ইতালির সব কারাগারে হবে মসজিদ, বন্দিরা পাবে ধর্মীয় শিক্ষা

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইতালির একটি কারাগারে চলছে নৈতিকতা বিষয়ে আলোচনা, ছবি: সংগৃহীত

ইতালির একটি কারাগারে চলছে নৈতিকতা বিষয়ে আলোচনা, ছবি: সংগৃহীত

চলমান মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বদলে যাচ্ছে বিশ্বের চিত্র। মানুষ ঝুঁকছেন ধর্মের প্রতি। ধর্মীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলার প্রতি বাড়ছে আগ্রহ। একই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের সরকার নাগরিকদের এমন উদ্যোগে সাড়াও দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইতালির সরকার সে দেশের সব কারাগারে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

গ্লোবাল রিলিজিয়াস ল্যান্ডস্কেপের পরসিংখ্যান মতে, ২০১২ সালে ইতালিতে মুসলমানের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার ৩.৭ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

তবে পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে ইতালিতে মুসলমানের হার ক্রমবর্ধমান। তাদের মতে ২০২০ সালে মুসলমানের হার ৪.৯ শতাংশ এবং ২০৫০ সালে তা ৯.৫ শতাংশে উন্নীত হবে।

ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী ইতালিতে বসবাস করলেও ইসলামকে ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না রাষ্ট্রটি। সেখানে মাত্র আটটি স্বীকৃত মসজিদ রয়েছে। ২০০৮ সালের পর বহু মসজিদের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে ইতালিতে ৮০০ নামাজের স্থান রয়েছে। যাকে অনানুষ্ঠানিকভাবে মসজিদ বলা যায়।

বিজ্ঞাপন

ইতালির ইউনিয়ন অফ ইসলামিক কমিউনিটির হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে মুসলিমদের জন্য মাত্র ৭৬টি কবরস্থান রয়েছে।

সম্প্রতি ইতালি সরকার ও ইউনিয়ন অব ইসলামিক কমিটিজ অ্যান্ড অরগানাইজেশন ইন ইতালির (ইউসিওআইআই) মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। যার অধীনে ইমামরা কারাগারের মুসলিম বন্দিদের ধর্মীয় শিক্ষা-দীক্ষা দেওয়া ও নামাজের ইমামতি করার সুযোগ পাবেন।

কারা প্রশাসনের প্রধান বিচারক বার্নার্ডো পেট্রেলিয়া ও ইউসিওআইআইয়ের সভাপতি ইয়াসিন লাফরাম চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।

মে মাসের শেষ সপ্তাহে করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা দেশটির মসজিদ ও প্রার্থনাকক্ষগুলো খুলে দেওয়ার ব্যাপার ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ কোঁতে ও ইউসিওআইআইয়ের প্রতিনিধি দলের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তির আলোকে নতুন সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো।

ইতালির বিচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ইতালির ৬০ হাজার বন্দির মধ্যে ১০ হাজারই বিদেশি। তাদের বেশিরভাগ মরোক্ক, তিউনিশিয়া ও রোমানিয়ার নাগরিক। ইতালির বন্দিদের মধ্যে সাত হাজার ২০০ জন মুসলিম। তাদের জন্য ৯৭ জন ধর্মীয় শিক্ষক রয়েছেন। বন্দির ৪৪ জনের দাবি তারা জেলেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।

বর্তমানে ইতালির মাত্র কয়েকটি জেলে মুসলিম বন্দিদের প্রার্থনার জায়গা রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

ইতালির বিচার মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইতালির কারাগারে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সবার জন্য সঠিকভাবে ধর্মপালনের সুযোগ করে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী ইউসিওআইআই ইতালিতে ইমামের দায়িত্ব পালনকারীদের একটি তালিকা দেবে, যারা সারা দেশের কারাগারের মুসলিম বন্দিদের ধর্মীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন এবং তাদের নামাজের ইমামতি করবেন। কর্মক্ষেত্র নির্বাচনে ইমামদের মতামত নেওয়া হবে।

ইতালীয় মুসলিমদের নেতা লাফরাম আলী বলেন, এটি খুবই স্বস্তিকর বিষয়। নতুন সমঝোতা চুক্তির আলোকে ইতালির সব কারাগারে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা সম্ভব হবে। এটি মূলত পাঁচ বছর আগের একটি প্রজেক্টের সুফল, যার অধীনে ইতালির আটটি কারাগারে শুরু হয়েছিল ধর্ম শিক্ষা দেওয়া।

২০১৫ সালে ইতালির কয়েকটি কারাগারে মুসলিম বন্দিদের নামাজের জন্য কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে একত্রে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের সুযোগ ছিলো না। তবে রমজানের মতো বিশেষ সময়ে কর্তৃপক্ষ জামাতে নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয়।