ঢাকা: পর্যাপ্ত হজ যাত্রী পাওয়া নিয়ে সংকট কাটছেই না। সোমবারও পর্যাপ্ত হজ যাত্রী না পাওয়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আরো দুটি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে বিমান কর্তৃপক্ষকে মোট ১৮টি ফ্লাইট বাতিল করতে হলো।
বিজ্ঞাপন
বিমান সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ফ্লাইট নাম্বার বিজি-১০৯১ এবং ৬০৯১ ফ্লাইট দুটি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। হজ শুরুর ৫০ দিন পূর্বেই বিমানের হজ টিকেট বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করলেও এতে সর্বাত্মক সাড়া পায়নি বিমান। এজেন্সিগুলো সময় মত টিকেট সংগ্রহ না করায় এখনো অনেক হজ টিকেট অবিক্রিত রয়েছে। আর এ কারণেই একের পর এক ফ্লাইট বাতিল করতে হচ্ছে।
আগামী ১৫ আগেস্ট পর্যন্ত হজ যাত্রী পরিবহন করবে বিমান। ১৮৭টি ফ্লাইটে ৬৩ হাজার ৬০০ জন হজ যাত্রী বিমান পৌছে দেবে সৌদি আরবে।
আলেম, রাজনীতিবিদ ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব মাওলানা আতহার আলী রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে বাদ দিয়ে এদেশের ইতিহাস হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠন এবং সেই নির্বাচনে জাতীয় চার নেতার একজন ছিলেন আতহার আলী (রহ.)। বিগত দিনে তাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ধর্ম উপদেষ্টা।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের শফিউর রহমান অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত মুজাহিদে মিল্লাত মাওলানা আতহার আলী (রহ.)-এর স্মরণে আলোচনা সভা ও গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মাকতাবাতুল আযহার থেকে প্রকাশিত এই জীবনীগ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় লেখক, ইসলামি স্কলার ও উলামায়ে কেরাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কিশোরগঞ্জের আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা শাব্বির আহমাদ রশিদ।
মাওলানা আতহার আলী (রহ.)-এর রাজনৈতিক ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, তার ডায়নামিক নেতৃত্বের কারণে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টে তার দল নেজামে ইসলাম পার্টি থেকে ৩৬ জন প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এটা তার নেতৃত্বের সুফল। মাওলানা আতহার আলী (রহ.)-এর মতো ব্যক্তিরা চলে যাওয়ায় আজ নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মতো লোক আর এখন তৈরি হয় না।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, আমাদের জাতীয় ইতিহাসে মাওলানা আতহার আলী (রহ.)-এর ওপর রচিত বই পথ দেখাবে। এই বই ছাড়া স্বাধীনতার ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ হবে না। এই দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, আলেখ্য এই বইয়ে আছে। বইটি আমাদের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আতহার আলী (রহ.) ছিলেন একজন অ্যাকটিভ পলিটিশিয়ান। তার বহুমাত্রিকতা আমাদের অবাক করে। আইয়ুব খান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে তিনি রাজনীতি করেছেন। এরপরও মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন, মসজিদের ইমাম ছিলেন। ছিলেন খানকার পীর। এখনও বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের যে ইতিহাস পড়ানো হয় সেখানে আতহার আলী (রহ.)-এর ভূমিকার কথা রয়েছে।
খালিদ হোসেন বলেন, আতহার আলী সাহেবকে বাদ দিয়ে এদেশের ইতিহাস তৈরি হতে পারে না। তবে অতীতে তার অবদানকে ইতিহাসে খাটো করে দেখানো হয়েছে। আমরা আগামীতে যে ইতিহাস তৈরি করব সেখানে তার ভূমিকা সত্যিকার অর্থে তুলে ধরব।
