ইসলাম সবক্ষেত্রে নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান ও অধিকার দিয়েছে

  • এহসান বিন মুজাহির, অতিথি লেখক, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলাম সবক্ষেত্রে নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান ও অধিকার দিয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

ইসলাম সবক্ষেত্রে নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান ও অধিকার দিয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

৮ মার্চ আর্ন্তজাতিক নারী দিবস। ইসলামে নারী জাতির অধিকার ও মর্যাদা অপরিসীম। ইসলামপূর্ব আরব যুগে নারীদের অধিকার-মর্যাদা বলতে কিছুই ছিলো না। সেকালে কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়াকে অপমানজনক মনে করা হতো। এ অপমান থেকে বাঁচতে নিষ্পাপ-কোমলমতি শিশু কন্যা সন্তানদের জীবন্ত মাটি চাপা দেওয়া থেকে শুরু করে নারীদের দাস হিসেবে ব্যবহার করা হতো; নারীরা ছিলো সবার কাছে অবহেলার পাত্র।

মানবতার ধর্ম ইসলাম এ অবস্থার অবসানে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেয়। নারীকে মানুষ হিসেবে মর্যাদার অংশীদার বলে ঘোষণা করে। ইসলাম মনে করে, মানবকুল নারী-পুরুষ দ্বারা গঠিত। নারী থেকে পুরুষ, পুরুষ থেকে নারী কোনোভাবেই আলাদা করার সুযোগ নেই। এই পৃথিবীতে মানব সমাজের অস্তিত্ব থাকতে হলে নারী-পুরুষের যৌথ উপস্থিতি অপরিহার্য। নারীর কাছে পুরুষ আর পুরুষের কাছে নারী ঋণী। এই দুইয়ের কোনো একজনকে বাদ দিয়ে মানব জীবনের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। একদিকে যেমন একজনকে ছাড়া আরেকজনের অস্তিত্বই বিপন্ন অন্যদিকে একজনের কাছে আরেকজন অপরিহার্যভাবে ঋণী। সুতরাং ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন, রাষ্ট্র জীবন, সব জীবনেই একজনের কাছে আরেকজন দায়বদ্ধ।

বিজ্ঞাপন

জাহেলি যুগে নারীর অধিকার বলতে কিছুই ছিলো না সমাজে। নারীরা যেমন মর্যাদা ও সম্মান পেতো না, ঠিক তেমনি তাদের ন্যায্য অধিকার (মিরাস) উত্তরাধিকারী পেত না। কোনো সম্পদের মালিকানাও লাভ করতে পারতো না। এমনকি একজন মানুষ হিসেবে যে অধিকারগুলো তার প্রাপ্য, তার কোনোটিই বলতে গেলে নারীদের দেওয়া হতো না। তাদের ইজ্জত-আব্রু নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ছিলো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান ছিলো সর্বনিম্নে, তাদের ছিলো কোনো না স্বীকৃতি।

সেই তিমিরাচ্ছন্ন কলুষিত সমাজকে নিষ্কলুষ করার জন্য বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যের বাণী নিয়ে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এ ধরার বুকে আবির্ভূত হলেন। আল্লাহ ও তদীয় রাসূল (সা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয় নারীর অধিকার ও মর্যাদা। বিশ্বনবীর কল্যাণে মহীয়সী নারী মর্যাদা পেয়েছে মাতা হিসেবে। পিতা-মাতা ও স্বামীর সম্পত্তিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। স্বামীর সংসারে স্ত্রীর অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। নারী তার বৈবাহিক জীবনে খাদ্য উপার্জনের চিন্তা হতে মুক্ত হয়েছে। তেমনিভাবে সমাজের সর্বস্তরের নারীর যথার্থ মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইসলাম সর্বক্ষেত্রে নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান ও যথাযথ অধিকার দিয়েছে। নারীর মর্যাদা বলতে কী বুঝায়? মর্যাদা মানে পদ ও সম্মান। কারও পদ বা মর্যাদার অর্থ হচ্ছে যথাযথভাবে তার প্রাপ্য প্রদান করা। আর প্রাপ্য বলতে তাদের অধিকার স্বীকার করা, কর্তব্যের যথাযথ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও সামাজিক জীবনে তার অবদানসমূহের মূল্যায়নকে বুঝায়। নারীর মর্যাদা দেওয়ার অর্থ হচ্ছে তার ন্যায্য অধিকার সঠিকভাবে আদায় করা, তার দায়িত্ব ও কর্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা ও তার অবদানের যথাযথ মূল্যায়ন করা।

বিজ্ঞাপন

ইসলাম ধর্মে নারীকে যথার্থ অধিকার এবং মর্যাদা প্রদান করেছে। স্ত্রী হিসেবে একজন নারীর জন্য ইসলাম মানবিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। পুরুষের জন্য অপরিহার্য করা হয়েছে স্ত্রীর মোহরানা আদায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা স্ত্রীদের তার পারিবারিক জীবনে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। -সূরা আন নিসা: ৪

আল্লাহর রাসূল (সা.) আরও ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান আছে যাদের সে লালন-পালন করে এবং তাদের সঙ্গে সদয় আচরণ করে, তার জন্য অবশ্যই জান্নাত ওয়াজিব। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি দু’টি মেয়ে থাকে? নবীজী বললেন, দু’টি থাকলেও। -সহিহ বোখারি

কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যব্যহার করতে। তার মা তাকে গর্ভে ধারণ করেছে বড় কষ্টের সঙ্গে এবং তাকে প্রসব করেছে খুব কষ্টের সঙ্গে। তাকে গর্ভধারণ করতে এবং প্রসবান্ত দুধ ছাড়াতে ত্রিশ মাস সময় লেগেছে। -আহকাফ: ১৫

হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক’। -সহিহ মুসলিম

স্বামীদের সম্পর্কে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম’। -সহিহ বোখারি

মায়ের মর্যাদা সম্পর্কে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।’ -সুনানে তিরমিজি

নারীর মর্যাদা ইজ্জত-সতীত্ব সুরক্ষার জন্য আল্লাহতায়ালা পর্দার বিধান ফরজ করেছেন। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, হে নবী! মুমিনদের বলে দিন, তারা যেন পর স্ত্রী থেকে তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং নিজ যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। তেমনি মুমিন নারীদের বলে দিন, পুরুষের থেকে তাদের দৃষ্টি যেন অবনমিত রাখে এবং স্বীয় যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষা করে। -সূরা নুর: ৩০

ইসলাম নারীকে যে ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা দিয়েছে পৃথিবীতে অন্য কোনো ধর্ম আজও দিতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। নারীরা আজ রাজপথে নেমে এসেছে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। অধিকার কেন; ন্যায্য অধিকার এবং সর্বোচ্চ মর্যাদাই তো ইসলাম দিয়েছে তাদেরকে। নারী দিবস, মিছিল-মিটিং, সমাবেশ, বিবৃতি, মানববন্ধন ইত্যাদি করে কেন তারা অধিকার আদায় করবে? ইসলাম ধর্ম প্রায় ১৫শ’ বছর আগ থেকেই নারীকে সর্বোচ্চ সম্মান ও যথাযথ অধিকার দিয়েছে। ইসলামে দেওয়া নারীর অধিকার নিশ্চিত করা হোক এবারের নারী দিবসের অঙ্গিকার।

লেখক: অধ্যক্ষ, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার।