নিজামুদ্দিন মারকাজ থেকে করোনায় ৭ জনের মত্যু, আক্রান্ত ২৪

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে মুসল্লিদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিজামুদ্দিন মারকাজ মসজিদ থেকে, ছবি: সংগৃহীত

স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে মুসল্লিদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিজামুদ্দিন মারকাজ মসজিদ থেকে, ছবি: সংগৃহীত

তাবলিগ জামাতের মূল মারকাজ নিজামুদ্দিন মসজিদ থেকে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা সংক্রমণ। নিজামুদ্দিনের ওই মারকাজে তাবলিগের মজমায় অংশ নেওয়া সাত মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। আরও ২৪ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। সংক্রমিতদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। নিজামুদ্দিন মারকাজ থেকে ৮৫০ জনকে সরিয়ে অন্যত্র কোয়ারান্টাইন করে রাখা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২০০ জনের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর নড়েচড়ে বসে দিল্লির ক্ষমতাসীন অরবিন্দ কেজরিওয়াল সরকার। সংক্রমণ রোধ করতে ইতোমধ্যে মসজিদটি সিল করে জীবাণুমুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঘটনায় দিল্লির ওই মসজিদের প্রধান মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিজামুদ্দিন থেকে করোনা সংক্রমণের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকারও। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ গোটা পরিস্থিতির দিকে কড়া নজর রাখছেন বলে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ১ থেকে ১৫ মার্চের মধ্যে দিল্লির ওই মসজিদে অন্তত ২ হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিল। নিজামুদ্দিন মারকাজের ওই জমায়েতে ভারতের মুসল্লি ছাড়াও সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও কিরগিজিস্তান থেকে আগতরা অংশ নিয়েছিলেন।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে যেখানে সব ধরনের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যে বারবার অনুরোধ জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার, ওই সময় সরকারের বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে তাবলিগের বিশেষ ইজতেমার আয়োজন করা হয়। ১০০ বছরেরও বেশি পুরোনো মসজিদটি তাবলিগ জামাতের মূল মারকাজ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। ১৯২৬ সালে স্থাপিত ওই মসজিদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থেকে তাবলিগের সাথীরা যাতায়াত করেন নিয়মিত। তাদের এমন অসতর্ক আচরণের সমালোচনা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে মুসল্লিদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে নিজামুদ্দিন মারকাজ মসজিদ থেকে, ছবি: সংগৃহীত

নিজামুদ্দিনের ওই ইজতেমায় যোগ দেওয়ার পর করোনা সংক্রমণের কারণে প্রাণ খোয়াতে হয় তেলেঙ্গানার ছয় ও শ্রীনগরের এক বাসিন্দাকে। এদিকে ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে ওই জমায়েতে অংশ নেওয়া ৯ ব্যক্তির মধ্যে করোনা সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে। পাশাপাশি তাদের মধ্যে এক ব্যক্তির স্ত্রীর শরীরে মিলেছে করোনা সংক্রমণের প্রমাণ।

এ ঘটনা প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে নিজামুদ্দিন মারকাজ কর্তৃপক্ষ আত্মপক্ষ সমর্থন করে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদি ২২ মার্চ ‘জনতা কারফিউ’ ঘোষণা করার পর এই অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়। কিন্তু ততক্ষণে ওই মসজিদ চত্বরে প্রচুর মানুষের জমায়েত হয়ে যায়। তারা ওই কারফিউয়ের কারণে আটকা পড়েন। তাদের আর অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিলো না। আর এরপর শুরু হয় দেশজুড়ে লকডাউন। তাই বাধ্য হয়েই মসজিদ সংলগ্ন এলাকাতে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকতে বাধ্য হন তারা।

এদিকে গত মাসের শেষ দিকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের শ্রী পেতালিং মসজিদ কমপ্লেক্সে তাবলিগ জামাতের তিনদিনের এক ইজতেমার আয়োজন করা হয়। মালয়েশিয়ায় করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন তাবলিগের ওই জমায়েতে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

মালয়েশিয়ার ওই ইজতেমায় প্রায় দুই লাখ লোক অংশ নেয়। সেখানে থাকা ব্রুনাইয়ের ৫০ জন, সিঙ্গাপুরে পাঁচজন, কম্বোডিয়ায় ১৩ জন ও থাইল্যান্ডের অন্তত দুইজনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। এ ঘটনার পর শ্রী পেতালিং মসজিদ কমপ্লেক্সে বন্ধ করে দেওয়া হয়।