জাবির ৪১তম সিনেট সভা আজ, পেশ হবে ৩১৮ কোটি টাকার বাজেট



জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: বার্তা২৪.কম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৪১তম সিনেটের বার্ষিক অধিবেশন আজ (শনিবার) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে৷ 

শনিবার (২৮ জুন) অনুষ্ঠিতব্য এ সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৩১৮ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে। 

সিনেটের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নূরুল আলম সভাপতিত্ব করবেন এবং তার অভিভাষণ প্রদান করবেন৷ এরপর অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতার ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের বাজেট উপস্থাপন করবেন৷ উপাচার্যের অভিভাষণ এবং কোষাধ্যক্ষের উপস্থাপিত বাজেটের উপর পরবর্তীতে সিনেট সদস্যবৃন্দ আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন৷ 

রেজিস্ট্রার অফিসসূত্রে জানা যায়, উপাচার্যের সভাপতিত্বে বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সিনেট হলে আজ এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। ৪১তম সিনেট অধিবেশনের আলোচ্যসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে- উপাচার্যের ভাষণ ও আলোচনা, সিনেটের ৪০তম অধিবেশনের কার্যবিবরণী নিশ্চিতকরণ, ২৪ জুন ২০২৩ এ অনুষ্ঠিত সিনেটের ৪০তম বার্ষিক সভার ভার্বেটিম রিপোর্ট অনুমোদন বিবেচনা, ২০২৩-২৪ সনের (সংশোধিত) এবং ২০২৪-২৫ সনের (মূল) রেকারিং বাজেট অনুমোদন, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের খসড়া বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ অনুষ্ঠিত শিক্ষা পর্ষদের ১৩৮ তম সভায় সংশোধিত ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) এর প্রস্তাবিত সংবিধি অনুমোদনের জন্য ২৩ মে ২০২৪ তারিখের সিন্ডিকেট সভার সুপারিশ বিবেচনা ও বিবিধ। 

জানা যায়, ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন হয়। তিন বছর মেয়াদি এই সিনেট সদস্যদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর। গত বছরের ১৬ অক্টোবর নির্বাচনের মাধ্যমে ৩৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়েছে। পদাধিকার বলে সিনেটের অন্য পাঁচজন সদস্য হলেন উপাচার্য, দুজন উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান।

তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ ৭৩ এর ১৯(১) এর (কে) ধারা অনুযায়ী, সিনেটে অন্যান্য প্রতিনিধির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) থেকে সিনেটে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকবেন৷ তবে প্রায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) নির্বাচন বন্ধ থাকায় কোন ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সভা।

কোটাবিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার জবি শিক্ষার্থীরা



জবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪, কোটাবিরোধী আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

ছবি: বার্তা২৪, কোটাবিরোধী আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

  • Font increase
  • Font Decrease

২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখার দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে ছাত্র সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১ জুলাই) ক্যাম্পাসে রফিক ভবনের সামনে এ সমাবেশ শুরু হয়। এসময় কোটাবিরোধী একটি মিছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে বের হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড় প্রদক্ষিণ করে আবার রফিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।

পরবর্তীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবি উল্লেখ করে তাদের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ’১৮-এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এছাড়াও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরো জানান, তাদের দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা তাদের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

;

উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের পরমত সহিষ্ণু হতে হবে: স্পিকার



ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী/ছবি: বার্তা২৪.কম

জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী/ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, বিশ্ব ব্যবস্থাপনা বুঝতে হলে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক যাই হোক না কেন, অন্যকে বুঝা, পরমত সহিষ্ণুতা, পরমতের প্রতি শ্রদ্ধা, সকল কিছুই রপ্ত করতে হবে এবং এক্ষেত্রে বিশ্লেষণ বা বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা এবং অন্তদর্শন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সোমবার (১ জুলাই) টিএসসি মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়নে উচ্চ শিক্ষা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু ভালো চাকরি পাওয়া নয়। বরং জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে পরিপূর্ণ মানবিক বিকাশ নিশ্চিতকরণ এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য সক্ষমতা অর্জন করাই হলো উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্য।

