নিজেকে রক্ষা করাও ইবাদতের সমান: মুফতি ইসমাইল মেনক
হোম কোয়ারেন্টাইন বা ঘরে থাকা বর্তমানে একটি আলোচিত বিষয়। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আপাতত মানুষদের ঘরে অবস্থানেই প্রধান সমাধান দেখছেন। মহামারির সময় ঘরে থাকতে বলেছেন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। চৌদ্দশ’ বছর আগে ছড়িয়ে পড়া রোগ থেকে বাঁচতে নবীজী এ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এ বিষয়টিই ওঠে এসেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুসলিম স্কলার মুফতি ইসমাইল মেনক প্রদত্ত শুক্রবারের জুমার খুতবায়।
মুফতি ইসমাইল মেনক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তিনি জিম্বাবুয়ের গ্র্যান্ড মুফতি এবং কাউন্সিল অব ইসলামিক স্কলার্সের ফতোয়া বিভাগের প্রধান। জর্ডানের রয়্যাল আল বাইত ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে করা ইসলামিক চিন্তার জন্য বিশ্বের ৫০০ জন প্রভাবশালী মুসলমানের তালিকার একজন। মুফতি মেনক পড়াশোনা করেছেন মদিনায়। তিনি বহু আন্তর্জাতিক সম্মাননা লাভ করেছেন।
খুতবায় মুফতি মেনক বলেন, বিশ্বাসীদের প্রতি আল্লাহতায়ালার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হলো- ইত্তাকুল্লাহ। যার অর্থ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকে জোরদার করা। তাই আল্লাহতায়ালার নির্দেশনার বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে এখনই বিশেষভাবে ভাবার সময়। ভাবুন, কে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন এবং কেন সৃষ্টি করেছেন? নিজেকে প্রশ্ন করুন, জীবন প্রদীপ নিভে গেলে কী হবে পরিণতি? আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নই হলো ইত্তাকুল্লাহর যথাযথ অর্থ।
খুতবায় তিনি বলেন, আজ (শুক্রবার, ২৭ মার্চ) আমরা বেশিরভাগই জুমার নামাজ একসঙ্গে আদায় করতে পারছি না। সবাই কষ্ট পাচ্ছি। তাই এই খুতবার মাধ্যমে আমি কিছু কথা বলতে চাই। আপনি যদি সত্যিকারের মুমিন হয়ে থাকেন, তা হলে তাকিয়ে দেখুন বিশ্বের দিকে। অবস্থা ভয়াবহ, তবে আশা করছি, খুব শিগগিরই আমরা এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাবো- ইনশাআল্লাহ। এখানে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে চারপাশের চ্যালেঞ্জগুলো আমাদের স্বীকার করতে হবে। করোনায় অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন, আবার অনেকে সুস্থ হয়ে ঘরেও ফিরছেন। আমাদের নবী (সা.) ১৪শ’ বছর আগে এ বিষয়ে বলে গেছেন, মহামারির সময়গুলোতে নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। তাকিয়ে দেখুন চারপাশে, সমাজের ধনী-গরিব আজকে একই কথা বলছেন, ‘সচেতন থাকুন, ঘরে থাকুন।’ ক্ষমতাবান, দুর্বল, সব ধর্মের মানুষ, আজ একই কথা বলছেন- ঘরে থাকুন।
জুমার খুতবায় মুফতি মেনক আরও বলেন, আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.)-এর সূত্রে বোখারি শরিফে একটি হাদিসে রয়েছে। যেখানে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যদি তুমি সতর্কতার জন্য বাড়িতে অবস্থান করো এবং ধৈর্য ধরো, তবে আল্লাহতায়ালা অবশ্যই তার জন্য পুরস্কৃত করবেন।’ এখানে ধৈর্য ধারণের কথা বলা হচ্ছে। কারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে কাজ ছাড়া বাড়িতে অবস্থান করতে চায় না, কাজ ছাড়া বাড়িতে বসে থাকা তার জন্য কঠিন। কিন্তু মহামারি রুখতে যদি আপনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন তবে আল্লাহপাক অবশ্যই সাহায্য করবেন। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘অসুস্থ অবস্থায় কেউ কর্মক্ষেত্রে যাবেন না। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আক্রান্ত জায়গায় গেলে সেখানে অবস্থা করতে হবে। কেউ আক্রান্ত এলাকার বাইরে আসবেন না অথবা বাইরে থেকে কেউ আক্রান্ত জায়গায় যাবেন না।’
মুফতি মেনক বলেন, লকডাউন মেনে নিজেকে আটকে রাখুন। নিজের জন্য যা ভালো তা করাও এক ধরনের ইবাদত। তবে অলস সময় পার করবেন না, যা ভালো তাই করুন। নবী করিম (সা.)-এর নির্দেশনা মেনে চলা সুন্নত। তাই ভাই ও বোনেরা! আপনি যে ধর্মের বা ক্ষমতাবানই হোন না কেন, বাড়িতে অবস্থান করুন।
আরও একটি বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। একজন নবী করিম (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা কিভাবে রক্ষা পাবো? রোগ-শোক, দুর্যোগ থেকে। তিনি হাদিসে তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছেন।
প্রথমত: ‘মুখের কথাকে সংযত করো। তুমি কী বলছো, তা নিয়ে সচেতন থাকো।’ তাই সচেতন থাকুন। আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো তথ্য বা বার্তা শেয়ারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকুন। ভুল তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকুন। অশ্লীল বাক্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। নিজের জিহ্বাকে সংযত করতে হবে। মানুষ তার মোবাইল ফোনকে অমানবিক কাজে ব্যবহার করছে। ভুলে যাবেন না একদিন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। তিনি সবাইকে দেখছেন। দয়া করে আল্লাহকে নারাজ করবেন না।
দ্বিতীয়ত: বাড়িতে থাকুন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান।
তৃতীয়ত: আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখুন। নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। ঘরে বসে থাকা সময়গুলোতে জ্ঞান চর্চা করুন। ভেঙে পড়বেন না, যারা বিপদগ্রস্ত তাদের জন্য প্রার্থনা করুন। আল্লাহতায়ালা এই ভাইরাস থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আতঙ্কিত হবেন না, তবে পরিস্থিতিকে গুরুত্বসহকারে নিন। স্বাস্থ্য নির্দেশনাগুলো মেনে চলুন, মনে রাখবেন- নিজেকে রক্ষা করাও ইবাদতের সমান। আজ সব ক্ষমতাবান জাতি বিপদগ্রস্ত। তাই মহা ক্ষমতাবান আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখুন।