৩৫৯টি মাদরাসা ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা অনুদান পেল

  • মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কওমি মাদরাসার ক্লাসরুম, ছবি: সংগৃহীত

কওমি মাদরাসার ক্লাসরুম, ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোর মতো কওমি মাদরাসাগুলোও বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন মাদারাসা বন্ধ থাকার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এসব প্রতিষ্ঠানে। আয় কমে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারছেন না। বন্ধ রয়েছে চলমান অনেক মাদরাসার সংস্কার কাজ। জমতে শুরু করেছে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য বিল।

এমতাবস্থায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ মন্ত্রী হিসেবে প্রাপ্য মন্ত্রীর তহবিল থেকে দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। অনুদানপ্রাপ্তির তালিকায় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত ৩৫৯টি প্রসিদ্ধ কওমি ও আলিয়া মাদরাসাসহ হেফজখানা এবং এতিমখানার নাম রয়েছে। তন্মধ্যে ১৪৬টি মাদরাসা সর্বোচ্চ ২ লাখ ও ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। অন্য মাদরাসাগুলোকে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে অবস্থাভেদে ২০-৩৫ হাজার করে বিভিন্ন অংকের টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। মাদরাসার সংস্কারের জন্য দেওয়া অনুদানের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাদরাসা সংলগ্ন মসজিদেও অনুদান দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

১৩ জুন রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। এর আগে তিনি নিজ উদ্যোগে কওমি মাদরাসার ছয়টি বোর্ডসহ হাইয়াতুল উলইয়ার নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অধীনে পরিচালিত এসব মাদরাসা ও মসজিদগুলোর জন্য আর্থিক অনুদান বরাদ্দ করেন। অনুদান প্রাপ্তির তালিকায় আলিয়া মাদরাসাসহ নানা মতাদর্শের ধর্মীয় সংগঠনের অধীনে পরিচালিত মাদরাসা ও মসজিদ রয়েছে। তবে কওমি মাদরাসার সংখ্যা বেশি। কারণ কওমি মাদরাসাগুলো কখনও সরকারি কোনো অনুদান ও সাহায্য-সহযোগিতা পায় না।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ অনুদানপ্রাপ্ত একাধিক মাদরাসার পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালে সরকারি খরচে প্রথমবারের মতো হজযাত্রীদের ধর্মীয় ও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে ৫৮ জন আলেমকে সৌদি আরব পাঠানো হয়। অনুদানপ্রাপ্তির তালিকায় তাদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার প্রসিদ্ধ মাদরাসা অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের আবেদনের ভিত্তিতে। তালিকায় বিভিন্ন বোর্ড, ধর্মীয় সংগঠন ও সংস্থার নেতাদের পরিচালিত মাদরাসা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

করোনা পরিস্থিতিতে এসব অনুদান মাদরাসাগুলোর সংস্কার কিংবা পরিচালনার জন্য বেশ সহায়ক বলেও মন্তব্য করেছেন মুহতামিমরা। কওমি মাদরাসা নেতৃবৃন্দ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এই অনুদান প্রদানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও তার জন্য দোয়া করেছেন।