বিভিন্ন গবেষণা থেকে উদ্ধৃত বরে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের দুই ধরণের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যের কথা বলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তা হলো - ট্রানসেকশনাল মডেল ও ট্রান্সফরমেশনাল মডেল।

স্পিকার বলেন, যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উচ্চ শিক্ষা প্রদানে ট্রান্সসেকশনাল মডেল গ্রহণ করে তাদের শ্রমবাজারের চাহিদা ও ট্রেন্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার ভিত্তিতে কারিকুলাম প্রস্তুত করতে হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা প্রাসঙ্গিক বিষয় ভিত্তিক দক্ষতা অর্জন করতে পারে। যা তাদেরকে কর্মক্ষেত্রে সহজেই কাজ পেতে সহায়তা করে।

আর ট্রান্সফরমেশনাল মডেল শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন, সুনির্দিষ্ট দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, যা বাস্তব জীবনে প্রায়োগিক জ্ঞান এবং কর্মক্ষেত্রের জন্য যথাযথ স্কিল প্রয়োগ করতে শেখায় । এ রকম স্কিল ডেভেলপমেন্ট বেইজড এডুকেশন একজন শিক্ষার্থীকে শ্রম বাজারের চাহিদা অনুসারে সমাজে সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রস্তুত করে।

বিশ্ব ব্যবস্থাপনা বুঝতে শিক্ষার্থীদের বিশেষ জ্ঞান অর্জনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, যাই হোক না কেন, অন্যকে বুঝা, পরমত সহিষ্ণুতা, পরমতের প্রতি শ্রদ্ধা, সকল কিছুই রপ্ত করতে হবে এবং এক্ষেত্রে বিশ্লেষণ বা বিশ্লেষণাত্মক ক্ষমতা এবং অন্তদর্শন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয় অনেক কিছু করেছে। ব্রিটিশ রাষ্ট্র, পাকিস্তান রাষ্ট্র, এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র, এই তিন শাসন আমলের নানা অন্তরাল অতিক্রম করে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগোতে হয়েছে। বিপর্যয়গুলো খুব কঠিন বিপর্যয় ছিল। ১৯৭১ সালে তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয় তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিল।

ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের যুগে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধে গড়ে তোলা, সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে ৪র্থ শিল্পবিপ্লব এবং আগত ৫ম শিল্পবিপ্লবের যুগের আলোকে তরুণ যুগে গড়ে তুলতে হবে।

“আগে আমরা গ্লোবালাইজেশন বলতাম, এখন বলছি ইন্টারন্যাশনালাইজেশনের যুগ। ইন্টারন্যাশনাইজেশনের কারণে একজন শিক্ষার্থী শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, সে পৃথিবীর যে কোনো স্থানে চাকরির সুযোগ পাবে। সেভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম তৈরি হবে।”

তিনি আরো বলেন, আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা যেন না থাকে। শিক্ষার্থী শিক্ষার মধ্যে যদি বিরক্তিবোধ করে, তাহলে সে শিক্ষা কখনও কার্যকর শিক্ষা হতে পারে না। শিক্ষার্থীরা শিক্ষায় আনন্দ পাবে যখন সেটা প্রায়োগিক জীবনে ব্যবহার করতে পারবে। বাস্তবজীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত শিক্ষা হলে তা হবে কল্যাণমুখী।

প্রসঙ্গত, এর আগে সকাল পৌনে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি চিরন্তন চত্বর থেকে উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। এটি টিএসসির পায়রা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সকাল ১০টায় টিএসসির পায়রা চত্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা, বেলুন ও ফেস্টুন উড়ানো, কেক কাটা এবং সংগীত বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের থিম সং ও উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশিত হয়।

উল্লেখ্য, আলোচনা সভায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য দেন।

;

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া সেই দিনটি



বৈশাখী মুখার্জী
বৈশাখী মুখার্জী, শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়/ছবি: বার্তা২৪.কম

