কাজা নামাজ আদায়ের পদ্ধতি
অনেকে জানতে চান, রমজান মাসে কিংবা অন্য কোনো সময়, পেছনের জীবনের কাজা (উমরি কাজা) পড়বেন নাকি নফল নামাজ। কোনটা উত্তম। আর উমরি কাজা কিভাবে আদায় করতে হয়?
প্রথমত কথা হলো, আপনার জীবনে যদি কাজা নামাজ থেকে থাকে তাহলে সেই কাজা নামাজ আগে আদায় করবেন। এটা আপনার জিম্মাদারি। নফল আপনার আপনি জিম্মাদারি না, এটা অতিরিক্ত আমল।
এখন প্রশ্ন হলো- নামাজ আদায় করার বিষয়ে। এটা খুবই সহজ বিষয়। যদি আপনার জানা থাকে ঠিক কত ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয়েছে, তবে সে হিসেবে পড়বেন। আর যদি জানা না থাকে তবে অনুমান করবেন। ধরুন, আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে কখনোই নামাজ আদায় করেননি, আপনি বের করবেন কত বছর বয়সে আপনি প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ) হয়েছেন। সাধারণত বাংলাদেশে এগারো-বারোতে ছেলে-মেয়েরা বালেগ হয়। এখন আপনার বয়স যদি বিশ হয় তবে এগারো থেকে ধরে নিয়ে দশবছরের নামাজ কাজা করতে হবে। বছর হয় ৩৬৫ দিনে।
কিন্তু নারীরা প্রতিমাসে ছুটি পায় তিন থেকে দশদিন পর্যন্ত। বেশিরভাগ নারীর অভ্যাস থাকে সাতদিন। নারীরা সে অনুযায়ী অনুযায়ী হিসাব করবেন।
এই কাজা নামাজ আপনি দুইভাবে আদায় করতে পারেন।
এক. প্রতিদিনের ফরজ নামাজের সঙ্গে এক অথবা দুইদিনের করে কাজা নামাজ পড়বেন এবং প্রত্যেকবার নিয়ত করবেন ‘আমার জিম্মায় যত ফজরের নামাজ কাজা আছে, তার অনাদায়কৃত প্রথম ফজরের কাজা আদায় করছি।’ এভাবে প্রতিদিন উমরি কাজা আদায় করতে পারেন। প্রত্যেকবার একই নিয়ত করবেন, কারণ আপনি বলছেন- ‘অনাদায়কৃত।’ যেটা আদায় করছেন, সেটা তো আদায়ই হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রথম অনাদায়কৃত বলা।
কিন্তু এই পদ্ধতিতে আদায় করা কঠিন। তালগোল পাকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে হিসেব দ্বিতীয় পদ্ধতি একটু সহজ।
প্রথমে এক বছরের শুধু ফজরের ফরজ নামাজ আদায় করুন। নিয়তের ক্ষেত্রে বলবেন, ‘আমার জীবনে কাজা হওয়া প্রথম ফজরের কাজা আদায় করছি।'
অর্থাৎ আপনি প্রতিওয়াক্তের সঙ্গে পাঁচওয়াক্ত ফজর, জোহরের সময় আরও পাঁচ ওয়াক্ত ফজর, তারপর এশার পর অথবা তাহাজ্জুদের সময় আরও পাঁচওয়াক্ত ফজর পড়েন, তবে দিনে পড়ছেন পনেরো দিনের নামাজ। এভাবে দ্রুত আপনার হিসাবে থাকা কাজা পূরণ হয়ে যাবে। এরপরের মাসে জোহরের এক বছর আদায় করে নিন।
প্রতিদিন যে কয় রাকাত পড়বেন, সাথে সাথে ফোনের নোটে অথবা কাগজে লিখে ফেলুন। যেন কোনোদিন বাদ পড়লে হিসেব মনে থাকে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো- সব মিলিয়ে কত রাকাত কাজা হয়েছে, সেটা অসিয়তনামায় লিখে রাখুন এবং কাছের কাউকে জানিয়ে রাখুন। যেন আপনি হঠাৎ মারা গেলে আপনার সম্পদ থাকলে ফিদইয়া দেওয়া যায়। যদি ফিদইয়া দেওয়ার মতো সম্পদ না থাকে তবে যেহেতু আপনি কাজা শুরু করেছেন, আশা করা যায়, আল্লাহতায়ালা আপনাকে ক্ষমা করে দেবেন।
কাজা নামাজ আদায় করতে হয় নাকি তওবা করলে হয়, এটা নিয়ে কেউ কেউ তর্ক করেন। এখানে তর্কের কিছু নাই। কাজা আদায় করতে হবে।
দেখুন, নামাজ ফরজ হয় ঈমান আনার পর। আর নবীর আমলে কোনো সাহাবি ঈমান আনার পর নামাজ করেছেন, এমন কথা শোনা যায়নি, ইতিহাসে পাওয়া যায়নি। তারা তো কল্পনাও করতে পারতেন না, কেউ মুসলিম হওয়ার পরও এত দীর্ঘদিন নামাজ আদায় না করে থাকবেন। সুতরাং নবীর আমলে নামাজ কাজা আদায়ের কথা নেই, বলে কোনো দলিল না পাওয়ার কথা অর্থহীন। বরং মুসলিম উম্মাহর সকল মুজতাহিদ ইমাম এ ব্যাপারে একমত যে, ফরজ নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করা না হলে সময়ের পরে হলেও তা আদায় করতে হবে।
নামাজ এটা আল্লাহর হক। এখন আপনি যদি মনে করেন, আল্লাহর হক বান্দার হকের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ তবে তওবা করে বসে থাকতে পারেন। এতে যদিও তওবার প্রাথমিক যে শর্ত আছে- প্রথমে হকদারের হক যতটুকু সম্ভব আদায় করা, সেই শর্তই বাদ পড়ে যাবে। আর এতে আপনার তওবাটাও পরিপূর্ণ হবে না, তবুও ইবাদতের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতান্তই ব্যক্তিগত।
নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে কাজা করা মারাত্মক পাপের কাজ। তার পরও কাজা হলে সাথে সাথে পড়ে নেবেন। ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দেওয়া কুফরি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস, ‘ফরজ নামাজ ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করবে না। কেননা, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে তা পরিত্যাগ করে তার ওপর থেকে আল্লাহতায়ালার দায়িত্ব ওঠে যায়।’
একটু ভাবুন! রাব্বে কারিম যাকে প্রত্যাখ্যান করেন তার জীবন কতটা অনর্থক!