রায়ের কথা জানতেনই না নিহত মডেল তিন্নির বাবা

  • মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মডেল ও অভিনয় শিল্পী সৈয়দা তানিয়া মাহবুব ওরফে তিন্নি (২৪) হত্যা মামলার রায়ের খবর জানতেনই না তিন্নির বাবা মামলার বাদী সৈয়দ মাহবুব করিম। রায়ে অভি খালাস পাওয়ার কথাও জেনেছেন এক সাংবাদিকের কাছে।

তিন্নি খুনের ২২ বছর পর মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকার ২য় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোছা. শাহীনুর আক্তার তিন্নি হত্যার রায় ঘোষণা করেন। আসামি অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীত প্রমান করতে না পারায় অভিকে খালাস দেওয়া হলো মর্মে রায়ে উল্লেখ করেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

রায় ঘোষণার আগে চার্জশীটের ৪১ সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।

রায়ের পর তিন্নির বাবা সৈয়দ মাহবুব করিমের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আজ রায় তা আমি জানতামই না। আমাকে কেউ জানায়নি। রায় হওয়ার পর এক সাংবাদিক তাকে ফোন করে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি রায়ের কথা জানতে পারেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি অভিযোগ করে বলেন, তিন্নি খুনের পর অভিকে বিদেশ পালাতে সহায়তা করে তৎকালীন সরকার। এরপর অভিকে দেখিয়ে দেখিয়ে মামলায় এতোদিন পার করলো। এখন রায় প্রচার হলো, অভি খালাস। আমার মেয়েকে যে খুন হয়েছে তা তো সত্য। তাহলে আমার মেয়ের খুনি কে? তা জানার অধিকার কি আমার নাই। আমার বয়স ৭৮। শরীরে দু দু’বার অপারেশন হয়েছে। শরীর ও মাথা আগের মতো কাজ করছে না। তাহলে কি আমার মেয়ে হত্যার বিচার পাব না।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমার বয়স হয়েছে। আমি আর দৌড়াদৌড়ি করতে পারবো না। আমার বড় ভাই সৈয়দ রেজাউল করিম তার অবস্থা আরও খারাপ। তিন্নির আরেক বোন তার মাকে নিয়ে আমেরিকার সানফ্রানসিস্কোতে থাকে। আবার নতুন করে দৌড়াদৌড়ি করার কেউ নাই। মৃত্যুর আগে আমার মেয়ের খুনিকে দেখে যেতে পারবো না।

২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাতে খুন হন মডেল তিন্নি। এরপর থেকেই পলাতক হন অভি। পলাতক থেকেই বিদেশ পাড়ি জমান তিনি। অভি কানাডায় অবস্থান করছেন মর্মে আদালতের নথীপত্রে উল্লেখ আছে।

সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পিপি সৈয়দ আবু জাফর রিজভী বার্তা২৪.কমকে বলেন, আদালতের এ রায়ে তিনি অসন্তুস্ট। রায়ের কপি হাতে পেয়ে তা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যা করা উচিত তিনি করবেন।

অভির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্তিয় আইনজীবী শাহ ইলিয়াস রতন জানান, তিনি অভির পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। মামলায় অভি খালাস পেয়েছেন। এ রায়ে তিনি খুশী।

২০০২ সালের ১০ নভেম্বর রাত্রে ঢাকার কেরানীগঞ্জের ১ নম্বর চীন মৈত্রী সেতুর ১১ নম্বর পিলালের পাশে তিন্নির লাশ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানার এএসআই সফি উদ্দিন থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রথমে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত শুরু করলেও পরে মামলা স্থানান্তর হয় সিআইডিতে।

এর ৬ বছর পর ২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর একমাত্র গোলাম ফারুক অভিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয় সিআইডি। মামলায় বিভিন্ন সময় তিন্নির স্বামী শাফকাত হোসেন পিয়ালসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না পাওয়ায় তাদেরকে মামলায় দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

পুলিশি তদন্তে প্রাথমিকভাবে অভি অভিযুক্ত হলেও তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

অভির অবর্তমানেই ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকার ৭ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ‘তিন্নি হত্যা ও লাশ গুম সংক্রান্ত মামলা’য় জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।