বৈশাখী মুখার্জী, শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়/ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আমার মতে, মানুষের মৌলিক চাহিদা হওয়া উচিত সাতটি। সেই সাত নম্বর চাহিদা হলো, মন ভরে ইচ্ছামতো স্বপ্ন দেখার। জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে, সময় ও পরিস্থিতির চাপে স্বপ্নের রঙ কিছুটা ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। কারণ জীবন জটিলতায় পরিপূর্ণ। তবে আমিও একজন স্বপ্ন বিলাসী, স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, তাই জটিলতাগুলোর মাঝেও স্বপ্ন বুনতে থামি নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন আমার জন্য রূপকথার মতো ছিল। বাস্তবে তা পূরণ হবে কখনো ভাবিনি। কোনো এক শুভক্ষণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নামক নন্দন কাননে বিচরণ শুরু করে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেয়ে এখন আমার বিদায়ও সন্নিকটে।

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে আমার জীবনের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যায়। তাই সোনালি সময়ের শেষ দিনগুলি পার করার সময় আজ অতিশয় স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছি । আজও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠার দিনটি আমার কাছে স্বপ্নময়। তাই স্বর্গপতনের আগে নিজের গল্প লেখার এই অনন্য সুযোগ ধরার লোভ সামলাতে পারছি না। আবার কান টানলে মাথা আসার মতো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন নিয়ে বলতে হলে কলেজের শেষ দিনগুলো থেকে শুরু করতেই হবে। তাই অনিবার্যভাবে সেই প্রসঙ্গ এসেই যাচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানতে পেরেছিলাম কলেজে থাকাকালীন সময়ে। এইচএসসিতে মানবিক বিষয়ে মাইগ্রেট করার পর আমারও স্বপ্নচূড়া ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এক রাশ শঙ্কা, ভয় ও আকাশ ছোঁয়ার আশা নিয়ে ভর্তিপরীক্ষা পূর্ববর্তী প্রস্তুতির সময়ের নোটখাতাগুলোতে লিখে রাখতাম ‘আমার পদচারণায় মুখরিত হোক ঢাবি ক্যাম্পাস।’

‘এত আত্মবিশ্বাস! তোর তো ঢাবি সিট নিশ্চিত’- এরকম মন্তব্য পেতাম সহপাঠীদের থেকে। অবশ্য কোচিং শিক্ষক আমাদেরকে উৎসাহিত করতে বলতেন- তোমার পদচারণায় মুখরিত হোক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। যেখানে স্বপ্নবিভোর আমি ক্যাম্পাসের স্থলে ঢাবি নামটি যোগ করেছিলাম। প্রস্তুতিকালীন সময়ে নিয়মিত দিকনির্দেশনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গল্প ও অনন্য সুন্দর ক্যাম্পাসের স্থিরচিত্র পেতাম শ্রদ্ধেয় ফারুক আহমেদ ভাইয়ের থেকে। তাই তার কাছেও আমি চিরকৃতজ্ঞ।

অতিশয় আত্মবিশ্বাসী ছিলাম কিনা জানিনা, তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্ম আমি তুলিনি, ভর্তিও হইনি। মনে হয়েছিল, এতে আমার মনোবল ঝাঁকুনি খাবে, সঙ্গে আরো চারটে টাকাপয়সা খরচ হবে। ভর্তিপ্রস্তুতির সময়কালীন মোটা অঙ্কের খরচের কথা বোধকরি অনেকেরই জানা। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না হলে গোটা একটা বছর ভবঘুরে হয়ে থাকব, এই ভয়টা একেবারে ছিল না তা অস্বীকার করা যাবে না।

এদিকে, আমার চারপাশের অনেকে; এমনকি আমার প্রিয় বন্ধুও এই ঝুঁকি নেয়নি। তাই সংশয় কিছু ছিল ভিতরে, তবে সেটাকে এতটা ঘনীভূত হতে দিইনি কখনো। স্মার্টফোনটা নিজের কাছেই রেখেছিলাম তবে তা যেন আমার স্বপ্নের পথে বাধা না হয় এজন্য তালাবন্ধ করে ট্রাঙ্কে রেখে দিতাম। হাজার হোক মোবাইল ফোন যে টাইম কিলিংয়ে ওস্তাদ এ সত্য সবার জানা।