এ সময় তিনি বইটির রচয়িতা শায়খুল হাদিস মাওলানা শফিকুর রহমান জালালাবাদীকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান। মাওলানা আতহার আলী (রহ.)-এর ওপর গবেষণা অব্যাহত থাকে সে ব্যাপারে তরুণ গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানান ধর্ম উপদেষ্টা।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বদলে গেছে পৃথিবীর চালচিত্র। বাদ যায়নি মক্কা অঞ্চলও। যে কারণে এই সময়েও সৌদি আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টির দেখা মিলছে।
রোববার (২৪ নভেম্বর) সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীতে বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে।
দেশটির সংবাদ মাধ্যম আল আখবারিয়া জানিয়েছে, বৃষ্টির সময় উমরা পালনকারীরা ইহরাম পরিহিত অবস্থায় পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে আসরের নামাজ আদায় করেছেন। বৃষ্টির সময় তাদের নামাজ আদায় ও তাওয়াফের ছবি এবং ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, পবিত্র উমরা পালনকারীরা বৃষ্টির সময় মসজিদে হারামে আসরের নামাজ আদায় করছেন, পবিত্র কাবা তাওয়াফসহ অন্যান্য নফল ইবাদতে মশগুল রয়েছেন। অনেককে এ সময় কান্নাসহকারে হাত তোলে মোনাজাতও করতে দেখা যায়।
মৌসুম পরিবর্তনের এই সময়ে বৃষ্টির বিষয়ে আবহাওয়াবিদরা আগে থেকেই সতর্ক করেছিলেন। মক্কায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখে, মসজিদে হারামের পরিচালনা পরিষদ উমরা পালনকারীদের নিরাপত্তায় নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বিশেষ করে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের বৃষ্টির সময় মাতাফের (কাবা চত্বর) পরিবর্তে মসজিদে হারামের অংশে তাওয়াফের পরামর্শ দেয়।
সেই সঙ্গে দ্রুত বৃষ্টির পানি নিষ্কাষণে অতিরিক্তি লোক নিয়োজিত রাখা হয়। বৃষ্টির কোনো বিরূপ প্রভাবে যেন উমরাকারীদের কষ্ট না হয়, তাই কর্তৃপক্ষ দ্রুত পানি নিষ্কাষণ থেকে শুরু করে কাবা প্রাঙ্গণ পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু করে দেন। এ সময় তাওয়াফকারীদের যেন কোনো ধরনের সমস্যা নয়, তাদের ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটে- তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন তারা। সেই সঙ্গে বৃষ্টিজনিত যেকোনো সমস্যার মোকাবেলায় জরুরি চিকিৎসক দলও প্রস্তুত রাখা হয়।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হজ। এটি ফরজ ইবাদত। যেসব মুসলিম নর-নারীর শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি আর্থিক সংগতি আছে, তাদের জন্য জীবনে একবার হজ পালন করা ফরজ। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সালের ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজব্রত পালনের সুযোগ পাবেন। এরই মধ্যে হজযাত্রী নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং তা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।
হজ একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় ও সময়াবদ্ধ কার্যক্রম। সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ অনুসরণ করে বাংলাদেশ ও সৌদি সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় হজের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদিত হয়।
