চলমান বিপদে ধৈর্য ধরুন, আল্লাহ প্রতিদান দেবেন
করোনার তাণ্ডবে বিশ্ববাসী কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। সুস্থ-অসুস্থ কেউই নিজেকে বিপদমুক্ত মনে করতে পারছেন না। এ এক বিপদ, শুধু বিপদ নয়- মহা বিপদ। আর বিপদ-আপদে মুমিন-মুসলমানের বৈশিষ্ট্য হলো- ধৈর্য ধারণ।
এ বিষয়ে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, ‘হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।’ -সূরা বাকারা: ১৫৩
বাংলা ভাষায় ধৈর্য শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে আরবি ‘সবর’ শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে। সবরের আভিধানিক অর্থ আবদ্ধ রাখা, আটকে রাখা, নিয়ন্ত্রণে রাখা। পরিভাষায় সবর বা ধৈর্য বলা হয়- বিপদের সময় জিহ্বা, হাত ও অন্তরের দ্বারা অস্থিরতা প্রকাশ করা থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাকে।
বিপদে পড়লে মানুষ সাধারণত জিহ্বা, হাত ও অন্তর দ্বারা অস্থিরতা প্রকাশ করে থাকে। মনে মনে ভাবে, এটা আমার ওপর আল্লাহর অবিচার (এরূপ ভাবনা থেকে তার কাছে আশ্রয় চাই)। জিহ্বা দিয়ে বলে, আমি এমন কী অন্যায় করেছিলাম আল্লাহর কাছে যে, আমাকে সে এত বড়ো শাস্তি দিল? অনেকে আবার বলে, দুনিয়াতে এত খারাপ মানুষ থাকতে এ ভালো মনুষের ওপর এ বিপদ? এটা নিয়তির নিষ্ঠুরতা। হাত দিয়ে কপাল থাপড়ায়, গালে খামচি দেয়, চুল টানে, মাথায় আঘাত করে। ছোট-বড় যেকোনো বিপদে পড়লে অন্তর, জিহ্বা ও হাতকে আল্লাহর অপছন্দনীয় সকল কাজ, কথা ও বিশ্বাস থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার নাম ধৈর্য।
বিপদগ্রস্ত প্রতিটি ব্যক্তিই সময়ের একটা পর্যায়ে যেয়ে ধৈর্য ধরে থাকে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। পরবর্তী সময়ের এ ধৈর্য ইসলামের কাঙ্খিত ধৈর্য নয়। ইসলাম যে ‘ধৈর্যে’র আদেশ করেছে, যে ধৈর্যের ওপর পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে তা পরবর্তী সময়ের ধৈর্য নয়; বরং তা হলো- বিপদে পড়ার প্রথম সময়ের ধৈর্য।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ধৈর্য তো কষ্টের প্রথম সময়ে হয়।’ –সহিহ বোখারি: ১২৮৩
বিপদে অধৈর্য হলে বিপদ তো দূর হবেই না উপরন্তু বিপদ দ্বিগুণ হবে। এতক্ষণ ছিল শুধু দুনিয়ার বিপদ আর অধৈর্য হওয়ার দ্বারা এখন আখেরাতের বিপদকেও টেনে আনা হলো। সওয়াবের সুযোগ নষ্ট করে গোনাহ উপার্জন করা হলো। তাই বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত করোনাভাইরাসের এ মহাবিপদেও আমাদের ধৈর্যের সঙ্গে থাকতে হবে। বিপদে অধৈর্য, অসহিষ্ণু হওয়ার সুযোগ মুমিনের জন্য নেই। বিপদে অন্যায়, অপরাধ করার সুযোগও মুমিনের নেই।
করোনার উদ্ভুত পরিস্থিতে লক ডাউনের কারণে খাদ্যের অভাব দেখা দিচ্ছে, বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের উপার্জন হ্রাস পাচ্ছে, অভাব ও দারিদ্র তীব্রতর হচ্ছে, শিল্প ও কৃষির উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যহত হচ্ছে, করোনায় আক্রান্ত্র হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে, আক্রান্ত অবস্থায় বিভিন্ন উপসর্গের সীমাহীন রোগযন্ত্রণা ভোগ করছে, আবার যারা আক্রান্ত্র হয়নি তারা সব সময় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকছে। এ বিষয়গুলো মহান আল্লাহ খুব সুন্দরভাবে সূরা বাকারার ১৫৫-১৫৭ নং আয়াতে এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘আর অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা নেব ভয় ও ক্ষুধা দিয়ে, জান, মাল ও উৎপাদনের ক্ষতি করে। আপনি ওই সকল ধৈর্যশীলকে সুসংবাদ দিন যারা বিপদে পড়ে বলে, আমরা আল্লাহর, আর আমরা তার কাছে ফিরে যাবো। তাদের ওপর বর্ষিত হবে তাদের প্রভুর বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত। তারাই সুপথ প্রাপ্ত।’
সুতরাং করোনার এ মহাবিপদে যারা অধৈর্য না হয়ে, অস্থিরতা প্রকাশ না করে ধৈর্য ধরবে তারা এ ধৈর্যের অগণিত প্রতিদান ও বদলা আল্লাহর কাছে পাবে। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘ধৈর্যশীলদেরকে অগণিত প্রতিদান দেওয়া হবে।’ -সূরা জুমার: ১০
করোনার কারণে আপনার গোনাহগুলো মাফ হবে। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) এবং হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, মুসলিম ক্লান্ত হলে, অসুস্থ হলে, অকল্যাণের শিকার হলে, ক্ষতিগ্রস্থ হলে, নির্যাতিত হলে, দু:খ পেলে এমনকি কাঁটাবিদ্ধ হলেও আল্লাহ এর বদলায় তার গোনাহগুলো মাফ করেন।’ সহিহ বোখারি: ৫৬৪১
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যখন আল্লাহ তার বান্দার ভালো চান তখন দুনিয়াতেই তাকে নগদ শাস্তি দেন। আর যখন আল্লাহ তার বান্দার অনিষ্ট চান তখন তাকে গোনাহের শাস্তি থেকে দূরে রাখেন। ফলে সে গোনাহ সঙ্গে নিয়েই মারা যায়। মহাবিপদের পুরস্কারও মহা হবে। আল্লাহ যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন তখন তাদের পরীক্ষা নেন। যারা পরীক্ষার শিকার হয়েও খুশি থাকে আল্লাহ তাদের প্রতি খুশি থাকেন। আর যারা পরীক্ষার শিকার হয়ে আল্লাহর প্রতি বেজার থাকে আল্লাহ তাদের প্রতি বেজার থাকেন।’ -তিরমিজি: ২৩৯৬