অর্থ আত্মসাৎ মামলায় বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বিচার শুরু
ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ৩২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলার বিচার শুরু হয়েছে রাষ্ট্র বিরোধী ষড়যন্ত্রের মামলায় ছয় বছর ধরে কারাবন্দী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর। তার সঙ্গে একই মামলায় বিচার হবে আসলামের স্ত্রী ও দুই ভাইসহ আরও দুজনের।
বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আব্দুল মজিদ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
আদালত ২ মার্চ থেকে এই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করেছেন। এ সময় আসলাম চৌধুরীকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হলেও অন্য পাঁচ আসামি পলাতক ছিলেন।
আদালত যাদের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন তারা হলেন, রাইজিং স্টিল মিলের অন্যতম পরিচালক আসলাম চৌধুরী, তার ভাই ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসেন চৌধুরী ও পরিচালক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, আসলামের স্ত্রী ও চেয়ারম্যান জামিলা নাজনীন মাওলা, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (জিএম, হিসাব ও অডিট) ও এবি ব্যাংকের সাবেক উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি, হেড অব ক্রেডিট) বদরুল হক খান এবং এবি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফজলুর রহমান।
দুর্নীতি দমন কমিশনের কৌঁসুলি কাজী ছানোয়ার হোসেন লাভলু বলেন, '৩২৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলাটি ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট দুদক চার্জশিট দিলেও বিচার শুরুর বিষয়টি আসামিদের আপিলে আটকে যায়। পরে রাষ্ট্র পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে আবেদন করলে সেই বাধা কাটে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে আসলাম চৌধুরীসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়েছে। ২ মার্চ থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত।'
তিনি আরও বলেন, 'আদালতে হাজির থাকা আসলাম চৌধুরী এই মামলায় জামিনে থাকলেও বিচার শুরুর পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
তবে জামিন বাতিল করা হয়েছে তার স্ত্রীর। এছাড়া আগে থেকে পলাতক রয়েছেন তার দুই ভাই ও অন্য দুই আসামি।'
আদালত সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের রাইজিং স্টিল লিমিটেড পুরাতন জাহাজ ক্রয়ের জন্য ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে তিনটি ঋণপত্রের (এলাসি) বিপরীতে এবি ব্যাংক চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৩২৫ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার ৯৫৫ টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করেননি।
রাইজিং স্টার লিমিটেড ওই শাখায় প্রথম এলসি খোলে ২০০৮ সালে। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৪০ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা দামে পুরনো জাহাজ আমদানি করে তা বিক্রি করলেও ব্যাংকের ঋণ পুরোটা পরিশোধ করেনি। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংক ২০ কোটি ৮২ লাখ ৯৩ হাজার টাকা পাওনা থাকার পরেও ২০১১ সালে আরও একটি এলসির মাধ্যমে একটি জাহাজ আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়। এই এলসির বিপরীতেও প্রতিষ্ঠানটি ২৬ কোটি ৪৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকার ঋণ পরিশোধ করেনি।
২০১২ সালে একই প্রতিষ্ঠান ১৬৫ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার ৬০০ টাকা ও ২০১৩ সালে ১৩৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৬ হাজার টাকার দুটি এলসির বিপরীতে আরও দুটি জাহাজ আমদানি করে তা বাজারে বিক্রি করলেও কোনো টাকা পরিশোধ করেনি। ঋণের বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি ১৭ কোটি ৪০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা মূল্যের সম্পত্তির দুটি দলিল ও তিনটি চেক জামানত হিসেবে দিয়েছিল। জামিনদার ছিলেন আসলাম চৌধুরী নিজেই।
আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় দণ্ডিবিধির ৪০৯, ৪২০, ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় দুদকের তৎকালীন উপ-সহকারি পরিচালক মানিকলাল দাশ মামলাটি করেন। ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয়।
২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন আসলাম চৌধুরী। ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন লিকুদ পাটির সদস্য মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তার বিরুদ্ধে ‘বাংলাদেশের সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করার’ অভিযোগ আনা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ-নাশকতাসহ আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মোট ২৬টি মামলা আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে চারটি মামলায় তার বিচার শুরু হয়েছে।