এই রোডম্যাপ অনুসরণে বিচ্যুতি ঘটলে সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, হজ ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন ঘটে। সৌদি যেতে প্রয়োজন একটি বৈধ পাসপোর্ট এবং হজের জন্য প্রয়োজন হজ ভিসা। এবার হজ পালনের জন্য ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত পাসপোর্টের মেয়াদ থাকতে হবে। হজ ভিসা ছাড়া হজপালন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ থেকে দুটি মাধ্যমে হজ পালন করা যায়। সরকারি মাধ্যমে ও বেসরকারি হজ এজেন্সির মাধ্যমে। এ বছর হজে যেতে প্রথমে প্রাক-নিবন্ধন, এরপর প্রাথমিক নিবন্ধন এবং সব শেষে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে হবে। এ বছরের অক্টোবরের ১ তারিখ থেকেই শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের হজ নিবন্ধন, চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। ঢাকার হজ অফিস, বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধন করা যাবে। এ ছাড়া হজের কল সেন্টার ১৬১৩৬ নম্বরে ফোন করে, e-Hajj ইউ মোবাইল অ্যাপ কিংবা www.hajj.gov.bd ওয়েব পোর্টালে লগ ইন করে নিবন্ধন করা যাবে।
তবে দুরারোগ্য ব্যাধি, যেমন- ক্যান্সার, অ্যাডভান্সড কার্ডিয়াক, লিভার সিরোসিস, কিডনি রোগ, সংক্রামক যক্ষ্মা ও ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি ছাড়া হজ গমনেচ্ছু বাংলাদেশের যেকোনো মুসলিম নাগরিক যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে হজে যেতে পারবেন।
নিবন্ধনের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট, সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি ও হজযাত্রীর ব্যাংক হিসাবের তথ্য প্রয়োজন হবে। প্রাক-নিবন্ধনের জন্য ৩০ হাজার এবং প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য তিন লাখ টাকা সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় জমা দিতে হবে।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তারিখের মধ্যে প্যাকেজ মূল্য পরিশোধ করে চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। প্রাক-নিবন্ধনকালে জমাকৃত ৩০ হাজার টাকার মধ্যে প্রাক-নিবন্ধন প্রসেস ফি বাবদ এক হাজার টাকা কাটার পর অবশিষ্ট ২৯ হাজার টাকা এবং প্রাথমিক নিবন্ধনের তিন লাখ টাকা চূড়ান্ত নিবন্ধনের সময় প্যাকেজ মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।
গত ৩০ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা হজ প্যাকেজ ২০২৫ ঘোষণা করেন। এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় সাধারণ হজ প্যাকেজ-১ ও সাধারণ হজ প্যাকেজ-২ নামে দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ হজ প্যাকেজ-১-এর মূল্য চার লাখ ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা এবং অন্যটির মূল্য পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৬৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারের দৃঢ় মনোভাব ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই এ বছর উড়োজাহাজ ভাড়া ২৬ হাজার ৯৮০ টাকা কমেছে।
রাজস্ব বোর্ডও হাজিদের জন্য বিমান টিকিটের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে। সৌদি রিয়ালের দাম গতবারের তুলনায় ২.৭৬ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় সংগত কারণে হজের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। কিন্তু এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যাতে সুলভে হজ পালন করতে পারে সেই লক্ষ্যে সরকার হাজিদের আবাসন ও সেবায় কিছুটা পরিবর্তন এনে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
এ বছর বেসরকারি মাধ্যমের সাধারণ হজ প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৮৩ হাজার ১৫৬ টাকা। এ ছাড়া সাধারণ হজ প্যাকেজ গ্রহণপূর্বক এজেন্সিকে একটি অতিরিক্ত বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো দুটি অংশ আলাদাভাবে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
হজযাত্রীকে বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করে ঢাকার হজ অফিসে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বায়োমেট্রিক সনদ ও পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। শিশুদের নিবন্ধন অভিভাবকের সঙ্গে একত্রে করতে হবে। হজ শেষে শিশু বা নবজাতকের বিমানভাড়ার ফেরতযোগ্য অংশ প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার কারণে হজে যেতে সক্ষম না হলে জমাকৃত অর্থের অব্যয়িত অংশ হজযাত্রীকে ফেরত দেওয়া হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক বিধি অনুসরণপূর্বক প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা হজের সময় সঙ্গে নেওয়া যাবে। হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে বা বেসরকারি স্বনামধন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সম্পন্ন করে রিপোর্টসহ টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে মেনিনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিয়ে টিকা সংবলিত স্বাস্থ্য সনদ গ্রহণ করতে হবে। বিমানে ভ্রমণকালে একজন হজযাত্রী সর্বোচ্চ ৪৬ কেজি (২৩+২৩) ওজনের দুটি ট্রলিব্যাগ এবং সর্বোচ্চ সাত কেজি ওজনের একটি হ্যান্ডব্যাগ সঙ্গে নিতে পারবেন। ট্রলিব্যাগে হজযাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, whatsapp যুক্ত মোবাইল নম্বর, গাইড, মোনাজ্জেম মোবাইল নম্বর ইত্যাদি ইংরেজিতে লিখতে হবে।
সৌদি সরকারের আইন অনুযায়ী, হজযাত্রীর লাগেজে নেশাজাতীয় ওষুধ, তামাকপাতা, জর্দা, গুল, শুঁটকি, গুড়, রান্না করা খাবার, পচনশীল দ্রব্যাদি (ফলমূল, পান, সুপারি) ইত্যাদি পরিবহন করা নিষিদ্ধ। ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো অসুস্থতার জন্য প্রেসক্রিপশনসহ নিয়মিত সেবন করতে হয় এমন ওষুধ, স্ট্রিপ ইত্যাদি অবশ্যই সঙ্গে নিতে হবে।
ঢাকার হজযাত্রীরা হজ ফ্লাইট সময়ের কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা আগে এবং ঢাকার বাইরের হজযাত্রীদের কমপক্ষে এক দিন আগে ঢাকার আশকোনা হজ ক্যাম্পে উপস্থিত থাকতে হবে। হজক্যাম্প ডরমিটরিতে বিনামূল্যে থাকা এবং নিজ খরচে ক্যান্টিনে খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়।
সৌদি আরবে হজযাত্রীকে নুসুক কার্ড, পরিচয়পত্র, মোয়াল্লেম কার্ড ও হোটেলের কার্ড সার্বক্ষণিক সঙ্গে রাখতে হবে। সৌদি অবস্থানকালে রাজনীতি, বিক্ষোভ প্রদর্শন, মানববন্ধন, ভিক্ষাবৃত্তি, চুরিসহ সব ধরনের অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় সে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হজ সফরে মৃত্যুবরণকারী হজযাত্রীকে সৌদি আরবে দাফন করা হয়ে থাকে। হজ শেষে মৃত্যু সনদ ঢাকার হজ অফিসের মাধ্যমে মৃতের ওয়ারিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। লাগেজ হারিয়ে গেলে বাংলাদেশ হজ অফিস, জেদ্দা, মক্কা বা মদিনায় সরাসরি বা এজেন্সির মোনাজ্জেম বা গাইডের মাধ্যমে অবহিত করতে হবে। দেশে ফেরার পথে লাগেজ হারানো গেলে এ সংক্রান্ত তথ্যাদি বিমানবন্দরের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেকশনে জানাতে হবে। জেদ্দা, মক্কা ও মদিনায় স্থাপিত মেডিক্যাল সেন্টার থেকে হজযাত্রীরা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। তবে খাওয়ার পানি, হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান ও টয়লেট পেপার নিজ ব্যবস্থাপনায় কিনে ব্যবহার করতে হবে।
