পূর্বের উদ্যোগে নগরজুড়ে বিশুদ্ধ শীতল পানি বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

;

দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতা প্রকাশ পেয়েছে যে আয়াতে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন মাজিদ, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন মাজিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাসজুড়ে দেখা গেছে, মানুষ সবসময়ই তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কারণ মানুষ প্রকৃতিগতভাবে অভাব নিয়েই দুনিয়ায় এসেছে। দুইভাবে মানুষ বিপদগ্রস্ত হচ্ছে কিংবা বিপদে পড়ছে। এক. মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ঠিকমতো চিহ্নিত না করা। দুই. ভুল পথে চাহিদা মেটানোর প্রবণতা।

এই দুই বিপদজনক পথ সঠিকভাবে অতিক্রমের জন্যই আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসুলদেরকে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী নবীরা মানুষকে শিক্ষা দিতেন। যেমন কোরআনের বক্তব্য যদি মানুষ বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী আমল করে তাহলে তার শক্তিসামর্থ্য যেমন বাড়বে তেমনি পরিত্রাণ পাবে এবং যেকোনো বিপদ বা ভুল পথে পরিচালিত হওয়া থেকে নাজাত পাবে।

কোরআন মাজিদের সুরা হাদিদের ২০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা জেনে রাখো যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র।

এর উপমা হলো- বৃষ্টির মতো, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদের আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখেরাতে আছে কঠিন আজাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’

বর্ণিত আয়াতটি আমাদের কাছে জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরেছে এভাবে-
ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া মোটেই ভরসা করার যোগ্য নয়। পার্থিব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা কিছু হয় এবং যাতে দুনিয়াদার ব্যক্তি মগ্ন ও আনন্দিত থাকে, প্রথমে সেগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে পার্থিব জীবনের মোটামুটি বিষয়গুলো যথাক্রমে এই- প্রথমে ক্রীড়া, এরপর কৌতুক, এরপর সাজ-সজ্জা, এরপর পারস্পরিক অহমিকা, এরপর ধন ও জনের প্রাচুর্য নিয়ে পারস্পরিক গর্ববোধ।

উল্লেখিত ধারাবাহিকতায় প্রতিটি অর্থেই মানুষ নিজ অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু কোরআন মাজিদ বলে যে, এ সবই হচ্ছে সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী।

প্রকৃতপক্ষে, কোরআন মাজিদের এই আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘মানুষ যখন শিশু থাকে তখন সে খেলা করে, সে তার যৌবনকে উদ্দেশ্যহীনভাবে অতিবাহিত করে, তার যৌবনে সে পৃথিবীর সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যে মগ্ন থাকে এবং তার মধ্য বয়সে ও বার্ধক্যে সে অহংকার এবং সম্পদ ও সন্তানদের নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়!’

তাই পৃথিবীটা একটা খেলা। এমতাবস্থায় খেয়াল রাখা, কোনোভাবেই ধোঁকায় না পড়া। আমরা যদি কোনো উচ্চ অবস্থানে পৌঁছি তাহলে অহংকারী না হওয়া, যদি পতন ঘটে কিংবা অবস্থা নীচের দিকে চলে যায়- তাহলেও নিরাশ না হওয়া।

আয়াতে বর্ণিত পাঁচটি বিশেষ শব্দ দিয়ে মানবজাতির জন্য তাদের বাস্তবতাকে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে এর প্রতিটিই হচ্ছে একেকটি ফাঁদ এবং মানুষ এসবে জড়িয়ে পড়ে।

;

৯ বছর পর উমরার সুযোগ পেলেন ইরানিরা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ ৯ বছরের বিরতির পর পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরানের নাগরিকরা পবিত্র উমরা পালনের জন্য তেহরান থেকে পবিত্র মক্কা নগরীর উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। সোমবার (২২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল সোমবার পবিত্র উমরা পালনের জন্য সৌদি আরবের উদ্দেশে যাত্রা করেছে বলে ইরানের সরকারি বার্তাসংস্থা জানিয়েছে। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে।

এর আগে দীর্ঘদিন দূরে থাকার পর গত বছরের মার্চ মাসে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয় মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান ও সৌদি আরব। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের মধ্যে আবারও সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়। আর উভয় দেশের সম্পর্কের অগ্রগতির পেছনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিল চীন।

২০১৬ সাল থেকে থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই বড় দেশের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। ওই বছর সৌদি আরব সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের দায়ে শিয়া ধর্মীয় নেতা শেখ নিমর আল নিমরসহ ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা হয়েছিল। আর তারপর দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটে।

মূলত ইরানি বিক্ষোভকারীরা তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলার পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারপর থেকে সুন্নি এবং শিয়া-নেতৃত্বাধীন এই প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা প্রায়ই জারি ছিল। এই দুই দেশ একে অপরকে নিজের আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে থাকে।

এ ছাড়া সিরিয়া এবং ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংঘাতে ইরান ও সৌদি একে অপরের বিরোধী পক্ষ হয়ে কার্যত পরোক্ষ লড়াইয়ে নিয়োজিত ছিল। আর তাই সুন্নি-সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরব এবং শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরানের মধ্যে উত্তেজনা ছিল প্রায়ই অনেক বেশি।

গত বছর সম্পর্ক পুনরায় শুরু হওয়ার আগে ইরানিরা শুধুমাত্র হজপালন করতে সৌদি আরব যেতে পারত।

রয়টার্স বলছে, তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে ৮৫ জন উমরাযাত্রীর বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইরানে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ বিন সৌদ আল আনজি।

;