৩৫৯টি মাদরাসা ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা অনুদান পেল



মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম
কওমি মাদরাসার ক্লাসরুম, ছবি: সংগৃহীত

কওমি মাদরাসার ক্লাসরুম, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলোর মতো কওমি মাদরাসাগুলোও বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন মাদারাসা বন্ধ থাকার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে এসব প্রতিষ্ঠানে। আয় কমে যাওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারছেন না। বন্ধ রয়েছে চলমান অনেক মাদরাসার সংস্কার কাজ। জমতে শুরু করেছে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য বিল।

এমতাবস্থায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ মন্ত্রী হিসেবে প্রাপ্য মন্ত্রীর তহবিল থেকে দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন। অনুদানপ্রাপ্তির তালিকায় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত ৩৫৯টি প্রসিদ্ধ কওমি ও আলিয়া মাদরাসাসহ হেফজখানা এবং এতিমখানার নাম রয়েছে। তন্মধ্যে ১৪৬টি মাদরাসা সর্বোচ্চ ২ লাখ ও ১ লাখ টাকা পেয়েছেন। অন্য মাদরাসাগুলোকে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে অবস্থাভেদে ২০-৩৫ হাজার করে বিভিন্ন অংকের টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। মাদরাসার সংস্কারের জন্য দেওয়া অনুদানের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাদরাসা সংলগ্ন মসজিদেও অনুদান দেওয়া হয়েছে।

১৩ জুন রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মো. আবদুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। এর আগে তিনি নিজ উদ্যোগে কওমি মাদরাসার ছয়টি বোর্ডসহ হাইয়াতুল উলইয়ার নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অধীনে পরিচালিত এসব মাদরাসা ও মসজিদগুলোর জন্য আর্থিক অনুদান বরাদ্দ করেন। অনুদান প্রাপ্তির তালিকায় আলিয়া মাদরাসাসহ নানা মতাদর্শের ধর্মীয় সংগঠনের অধীনে পরিচালিত মাদরাসা ও মসজিদ রয়েছে। তবে কওমি মাদরাসার সংখ্যা বেশি। কারণ কওমি মাদরাসাগুলো কখনও সরকারি কোনো অনুদান ও সাহায্য-সহযোগিতা পায় না।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ অনুদানপ্রাপ্ত একাধিক মাদরাসার পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালে সরকারি খরচে প্রথমবারের মতো হজযাত্রীদের ধর্মীয় ও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে ৫৮ জন আলেমকে সৌদি আরব পাঠানো হয়। অনুদানপ্রাপ্তির তালিকায় তাদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার প্রসিদ্ধ মাদরাসা অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের আবেদনের ভিত্তিতে। তালিকায় বিভিন্ন বোর্ড, ধর্মীয় সংগঠন ও সংস্থার নেতাদের পরিচালিত মাদরাসা রয়েছে।

করোনা পরিস্থিতিতে এসব অনুদান মাদরাসাগুলোর সংস্কার কিংবা পরিচালনার জন্য বেশ সহায়ক বলেও মন্তব্য করেছেন মুহতামিমরা। কওমি মাদরাসা নেতৃবৃন্দ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এই অনুদান প্রদানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও তার জন্য দোয়া করেছেন।

অনুদানপ্রাপ্তির তালিকায় রয়েছে- চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা, জামিয়া রাহমানিয়া সাতমসজিদ-মোহাম্মদপুর, জামিয়া মাদানিয়া যাত্রাবাড়ী, ফরিদাবাদ মাদরাসা, লালবাগ মাদ্রাসা, বড় কাটারা মাদরাসা, মারকাযুদ দাওয়াতিল ইসলামিয়া হযরতপুর কেরানীগঞ্জ, জামিয়াতুল আজিজ আল ইসলামিয়া কেরানীগঞ্জ, জামেয়া শরইয়া মালিবাগ, জামিয়াতুস সুন্নাহ শিবচর মাদারীপুর, গওহরডাঙ্গা মাদরাসা গোপালগঞ্জ, ঢালকানগর মাদরাসা, পটিয়া মাদরাসা, জিরি মাদরাসা চট্টগ্রাম, দারুল মাআরিফ মাদরাসা চট্টগ্রাম, জামিয়া ওবায়দিয়া নানুপুর মাদরাসা, চরমোনাই আলীয়া মাদরাসা, শর্ষিনা আলিয়া মাদরাসা, ছারছীনা আলিয়া মাদরাসা, আকবর কমপ্লেক্স মিরপুর, শায়েখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, দারুল উলুম রামপুরা বনশ্রী, আফতাবনগর মাদরাসা, হিলি মাদরাসা দিনাজপুর, গহরপুর মাদরাসা সিলেট, জামিয়া দরগা সিলেট, রেঙ্গা মাদরাসা সিলেট, জামিয়া ইকরা ঢাকা, মদিনাতুল উলুম কামিল মাদরাসা, জামিয়া হোসাইনিয়া কামিল মাদরাসা মহাখালী, বাহিরদিয়া মাদরাসা ফরিদপুর, দারুল উলুম মাদরাসা খুলনা, দারুল উলুম মাদরাসা কুমিল্লা, জামিয়া আরাবিয়া আশরাফিয়া মিরপুর, জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া চট্টগ্রাম, ভবানীপুর মাদরাসা গোপালগঞ্জ, মাখজানুল উলুম মাদরাসা ময়মনসিংহ, লক্ষীপাশা মাদরাসা নড়াইল, হস্তপল্লী শামসুল উলুম মাদরাসা গোপালগঞ্জ, আল জামেয়াতুল ইমদাদিয়া কিশোরগঞ্জ, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার কক্সবাজার, জামিল মাদরাসা বগুড়া, পোরশা মাদরাসা নওগাঁ, জামিয়া হুসাইনিয়া আরাবিয়া মেলান্দহ জামালপুর ও কাজুলিয়া মাদরাসা গোপালগঞ্জসহ আরও বেশকিছু মাদরাসা।

সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৩৯৭ কওমি মাদরাসা রয়েছে। তবে কওমি সংশ্লিষ্টদের দাবি, সারা দেশে মাদরাসার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে ২৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। বাংলাদেশে ছয়টি পৃথক আঞ্চলিক বোর্ডের মাধ্যমে এসব মাদরাসা পরিচালিত হয়।

এর আগে করোনা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ঈদুল ফিতরের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই ধাপে সারা দেশের ১৩ হাজার ৯২৯টি মাদরাসায় ১৮ কোটি ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। মাদরাসার ছাত্র সংখ্যা একশ’ বা এর কম হলে ১০ হাজার টাকা, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০১ থেকে ২০০ এর মধ্যে হলে ১৫ হাজার টাকা এবং ২০১ এর অধিক হলে ২০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয় তখন।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতাধীন দেশের দুই লাখ ৪৪ হাজার ৪৩টি মসজিদকে পাঁচ হাজার টাকা করে ১২২ কোটি ২ লাখ ১৫ হাজার টাকার আর্থিক অনুদান দিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলো মূলত স্থানীয় সাহায্য, অনুদান ও শিক্ষার্থীদের বেতনের ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। দারুল উলুম দেওবন্দের রীতিনীতি অনুসরণ করে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সরকারি কোনো সহায়তা গ্রহণ করে না এসব মাদরাসা। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হচ্ছে। মৃদু আপত্তি থাকলেও তারা সরকারি অনুদান গ্রহণ করছেন।

১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত দেওবন্দ মাদরাসার অনুসরণ-অনুকরণে বাংলাদেশে যে মাদরাসাগুলো পরিচালিত হয়ে আসছে, তাদের কোনো স্বীকৃতি ছিল না। পরে ২০১৭ সালে বর্তমান সরকার কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বীকৃতির সময়েও আলোচনায় দেওবন্দের আদলে স্বতন্ত্র ও স্বকীয়তা বজায় রাখতে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল কওমি নেতারা।

কওমি মাদরাসাগুলোর ছয়টি শিক্ষা বোর্ডের একটি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)-এর একজন প্রভাবশালী সহ-সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ‘কওমি মাদরাসার সরকারি অনুদান গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা কাউকে বাধাও দিচ্ছি না।’

ধর্ম মন্ত্রণালয় এই অনুদান ছাড়াও নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের অনুকূলে ২ লাখ ৪০ ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের জন্য ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছে। এ টাকা মসজিদ, মাদারাসা, এতিমখানা, কবরস্থান, ঈদগাহ ও মন্দিরসহ বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা সংস্কার ও নির্মাণখাতে ব্যয় করা হবে। তবে ধর্ম মন্ত্রীর তহবিল থেকে একসঙ্গে এতগুলো মাদরাসায় এভাবে টাকা বরাদ্দের নজির নেই।

