ভারতে সস্তার ইরানি আপেলের জেরে বাজার হারাচ্ছে কাশ্মির
ভারতে কাশ্মিরি আপেলের জনপ্রিয়তায় ভাগ বসাচ্ছে ইরান থেকে আসা সস্তার আপেল। যার ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কাশ্মিরের আপেল চাষীরা। মৌসুমে তাদের লাভের হার কমছে। সস্তা দরে বেঁচে দিতে হচ্ছে কাশ্মিরের জনপ্রিয় এই ফলটিকে। সেখানকার বহু কৃষকের এখন মাথায় হাত।
গতবছর গ্রীষ্মের সময় বারামুলা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আকবর তার বাগানে উৎপাদিত আপেলের বড় অংশ হিমঘরে রেখেছিলেন। শীতে মোটা টাকায় তা বিক্রি করার ইচ্ছে ছিল আকবরের। তবে নতুন বছর পড়তেই তার প্রত্যাশা শেষ। কারণ ইরান থেকে আসা আপেল ততদিনে ভারতের বাজার দখল করে বসেছে। তাই দাম পাওয়া তো দূরের কথা হিমঘরের ভাড়া মেটাতে মোটা অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে আকবরের। লাভ তো দূরের বিষয় সেই হিমঘরের টাকা উঠবে কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে দুশ্চিন্তা।
তিনি জানিয়েছেন, পাঁচ হাজার বাক্স আপেল হিমঘরে রেখেছিলাম। সেগুলিসহ মোট আট হাজার বাক্স আপেল দিল্লিতে পাঠানোর প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু দাম কমে যাওয়ায় তা আর পাঠাতে পারছি না। এ বিষয় কাশ্মিরি ফল উৎপাদক ও বিক্রেতাদের সংগঠনের মতে, ইরানি আপেল ভারতের বাজারে চলে আসায় গত দু’মাসে কাশ্মিরি আপেলের দাম প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।
সেখানকার ফল বিক্রেতা সংগঠনের সভাপতি বশির আহমেদ বশির জানিয়েছেন, গত বছর অক্টোবরে সাধারণ মানের এক বাক্স আপেলের দাম ছিল ১ হাজার ২শ রুপি থেকে ১ হাজার ৩শ রুপি। সেই আপেল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে ৭শ রুপি দরে। তিনি আরও জানান, ইরানি আপেল ভারতের বাজারে আমদানি করতে শুল্ক লাগে না। সেই কারণে বিপুল পরিমাণ আপেল ঢুকছে ভারতে। বশির বলেন, আমরা ইতিমধ্যে কাশ্মিরের রাজ্যপাল -সহ স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার আবেদন করেছি। কারণ কাশ্মিরের আপেল এ অঞ্চলের অন্যতম বড় শিল্প। এখানকার বড় অংশের মানুষ এই জীবিকা সাথে জড়িয়ে রয়েছেন।
তাই সংগঠনের তরফ থেকে ভারতে ইরানি আপেলের ‘অবৈধ বিক্রি’তে লাগাম টানার দাবি জানানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, ইরানের আপেলকে প্রথমে আফগানিস্তানের আপেল বলে ট্যাগ দেওয়া হয়। তারপর সেই আপেল পাকিস্তানের ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে। সেই কারণে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ইরানি ব্যবসায়ীরা আপেল রফতানির জন্য আফগানিস্তানের পথ বেছে নিয়েছে। ফলে ভারতসহ কলকাতার বাজারে ৪০ রুপি কিলো দরে পাওয়া যাচ্ছে ইরানি আপেল। অথচ সবরকম ট্যাক্স দিয়ে বাজারে কাশ্মিরি আপেলের দাম কিলো প্রতি পড়ছে ৬০ রুপি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, এর ফলে তাদের ট্রাক প্রতি এক থেকে দু’লাখ রুপির বেশি ক্ষতি হচ্ছে। কাশ্মিরের প্রায় সাত লাখ পরিবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই জীবিকার সাথে সঙ্গে জড়িত। তাদের কথা ভেবে সমস্ত বিষয়টি বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রথমস্তরে স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন, তাতে কাজ না হলে দিল্লির কেন্দ্রিয় সরকারকে এ বিষয়ে জানাবেন বলে সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।