হজপালনে লন্ডন থেকে হেঁটে মক্কার পথে ক্যান্সার আক্রান্ত ফরিদ
ফরিদ ফাইদি। চল্লিশ বছর বয়সী এক ব্রিটিশ মুসলিম। ‘শান্তির জন্য হাঁটা’ স্লোগান নিয়ে মুসলিম তরুণ ও যুবসমাজকে অনুপ্রাণিত করার লক্ষে পায়ে হেঁটে ইংল্যান্ড থেকে মক্কার পথে রওয়ানা দিয়েছেন। উদ্দেশ্য ২০২০ সালে হজপালন (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ৩১ জুলাই পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে)।
বিশ্বব্যাপী যত ক্যান্সার রোগী আছে তাদের জন্য তার এ ভ্রমণ অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে মনে করেন তিনি। কেননা ফরিদ নিজে কিডনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। একটি কিডনি দিয়ে চলছে তার জীবন।
২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর যাত্রা শুরু করেন ফরিদ। শুরুতে ইচ্ছা ছিল দীর্ঘ এ পথ সাইকেলে পাড়ি দেবেন। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পায়ে হেঁটে রওয়ানা দেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার (২৪৮৫ মাইল) পথ পাড়ি দিয়ে র্তমানে তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থান করছেন। চলতি বছরের জুলাই মাস নাগাদ পবিত্র ভূমি মক্কায় পৌঁছার পরিকল্পনা রয়েছে তার। তাকে আরও ২ হাজার ৭শ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে।
ফরিদ ফাইদি প্রতিদিন প্রায় ৬০ কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেঁটে পাড়ি দেন। এ পথ পাড়ি দেওয়াকে মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ মনে করেন ফাইদি। যাত্রাপথে তিনি প্রচণ্ড বৃষ্টি, তুষার ও ঠাণ্ডা পানি অতিক্রম করে মক্কার উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছেন।
তুরস্কের জনপ্রিয় পত্রিকা ডেইলি সাবাহ তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে ফাইদি বলেন, ‘মুসলিম উম্মাহর অনেক বড় আশা এবং আকাঙ্খাগুলোর অন্যতম হলো- পবিত্র হজপালন। আমি অসুস্থ হয়েও হজপালনের ইচ্ছা করেছি। আমি রীতিমতো উদগ্রীব হয়ে আছি মক্কায় পৌঁছতে। আমি চাই বিশ্বব্যাপী ইসলামের শিক্ষা শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে। একজন মুসলমান হিসেবে আমি মনে করি, প্রত্যেক মুসলিম এক একজন রাষ্ট্রদূত। মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করা সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমি সেটাই পালন করার চেষ্টা করছি মাত্র।’
ফাইদি মনে করেন, তার প্রচেষ্টা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। শান্তির বার্তা নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী, কিংবা শান্তির বার্তা যারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চান তাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে কাজ করার আশা পোষণ করেন ফরিদ।
শুধু এই মৌসুমে নয়, ভবিষ্যতেও তিনি পায়ে হেঁটে মক্কা ভ্রমণের ইচ্ছা রয়েছে তারা। তার ভাষায়, ‘আমার এক স্প্যানিশ বন্ধু আছে। সে বছর দুই আগে প্যারিস থেকে পায়ে হেঁটে পবিত্র নগরী মক্কায় গিয়েছিল। তাদের আরেকজন চাইনিজ বন্ধু রয়েছে, সে প্যারিসে বড় হয়েছেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তারা আগামী বছর একত্রে পবিত্র মক্কা নগরী ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছে। হতে পারে তা পায়ে হেঁটে কিংবা বাইসাইকেলে। আমিও ওই দলে থাকছি- ইনশাআল্লাহ।’
ফাইদি মনে করেন, অনেকেই তো প্লেনে কিংবা জাহাজে মক্কা যান। কিন্তু বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের তরুণদের পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেলে মক্কা ভ্রমণ করা উচিৎ। এর ফলে যাত্রাপথে দীর্ঘ এলাকাজুড়ে ইসলাম ও মুসলমানের শান্তির বার্তা তুলে ধরা যায়। এটা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীর কাছে পৌঁছার সহজ একটি মাধ্যমও বটে।