দুই দশক ধরে কাবা প্রাঙ্গণে শ্রীলঙ্কান এক দম্পতি



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

আশরাফ ও ফাতেমা দম্পতি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রায় দুই দশক ধরে মক্কার মসজিদে হারামে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার এক দম্পতি। পবিত্র এ মসজিদে আগত হজ ও উমরাযাত্রী এবং মুসল্লিদের সেবায় তারা কাজ করছেন। সম্প্রতি সৌদি গেজেট তাদের নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সৌদি আরবের পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে ১৪ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছে। তাদের মধ্যে সৌভাগ্যবান এক দম্পতি হলেন শ্রীলঙ্কার আশরাফ ও ফাতেমা। ইসলামের এ পণ্যভূমিতে দীর্ঘকাল সেবা দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।

মক্কার মসজিদে হারামে কাজ করতে গিয়ে দীর্ঘ এ সময়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হন তিনি। জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি একটি উত্তম কাজের সুযোগ পাওয়া তারা মহান আল্লাহর প্রশংসা করেন।

সম্মানিত এ স্থানে আসার গল্প শুরু হয় প্রায় বিশ বছর আগে। তখন ফাতেমা মসজিদে হারামে কাজের সুযোগ পায়। তিনি নারীদের নামাজের স্থানে কাজ করতেন। সেখানে ছড়িয়ে থাকা জায়নামাজগুলো গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব ছিল তার।

কয়েক বছর পর তিনি নিজের স্বামীকেও মসজিদে হারামের দায়িত্বশীল কর্মী হিসেবে নিয়ে আসার চেষ্টা করেন। প্রেসিডেন্সি বিভাগ তার আবেদনকে অনুমোদন দেয়।

ফাতেমা জানান, মসজিদে হারামে তিনি চার বছর একাকী দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি পরিচালনা পর্ষদের কাছে আবেদন জানান, যেন তার স্বামী আশরাফকে হারামাইনের কর্মী হিসেবে আনা হয়। এদিকে এতদিন যাবত শ্রীলঙ্কায় কাজ করতেন আশরাফ।

প্রথম পর্যায়ে অনিচ্ছুক থাকলেও পরবর্তীতে মক্কায় চলে আসেন আশরাফ। পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে এখন মুসল্লিদের সেবা দিয়ে আনন্দবোধ করছেন তিনি।

আশরাফ বলেন, ‘পবিত্র গ্র্যান্ড মসজিদে দায়িত্ব পালন করা আমার জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। ফাতেমা ও আমি একসঙ্গে কাজ করি এবং একেঅপরকে সহযোগিতা করি। প্রতি সপ্তাহে আমরা উমরা পালন করি।’

মক্কার মতো সম্মানিত স্থানে দায়িত্ব পালন তাদের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। মসজিদে হারামে কাজ করতে পেরে নিজেদেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শ্রীলঙ্কার এ দম্পতি।

;

যেভাবে দরুদ-সালাম পৌঁছে নবী কারিম (সা.)-এর কাছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর রওজা মোবারক, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করা একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। তার নাম শুনলে দরুদ পাঠ করা তার প্রতি ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন। উম্মতের পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি শোনেন ও জবাব দেন।

দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশনা
নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির মতো নবী কারিম (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করার নির্দেশনা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহ রাসুলের প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর প্রতি রহমত নাজিল করেন এবং তার ফেরেশতারাও নবীর জন্য রহমতের দোয়া করে। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর প্রতি রহমতের দোয়া করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ -সুরা আহযাব : ৫৬

দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ-সালাম পাঠের ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। দুনিয়া ও আখেরাতে দরুদ-সালাম পাঠকারীর জন্য সৌভাগ্যের সব দুয়ার খুলে যায়।

দরুদ-সালাম পাঠের বিভিন্ন মর্যাদার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ প্রেরণ করে, মহান আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। -সহিহ মুসলিম : ৪০৮

দূরবর্তীদের দরুদ-সালাম পৌঁছানো হয়
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যেকোনো উম্মত, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে তার প্রতি দরুদ-সালাম পাঠ করলে ফেরেশতারা তা তার কাছে পৌঁছে দেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর নির্ধারিত একদল ফেরেশতা রয়েছেন, যারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ান এবং আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছে দেন।’ -সহিহ ইবনে হিব্বান : ৯১৪

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করো না। আর আমার কবরে উৎসব করো না। আমার ওপর দরুদ পাঠাও। কেননা তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছবে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪২

নিকটবর্তীদের দরুদ-সালাম শোনেন
নবী কারিম (সা.)-এর কবরের পাশ থেকে দরুদ-সালাম পেশ করলে তিনি তা শোনেন। মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে নবীদের দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তো মরণশীল এবং তারাও মরণশীল।’ -সুরা জুমার : ৩০