অনুদানপ্রাপ্তির তালিকায় রয়েছে- চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা, জামিয়া রাহমানিয়া সাতমসজিদ-মোহাম্মদপুর, জামিয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী, ফরিদাবাদ মাদরাসা, লালবাগ মাদ্রাসা, বড় কাটারা মাদরাসা, মারকাযুদ দাওয়াতিল ইসলামিয়া হযরতপুর কেরানীগঞ্জ, জামিয়াতুল আজিজ আল ইসলামিয়া কেরানীগঞ্জ, জামেয়া শরইয়া মালিবাগ, জামিয়াতুস সুন্নাহ শিবচর মাদারীপুর, গওহরডাঙ্গা মাদরাসা গোপালগঞ্জ, ঢালকানগর মাদরাসা, পটিয়া মাদরাসা, জিরি মাদরাসা চট্টগ্রাম, দারুল মাআরিফ মাদরাসা চট্টগ্রাম, জামিয়া ওবায়দিয়া নানুপুর মাদরাসা, চরমোনাই আলীয়া মাদরাসা, শর্ষিনা আলিয়া মাদরাসা, ছারছীনা আলিয়া মাদরাসা, আকবর কমপ্লেক্স মিরপুর, শায়েখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, দারুল উলুম রামপুরা বনশ্রী, আফতাবনগর মাদরাসা, হিলি মাদরাসা দিনাজপুর, গহরপুর মাদরাসা সিলেট, জামিয়া দরগা সিলেট, রেঙ্গা মাদরাসা সিলেট, জামিয়া ইকরা ঢাকা, মদিনাতুল উলুম কামিল মাদরাসা, জামিয়া হোসাইনিয়া কামিল মাদরাসা মহাখালী, বাহিরদিয়া মাদরাসা ফরিদপুর, দারুল উলুম মাদরাসা খুলনা, দারুল উলুম মাদরাসা কুমিল্লা, জামিয়া আরাবিয়া আশরাফিয়া মিরপুর, জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া চট্টগ্রাম, ভবানীপুর মাদরাসা গোপালগঞ্জ, মাখজানুল উলুম মাদরাসা ময়মনসিংহ, লক্ষীপাশা মাদরাসা নড়াইল, হস্তপল্লী শামসুল উলুম মাদরাসা গোপালগঞ্জ, আল জামেয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার কক্সবাজার, জামিল মাদরাসা বগুড়া, পোরশা মাদরাসা নওগাঁ, জামিয়া হুসাইনিয়া আরাবিয়া মেলান্দহ জামালপুর ও কাজুলিয়া মাদরাসা গোপালগঞ্জসহ আরও বেশকিছু মাদরাসা।

সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৩৯৭ কওমি মাদরাসা রয়েছে। তবে কওমি সংশ্লিষ্টদের দাবি, সারা দেশে মাদরাসার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে ২৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। বাংলাদেশে ছয়টি পৃথক আঞ্চলিক বোর্ডের মাধ্যমে এসব মাদরাসা পরিচালিত হয়।

এর আগে করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ঈদুল ফিতরের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই ধাপে সারা দেশের ১৩ হাজার ৯২৯টি মাদরাসায় ১৮ কোটি ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। মাদরাসার ছাত্র সংখ্যা একশ’ বা এর কম হলে ১০ হাজার টাকা, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০১ থেকে ২০০ এর মধ্যে হলে ১৫ হাজার টাকা এবং ২০১ এর অধিক হলে ২০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয় তখন।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতাধীন দেশের দুই লাখ ৪৪ হাজার ৪৩টি মসজিদকে পাঁচ হাজার টাকা করে ১২২ কোটি ২ লাখ ১৫ হাজার টাকার আর্থিক অনুদান দিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলো মূলত স্থানীয় সাহায্য, অনুদান ও শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। দারুল উলুম দেওবন্দের রীতিনীতি অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সরকারি কোনো সহায়তা গ্রহণ করে না এসব মাদরাসা। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হচ্ছে। মৃদু আপত্তি থাকলেও তারা সরকারি অনুদান গ্রহণ করছেন।

১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দেওবন্দ মাদরাসার অনুসরণ-অনুকরণে বাংলাদেশে যে মাদরাসাগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে, তাদের কোনো স্বীকৃতি ছিল না। পরে ২০১৭ সালে বর্তমান সরকার কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বীকৃতির সময়েও আলোচনায় দেওবন্দের আদলে স্বতন্ত্র ও স্বকীয়তা বজায় রাখতে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল কওমি নেতারা।

কওমি মাদরাসাগুলোর ছয়টি শিক্ষা বোর্ডের একটি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)-এর একজন প্রভাবশালী সহ-সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ‘কওমি মাদরাসার সরকারি অনুদান গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা কাউকে বাধাও দিচ্ছি না।’

ধর্ম মন্ত্রণালয় এই অনুদান ছাড়াও নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের অনুকূলে ২ লাখ ৪০ ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে। এ টাকা মসজিদ, মাদারাসা, এতিমখানা, কবরস্থান, ঈদগাহ ও মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা সংস্কার ও নির্মাণখাতে ব্যয় করা হবে। তবে ধর্ম মন্ত্রীর তহবিল থেকে একসঙ্গে এতগুলো মাদরাসায় এভাবে টাকা বরাদ্দের নজির নেই।