কোয়ারেন্টাইনে উম্মুল কুরার বিদেশি শিক্ষার্থীরা
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সৌদি আরবেও আঘাত হেনেছে। দেশটির জনবহুল শহর রিয়াদ, মক্কা ও মদিনায় সংক্রমিতদের সংখ্যা অন্য অঞ্চলগুলো থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি। করোনার সংক্রমণ রোধে সৌদি সরকার নানামুখী আদেশ জারি করেছে।
বৃহস্পতিবার (২ এপ্রিল) পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় ২৪ ঘণ্টার কারফিউ জারি করা হয়েছে। তবে জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্মীরা কারফিউর আওতামুক্ত থাকবেন এবং অন্যরা শুধু খাবার ও ওষুধ কিনতে বাইরে বের হতে পারবেন।
মহামারির ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মুসলমানদের হজের পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে। মক্কা ও মদিনার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি এলাকা পুরোপুরি লকডাউন করা হয়েছে।
দেশটিতে প্রথম করোনাভাইরাস ধরা পড়ে পূর্বাঞ্চলের তেল উৎপাদনকারী প্রদেশ কাতিফে। ইরান থেকে ফেরা শিয়া মুসলিমরা প্রথম এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তারপর থেকে সেখানে প্রায় ৪ সপ্তাহ ধরে লকডাউন চলছে।
এমতাবস্থায় সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নানা নির্দেশনা অনুসরণ করে সৌদিতে বসবাসরত সবাই। এসব কাজের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে পবিত্র মক্কা মুকাররমার ঐতিহ্যবাহী উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবাসিক শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। বিশ্বের প্রায় চল্লিশটি দেশের ৫৭০ জন শিক্ষার্থীকে ২৯ মার্চ ছাত্রাবাস থেকে স্থানান্তর করে মক্কার অভিজাত এলাকা আজিজিয়ার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রত্যেককে আলাদা আলাদা সুপরিসর রুমে রাখা হয়েছে। সেখানে রয়েছে যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের সামগ্রী। সমাগম ও অন্যের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলার জন্যই মূলতঃ এই ব্যবস্থা।
রোগ সংক্রমণের শঙ্কায় পৃথক রাখা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর ড. আবদুল্লাহ বাফেল শিক্ষার্থীদের ‘মানবতার রাজ্যের মহান অতিথি’ হিসেবেই দেখছেন এবং সংশ্লিষ্টদের সে অনুযায়ী যাবতীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
সহকারী রেক্টর ড. ফরিদ আল গামেদি বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় ছাত্রদের জন্য ‘সঙ্গরোধের’ উপযোগী পরিবেশের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণের আহবান জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ রুমে অবস্থান করাকেই সবচেয়ে বড় সহযোগিতা হিসেবে দেখছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী করোনা সংক্রমিত হয়নি। তারপরও সতর্কতামূলকভাবে আমরা এ পদক্ষেপ নিয়েছি।
বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস প্রতিনিধি ঈসা আমিনী এ বিষয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক প্রতিনিধিকে নিজ দেশের ছাত্রদের সর্বোচ্চ সুবিধা নিশ্চিতে যেন কোনো ত্রুটি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন।
কোয়ারেন্টাইনে খাবারসহ অন্যান্য বিষয়ে অনার্সের শিক্ষার্থী জামশেদ আলম বলেন, প্রত্যেহ তিন বেলা উন্নতমানের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার আমাদের রুমের পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
একাকি থাকার অনুভূতি জানতে চাইলে অনার্সের শিক্ষার্থী হাফিজ আহমদ বলেন, উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য কল্যাণকর এ আয়োজনে সত্যিই আমরা অভিভূত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শুধু আমাদের শিক্ষাগত উন্নতির কথাই ভাবছেন না বরং স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি তাদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
করোনার কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ। তাই কোয়ারেন্টাইনে থাকলেও প্রত্যেক শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় একলাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে বহিরাগত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। তন্মধ্যে বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রী মিলিয়ে প্রায় ৭০ জন শিক্ষার্থী এমফিল, পিএইচডিসহ বিভিন্ন স্তরে অধ্যয়ন করছেন।