ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মনিটরে পর্নো ভিডিও প্রচারকে দুঃখজনক, আপত্তিকর ও গভীর উদ্বেগের বলে মন্তব্য করে এর কারণ অনুসন্ধান নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদেশে আগামী একমাসের মধ্যে জড়িতদের চিহ্নিত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) কে নির্দেশ দিয়েছেন।
রোববার (৫ জানুয়ারি) ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তাজুল ইসলাম সোহাগ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেন।
আদালতের স্টেনোগ্রাফার জালিজ মাহমুদ জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ (১) সি ধারায় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন স্বপ্রণোদিতভাবে আমলে নিয়ে আদালত একটি মিস মামলা রেকর্ড করেন। একই সঙ্গে প্রকাশিত সংবাদ সরেজমিন তদন্তপূর্বক ভিডিও প্রচারের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও), বাংলাদেশ রেলওয়ে, ঢাকাকে নির্দেশ দেন।
তদন্ত কাজে সায়তার জন্য অফিসার ইন চার্জ, ঢাকা রেলওয়ে থানাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় রেলস্টেশন ও রেলওয়ে জংশন। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী রেলস্টেশন। এই স্টেশনটি প্রতিনিয়ত লাখো মানুষের পদচারণার মুখরিত থাকে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষ রাজধানীসহ বিভিন্ন গন্তব্যস্থলে পৌঁছায়, কোমলমতি শিশুসহ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা নির্বিশেষে সকলেই সাময়িক সময়ের জন্য এ স্টেশনে অবস্থান করে থাকেন। স্টেশনের বিভিন্ন জায়গায় বেশ বড় আকারে ডিজিটাল ডিসপ্লে বা বোর্ড রয়েছে যেটিতে বিভিন্ন আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেনের সময়সূচি প্রকাশ ও বাণিজ্যিক প্রচারণা চালানো হয়। উক্ত বাণিজ্যিক প্রচারণা নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ করার জন্য একজন বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ওই বিভাগে নিযুক্ত থাকেন।
কিন্তু কমলাপুর রেলস্টেশনের মত স্পর্শকাতর জায়গায় পর্নো ভিডিও প্রচারিত হওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক, আপত্তিকর ও গভীর উদ্বেগের। উক্ত বিষয়টি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাসহ ব্যর্থতা প্রকাশ করে। এতে আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটসহ দেশে-বিদেশে অবস্থানরত ও বসবাসরত বিভিন্ন মানুষের নিকট ভুল বার্তা প্রেরণ করে। তদুপরি, অদ্যাবধি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি কোন ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে মর্মে পরিলক্ষিত হয় না।
এটি স্পষ্ট যে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অপরাধের শামিল অপ্রীতিকর ও আপত্তিকর যে ঘটনা ঘটেছে সেটি একটি অপরাধ এবং উক্ত অপরাধে জড়িত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা আবশ্যক মর্মে গোচরীভূত হয়। কিন্তু অদ্যাবধি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো অপরাধীকে সনাক্ত করতে পারেননি বা উক্ত ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেননি। যার ফলে উক্ত বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ একজন ম্যাজিস্ট্রেট কোন পুলিশ অফিসার ব্যতিত অন্য কোথাও হতে প্রাপ্ত তথ্য অথবা নিজস্ব জ্ঞান অথবা সন্দেহের ভিত্তিতে যে কোনো অপরাধ আমলে নিতে পারেন। ফলে, সার্বিক বিবেচনায় বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদটি আমলযোগ্য অপরাধের সংবাদ হিসেবে বিচারিক বিবেচনায় গ্রহণ করা হলো। মিডিয়ায় প্রকাশিত ও প্রচারিত সংবাদের সত্যতা নিরুপণের জন্য অনুসন্ধান হওয়া আবশ্যক মর্মে প্রতীয়মান হয়।