তবে মৃত্যুর পর তারা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেন। নবীদের কবরের জীবনের বৈশিষ্ট্য হলো- কবরে সাধারণ মুমিন ও শহীদদের জীবন থেকে নবীদের জীবন পূর্ণাঙ্গ ও উন্নত। এ ছাড়া দুনিয়ার জীবনের সঙ্গে কবরের জীবনের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। যেমন- কবরে তাদের দেহ সুরক্ষিত রয়েছে। -সুনানে আবু দাউদ : ১০৪৭

তারা কবরে নামাজ আদায় করেন। -মুসনাদে আবু ইয়ালা : ৩৪২৫

হজরত মুসা (আ.) তার কবরে স্বশরীরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার বিষয়টি নবী (সা.) উল্লেখ করেছেন। -সহিহ মুসলিম : ২৩৪৭

আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা বিশেষ রিজিকপ্রাপ্ত। -ইবনে মাজাহ : ১৬৩৭

তাদের কবরের কাছে গিয়ে দরুদ-সালাম পেশ করলে তারা তা সরাসরি শোনেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার কবরের পাশে আমার ওপর দরুদ পেশ করে, আমি তা শুনি। আর যে দূরে থেকে আমার ওপর দরুদ পড়ে, তা আমার কাছে পৌঁছানো হয়।’ -ফাতহুল বারি : ৬/৬০৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সালামের জবাব দেন
কেউ নবী কারিম (সা.)-কে সালাম দিলে তিনি উত্তর দেন। দিনরাত সর্বাবস্থায়ই কবরের কাছ থেকে ও দূর থেকে নবী কারিম (সা.)-এর ওপর সালাত ও সালাম অব্যাহত থাকে। সারাক্ষণ কেউ না কেউ কোনো না কোনোভাবে দরুদ-সালাম পেশ করতে থাকে, আর নবী কারিম (সা.) এর উত্তর দিতে থাকেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি যখন আমার ওপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন। ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।’ -সুনানে আবু দাউদ : ২০৪১

বস্তুত মহান আল্লাহ নবী কারিম (সা.)-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের কল্যাণে তিনি সদা ব্যাকুল থাকতেন। এই উম্মতের ওপর তার অবারিত অনুগ্রহ রয়েছে। এর অন্যতম দাবি হলো- তার প্রতি দরুদ-সালামের নাজরানা পেশ করা। তার প্রতি পঠিত দরুদ-সালাম তার কাছে পৌঁছে যায়।

;

মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চাইল শ্রীলঙ্কা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইফতার মাহফিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ছবি: সংগৃহীত

ইফতার মাহফিলে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

করোনাভাইরাস মহামারির সময় মৃতদের লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ায় মুসলিমদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা।

এ ছাড়া ক্ষমা চাওয়া সংক্রান্ত একটি যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছে শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভা।

করোনা মহামারির সময় মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতির বিরুদ্ধে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুসলিমদের লাশ পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি।

বুধবার (২৪ জুলাই) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মুসলিমদের লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পোড়ানোর নির্দেশ দেওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বীপ দেশটির মুসলিম সংখ্যালঘুদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে শ্রীলঙ্কার সরকার। যদিও করোনায় মৃতদের লাশ মুসলিম রীতিতে দাফন করাকে নিরাপদ বলে জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এছাড়া মৃতদের লাশ ইসলামিক রীতিতে দাফন নিরাপদ বলে বিশেষজ্ঞরাও মতামত দিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন বাধ্যতামূলকভাবে লাশ পুড়িয়ে ফেলার নীতির বিষয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা’ করেছে দেশের মন্ত্রিসভা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মহামারির সময় লাশ বাধ্যতামূলকভাবে পুড়িয়ে ফেলার বিষয়ে সরকারের এই নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সকল সম্প্রদায়ের কাছে ‘সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে’ মন্ত্রিসভার সদস্যদের একটি গ্রুপ যৌথ প্রস্তাবও অনুমোদন করেছেন।

করোনা মহামারির সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন গোটাবায়া রাজাপাকসে। তার সরকারই সেসময় এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শ্রীলঙ্কায় একটি নতুন আইন করা হবে হবে যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে মুসলিম বা অন্যকোনো সম্প্রদায়ের মানুষের দাফন বা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার রীতিনীতি লঙ্ঘন না করা নিশ্চিত করার নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।