২৫ জিলকদ ১৪৪৬ হিজরির পর কোনো হজযাত্রী মক্কা কিংবা জেদ্দা থেকে সড়কপথে মদিনায় যেতে পারবেন না। ৫ জিলহজের পর কোনো হজযাত্রী মদিনা-আল-মুনাওয়ারায় অবস্থান করতে পারবেন না। হজের পর ১৪ জিলহজের আগে কোনো হজযাত্রী মক্কা মোকাররমা থেকে মদিনা মোনাওয়ারায় যেতে পারবেন না।
হজব্রত পালনের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। পরিকল্পিত পদক্ষেপের মাধ্যমে অগ্রসর হলে হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি সহজ ও সাবলীলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। মহান আল্লাহ সবার হজ সহজ করে দিন। আমিন।
পবিত্র হজ নানা রহস্য ও হেকমতে ভরপুর এমন এক ইবাদত, যাতে রয়েছে অনেক কল্যাণ। বিশ্বের মুসলমানরা ফরজ হজপালনের জন্য জিলহজ মাসের প্রথম দিকে পবিত্র কাবার শহর মক্কামুখি হন। আর উমরা সারা বছরের যেকোনো সময় আদায় করা যায়। সব ধরনের সামর্থ্য থাকলে একজন মুসলমানের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ।
হজের দর্শনের মধ্যে রয়েছে বস্তুগত, আধ্যাত্মিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক এবং ব্যক্তিগত নানা কল্যাণ। যেমন- হজ মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সমস্যাগুলো পর্যালোচনার সুযোগ এনে দেয় এবং এতে জোরদার হয় মুসলিম বিশ্বের ঐক্য ও সংহতি। সাংস্কৃতিক লেনদেনও ঘটে হজকে কেন্দ্র করে।
হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দর্শন হলো, একনিষ্ঠ ও প্রেমময় চিত্তে আল্লাহর দাসত্বের ঘোষণা দেওয়া। ইহরাম বাঁধা, কাবা ঘরের তওয়াফ ও কোরবানিসহ অন্যান্য তৎপরতায় এ বিষয়টি ফুঁটে উঠে। এ ছাড়া হজের মাধ্যমে আরও বেশ কিছু বিষয় প্রকাশ পায়, সেগুলো হলো-
পরকালের প্রতি মনোযোগ সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরে হজযাত্রী সব ধরনের পার্থিব মোহ ও আকর্ষণ থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিজেকে আধ্যাত্মিক ও আসমানি পর্যায়ে উন্নীত করেন।
মুসলমানদের সহমর্মিতা হজের সময় সারা বিশ্বের মুসলমানরা হন একত্রিত। সমচিন্তা ও সহমর্মিতার ঢেউ খেলে যায় তাদের মধ্যে। কিভাবে বিশ্বের মজলুম ও দুর্বল মানুষদের সমস্যার সমাধান করা যায় তা নিয়ে ঘটে বিশ্লেষণ ও মতবিনিময়। মুসলিম বিশ্বের যে বিশাল শক্তিমত্তা তা দেশ ও জাতিগুলোর সমস্যা সমাধানে কাজে লাগাতে পারে।
আলেমরা বলেন, ‘হজ এমন এক বিধান, যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ধর্মের প্রতি আনুগত্য ফুটে উঠে ও পার্থিব নানা কল্যাণ অর্জন করে। হজ মৌসুমে সারা দুনিয়ার মানুষ একত্র হওয়ায় জানতে পারে একে-অপরকে এবং জাতিগুলো পরস্পরের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উৎপাদন থেকেও হয় উপকৃত। এ ছাড়া তারা নবী কারিম (সা.)-এর অবদান এবং তার সম্পর্কে নানা তথ্য ও প্রামাণ্য বিষয় জানতে পারে।’
ইসলামি সমাজের সুরক্ষা হজ ইসলামকে শক্তিশালী করে ও শক্তিশালী করে মুসলিম উম্মাহকে। হজ নানা শাস্তি থেকে বিশ্বের মুসলমানদের রক্ষা কর। কাবা ঘরকে পরিত্যাগ করা হলে ও হজ বন্ধ হয়ে গেলে ধ্বংস হবে সমাজ এবং নাজিল হবে আল্লাহর শাস্তি। তাই মুসলিম সরকারের উচিত হজপালনে জনগণকে উৎসাহ দেওয়া এবং কোনো ব্যক্তির যদি আর্থিক সামর্থ্য নাও থাকে তাকেও আর্থিক সহায়তা দিয়ে হজে পাঠানো।
হজের মাধ্যমে অভাব দূর হয়, এটা ঐক্যের মাধ্যম। হজযাত্রীরা জালেম, সত্য গোপনকারী ও মুশরিকদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন। এটা হজের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। তারা বিশ্বের সব মজলুম ও বঞ্চিতদের প্রতি সংহতি ঘোষণা করেন।