মুসলিম উম্মাহর সব পথ মিশে গেছে মিনায়

  • জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মিনার তাঁবুতে বিশ্রাম নিচ্ছেন হাজীরা। ছবি: বার্তা২৪.কম

মিনার তাঁবুতে বিশ্রাম নিচ্ছেন হাজীরা। ছবি: বার্তা২৪.কম

মিনার তাঁবু (সৌদি আরব) থেকে: দৃশ্যত মক্কা-মদিনার সব পথ মিশে গেছে এক পথে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে হজপালনকারীদের গন্তব্য এখন মিনা, সে হিসেবে বলা চলে মুসলিম উম্মাহর গন্তব্য এখন মিনা।

বাস, ট্রেন ও প্রাইভেটকার থেকে শুরু করে হেঁটে হাজীরা যাচ্ছেন মিনায়। শনিবার (স্থানীয় সময় ৭ জিলহজ) সন্ধ্যা থেকে রোববার (৮ জিলহজ) ভোর পর্যন্ত খালি হতে থাকে মক্কার হোটেলগুলো। লাখ লাখ হাজী সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নিয়েছেন মিনায় নিজেদের জন্যে নির্ধারিত তাঁবুতে। মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে গেছে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা।

বিজ্ঞাপন

সমস্বরে তালবিয়া পাঠের আওয়াজে মিনার তাঁবুগুলো এখন মুখরিত। সবার কণ্ঠে এখন একই ধ্বনি, ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নি’মাতা লাকা ওয়ালমুলক।’

অর্থাৎ ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ! আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।’

বিজ্ঞাপন

মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের উপস্থিতির জানান দিয়ে আত্নসমর্পণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য শতাধিক দেশ থেকে আসা হাজীদের পদচারণায় মিনা এখন তাঁবুর শহর।

মিনায় বিভিন্ন দেশের জন্য আলাদা আলাদা তাঁবু। নেপালের হাজীদের জন্য নির্দিষ্ট তাঁবুর পাশে বাংলাদেশের একটি তাঁবুতে গিয়ে দেখা গেলো- গাদাগাদি করে শুয়ে বসে আছেন হাজীরা।

চট্টগ্রাম থেকে আসা হজযাত্রী শাহ আলম জানান, এখানে এক কাত হয়ে শোয়ার মতো জায়গা পেয়েছি। তবে স্বাস্থ্যবান এক সহযাত্রীর কারণে তিনি শুতে না পেরে বসে বসেই তালবিয়া পাঠ করছিলেন।

তার মতে, এটা মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারন দিন দিন হাজীদের সংখ্যা বাড়ছে সে তুলনায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় ক্রমেই জায়গা সংকুচিত হয়ে এসেছে। আর মিনার জায়গা নির্দিষ্ট, এটা বাড়ানোরও কোনো সুযোগ নেই।

"জীবনে অনেক ঘুমিয়েছি, এখানে এসেছি ইবাদত-বন্দেগির জন্য। কষ্ট করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই বড় কথা’- জানান শাহ আলম।

এদিকে হজের সার্বিক প্রস্তুতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে সার্বক্ষণিক হাজীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখতে হজ সেবায় নিয়োজিত বিভিন্ন দল সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

মিনার তাঁবুতে হাজীদের জায়গা স্বল্পতার বিষয়ে ধর্ম সচিব মো. আনিসুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, হাজীদের চাপ বেড়েছে। সে তুলনায় মিনাতে তাঁবুর সংখ্যা বাড়েনি। তবে সৌদি সরকার তাঁবুতে দ্বিতল, তিনতলা খাটের মতো ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলো। আমরা বলেছি, এটাতে আমাদের হাজী সাহেবরা অভ্যস্ত নন। তবে পরিস্থিতি যেমন দেখছি, ভবিষ্যতে হয়তো তারা সে ধরনের ব্যবস্থাপনার দিকেই যাবে।

সোমবার (৯ জিলহজ) সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে হাজীরা রওয়ানা দেবেন আরাফাত ময়দানের উদ্দেশ্যে। লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান সমবেত হবেন সেখানে।

সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত হাজীরা অবস্থান করবেন আরাফাতের ময়দানে। নির্দিষ্ট তাঁবুতে অবস্থানের পাশাপাশি কেউ পাহাড়ে, গাছের নিচে অধবা সুবিধাজনক জায়গায় বসে ইবাদত-বন্দেগি করে দিনটি কাটাবেন।

স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১২টার দিকে মসজিদে নামিরা থেকে হজের খুতবা দেওয়া হবে। এবার খুতবা দেবেন, মসজিদে নববির ইমাম ও খতিব ড. হুসাইন বিন আব্দুল আজিজ আশ শায়খ। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন খুতবা সরাসরি সম্প্রচার করবেন।

হজ পালন করতে এসে যারা সৌদি আরবের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, স্বল্পসময়ের জন্য তাদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতের ময়দানে আনা হবে। কারণ, আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়া হজের অন্যতম ফরজ।

সন্ধ্যা পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের পর হাজীরা রওয়ানা দেবেন ১৩ কিলোমিটার দূরে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে।

মুজদালিফায় রাতযাপন শেষে হাজীরা কেউ ট্রেনে, কেউ হেঁটে, কেউবা গাড়িতে করে মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে মাথার চুল কেটে (ছেঁটে বা ন্যাড়া করে) ইহরাম ত্যাগ করে স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করবেন।