ঐতিহ্যগতভাবে, মুসলমানরা মুসলিমদের লাশকে কেবলার দিকে মুখ করে দাফন করে থাকে। আর শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের মরদেহ হিন্দুদের মতো সাধারণত দাহ করা হয়।

শ্রীলঙ্কার মুসলিম প্রতিনিধিরা সরকারের এই ক্ষমা প্রার্থনাকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু তারা বলেছে, তাদের সমগ্র সম্প্রদায় এই ঘটনার আঘাত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপ দেশের ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ হচ্ছে মুসলিম জনগোষ্ঠী।

;

ব্রিটিশ রাজনীতিতে মুসলমানদের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো আইন ও বিচার মন্ত্রী হয়েছেন একজন মুসলিম নারী, তিনি কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো আইন ও বিচার মন্ত্রী হয়েছেন একজন মুসলিম নারী, তিনি কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ক্রমবর্ধমান ইসলামফোবিয়া সত্ত্বেও যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে রেকর্ডসংখ্যক মুসলিম এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এবারই প্রথমবারের মতো দেশটির মন্ত্রিসভায় আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন একজন মুসলিম নারী। শাবানা মাহমুদ নামের ওই মন্ত্রী পবিত্র কোরআন হাতে শপথ নিয়েছেন।

এ ছাড়া আরও দুই মুসলিম নারী মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। তাদের অন্যতম হলেন- বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী। তিনি গৃহায়ণ, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি হয়েছেন। এর আগে যুক্তরাজ্যের ‘সিটি মিনিস্টার’ হন টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ।

মুসলিম নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অফ কমন্সে ২০১৯ সালে ১৯ জন এমপি ছিলেন। এবারের নির্বাচনে ২৫ জন মুসলিম নির্বাচিত হয়েছে। ব্রিটেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মুসলিম এমপি এবারই নির্বাচিত হলেন।

নির্বাচিতদের মধ্যে ১৮ জন লেবার পার্টির, চারজন স্বতন্ত্র, দুজন কনজারভেটিভ পার্টির এবং একজন লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের।

মুসলিম নেটওয়ার্কের দাবি, গাজার প্রতি মুসলিম ভোটারদের সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করেছে। ফলে চারজন মুসলিমসহ পাঁচটি স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জয় পেয়েছেন।

তারা মোট ৬৫০ এমপির প্রায় ৪ শতাংশ। তবে মুসলিমরা যেহেতু ব্রিটেনের জনসংখ্যার ৬.৫ শতাংশ, তাই হাউস অফ কমন্সে মুসলিমদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আরও ১৭ জন এমপি দরকার।

নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে ব্রিটেনের ইসলামি মানবাধিকার কমিশনের প্রধান মাসুদ শাজারেহ বলেছেন, ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে মুসলমানরা প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ব্রিটেনে বেশি সংখ্যায় মুসলমানদের যাওয়ার প্রবণতা শুরু হয় প্রায় এক শতাব্দী আগে। বর্তমানে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় তাতে দেখা যাচ্ছে, ব্রিটেনে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লাখ।

মাসুদ শাজারেহ সম্প্রতি ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটের প্রভাবের কথা তুলে ধরে বলেন, ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনে একটা কার্যকর শক্তিতে পরিণত হয়েছে মুসলমানরা। এটাকে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহারের জন্য কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে মুসলমানদের অসন্তোষের কারণে ব্রিটিশ লেবার পার্টি কয়েকটি আসন হারিয়েছে। এই প্রভাব ব্রিটিশ রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

ব্রিটিশ মুসলিম কাউন্সিলের মতো আরও সংগঠন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এ ধরণের সংগঠনের উপস্থিতি মুসলমানদের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে তা মানুষের কাছে উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি করে।

গত ৪ জুলাই সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে লেবার পার্টি পাঁচ বছরের জন্য সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। তবে গাজায় নির্বিচার গণহত্যার ব্যাপারে লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমারের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ছিল মুসলমানেরা। তারা নির্বাচনে নিজেদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।

ব্রিটিশ জনগণ দেশটির খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, নিত্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং দখলদার ইসরায়েলের অপরাধযজ্ঞের প্রতি সরকারের সমর্থনের প্রতিবাদে ভোট দিয়েছে। এর অর্থ হলো, লেবার পার্টি বিজয় পেলেও সেটা তার নিজের নীতির কারণে পায়নি বরং বিরোধী দলের অপছন্দনীয় কিছু কাজ ও নীতির কারণে মানুষ বিদ্যমান বিকল্প ধারাটিকে বেছে নিয়েছে।

;