দেড় হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা চায় হাব
করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হজ, উমরা, ট্রাভেল ও ট্যুরিজম সেক্টর ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন। এই সেক্টরটিকে রক্ষা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দাবী করেছে হাব (হজ্জ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)।
হজ ও উমরা এজেন্সিসমূহের সরকার নিবন্ধিত বাণিজ্যিক সংগঠন হচ্ছে হাব। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে এক চিঠিতে হাবের সভাপতি এম. শাহাদাত হোসাইন তসলিম প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ-১ এর আওতায় হজ ও উমরা এজেন্সিসমূহের জন্য সুদমুক্ত দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ চেয়ে ট্রাভেল এজেন্ট ও ট্যুর অপারেটরদের জন্য প্রয়োজনীয় নগদ প্রণোদনার ব্যবস্থার দাবি করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের ভয়াবহ আক্রমণের কারণে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে সৌদি সরকার উমরা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় আড়াই লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান উমরা পালন করে থাকেন, চলতি বছর ১ লাখ ২০ হাজার হজযাত্রী বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজপালনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।
হাব সদস্য এজেন্সিসমূহ হজযাত্রীদের বেসরকারিভাবে উমরা ও হজপালন কার্যক্রমে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করে থাকেন। হজ গমনের পূর্বে হজযাত্রীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, ভিসাকরণ, এয়ার টিকেটের ব্যবস্থা, সৌদিতে অবস্থানকালে আহার, বাসস্থান ও যাতায়াতের বন্দোবস্ত করা, চিকিৎসা সেবা, দেশে প্রত্যাবর্তন ইত্যাদি হজ ও উমরা কার্যক্রমে পূর্ণ প্যাকেজ সুদীর্ঘকাল থেকে সুনামের সঙ্গে সম্পাদন করে আসছে।
হাব সূত্রে জানা গেছে, হাবের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১ হাজার ২৩৮। হজ এজেন্সিসমূহের মালিকসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাসিক বেতন এবং অফিস ভাড়া ও অন্যান্য খরচসহ মাসে পরিচালন ব্যয় প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এছাড়া এ পেশার সঙ্গে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশে ও সৌদি আরবে আরও প্রায় ১ লাখ লোক নিয়োজিত আছেন। বাংলাদেশের মোট হাজযাত্রীর প্রায় ৯৬ ভাগ এবং উমরাযাত্রীর শতভাগ কার্যাদি হাব সদস্য হজ ও উমরা এজেন্সির প্রত্যেক্ষ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। হাবের সদস্যগণ ট্রাভেল ও ট্যুর অপারেটের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট। করোনাভাইরাসের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে উমরা, ট্রাভেল ও ট্যুরিজম সেক্টর।
বেসরকারিভাবে হজ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সৌদি সরকার কর্তৃক উমরা বন্ধের ঘোষণার পর ১০ হাজার উমরাযাত্রীর ভিসা, এয়ার টিকেট, মক্কায় হোটেল ভাড়াসহ প্রায় ১০০ কোটি টাকার পূর্ণ প্যাকেজ মূল্য পরিশোধ করা হয়েছিল। এছাড়া আসন্ন রমজানে উমরা হজে গমনকারীর জন্য আরও ৫ হাজার এয়ার টিকেট অগ্রিম ক্রয় করা ছিল। যার মূল্য ২৫ কোটি টাকা। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন ও অন্যান্য অফিস খরচসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে এ বাবদ নীট লোকাসনের পরিমাণ একশ পচাঁত্তর কোটি টাকা।
এছাড়া আগামী রমজান পর্যন্ত কমপক্ষে আরও ১ লাখ উমরাযাত্রী উমরার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন হতো আরও ১ হাজার কোটি টাকার মতো। চলতি বছর বেসরকারিভাবে ১ লাখ ২০ হাজার হাজযাত্রী হজপালনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। যদি কোনো কারণে ২০২০ সালে বাংলাদেশের হজযাত্রীরা হজে যেতে না পারেন, তাহলে এ বাবদ ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষতির পরিমাণ হবে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা এবং এ লোকসান পূরণের কোনো সম্ভাবনা নেই। উপরন্তু হজ ও উমরা এজেন্সিসমূহের অফিস ভাড়া ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি প্রায় ৫০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ সর্বমোট ব্যবসায়িক লেনদেন এবং নীট ক্ষতির পরিমাণ ৬ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। এভাবে কোনো উপার্জন ছাড়া অনেক এজেন্সি পুরো বছরের অফিস ভাড়া ও কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।
করোনাভাইরাসের কারণে এ সেক্টরটি ক্ষতিগ্রস্থ হলে আগামীতে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত প্রায় ১০ হাজার কর্মচারী, বাংলাদেশে ও সৌদি আরবের প্রবাসী বাংলাদেশিসহ পরোক্ষভাবে জড়িত ৫০ হাজার ব্যক্তির চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।তাই প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ-১ এর আওতায় হাবের জন্য সুদমুক্ত দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণ প্রয়োজন। না হলে এই খাত ভেঙ্গে পড়তে পারে।
এছাড়া ট্যুর অপারেটরদের জন্য প্রয়োজনীয় নগদ প্রণোদনার দাবি করা হয়েছে চিঠিতে।