আমি সর্বমোট তিনটি ভর্তিপরীক্ষা দিয়েছিলাম। ঢাবির ‘খ’, ‘ঘ’ ও জাবির ‘খ’। সৌভাগ্যক্রমে তিনটিতেই মেধাক্রম পাই। এর মধ্যে ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে ভর্তিপরীক্ষা ছিল আমার প্রথম কোনো ভর্তিপরীক্ষা। এ সিদ্বান্তের জন্য আজও আমি আফসোস করি। স্বভাবতই অর্থ সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য জবির ফর্ম আমি তুলিনি।

ঢাবির আগে জবির পরীক্ষা ছিল। আমার যেসব বন্ধুরা জবিতে পরীক্ষা দিয়েছিল। প্রায় সবাই ঢাবির ‘খ’ ইউনিটে ভালো পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু ঢাবির ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষা আমার খুব বেশি ভালো হয়নি। অসুস্থতা ও সময় ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির জন্য কিছু মার্কস ছেড়ে আসি।আমার চান্স পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আমাদের সময় অর্থাৎ ২০১৯-২০ সেশন থেকেই ঢাবি প্রথম লিখিত পরীক্ষাতে যায়। তাই ফলাফল প্রকাশে একমাস সময় লেগেছিল। ততদিনে জাবির ফলাফল আসে। আমি চান্স পাই।

আমার কোচিংয়ের শিক্ষক ও বন্ধুরা অভিনন্দন জানায়। খুশি ছিলাম, আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রার্থনাও করতাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল প্রকাশের দিন মা’য়ের মন্দিরে গিয়ে বসেছিলাম। অবশেষে ঈশ্বরের কৃপা, বাবা-মায়ের আশীর্বাদ ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের দোয়ায় একটা জায়গা পেয়েই যাই। মানুষ স্বপ্নকে ছুঁতে পারলে সম্ভবত তার শব্দের বেগটা হারিয়ে যায়। আমার অবস্থাও সেদিন এমনই হয়েছিল।

সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ও ওনাদের অবদানে আমার সেই সৌভাগ্য হলো নিজেকে স্বপ্নের জায়গায় দেখার। তখন থেকেই নতুন কিছু রঙিন স্বপ্ন, আবেগ, উদ্দীপনা আর রোমাঞ্চকর অনুভূতি নিয়েই ২০২০ এর ১ জানুয়ারি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রথম পা রাখা।

ঝিনাইদহ থেকে চার জেলা পাড়ি দিয়ে আসি এই নতুন শহরে। নতুন মানুষদের ভিড়ে, জীবনের নতুন স্বপ্ন বুনতে। যখন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করলাম, স্বপ্নের রং আবার তার খোলস পাল্টাল। আমার স্বপ্নের তরী নোঙর করেছে নতুন ভুবনে। বিশ্ববিদ্যালয় মানেই জ্ঞানের সমাহার। উন্মুক্ত ক্যাম্পাস, বিশ্ববিদ্যালয় মানেই বন্ধু, আড্ডা, বড় ভাইয়া-আপুদের অকৃত্রিম ভালোবাসা আর বিস্তৃত পরিসরে নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরা। এই অনুভূতিগুলো আসলে বিরল।

একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে আমার ক্ষেত্রেও অনুভূতিগুলো একই রকমের। প্রিয় ক্যাম্পাস, প্রিয় লালবাস, বন্ধু, আড্ডা এবং নিজেকে মেলে ধরার মধ্যে আমি আমার জীবনের তৃপ্তি খুঁজে পেয়েছিলাম সেদিন। সময়ের টানে আজ আমার বিদায়বেলায়ও উপস্থিত।

আমি ভালো করেই জানি এরপর যত সুবিধাজনক জায়গায়ই যাই না কেন বাংলাদেশের হৃদয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত নিজের করে জীবনযাপন করতে পারব না। এক টাকার লাল চা আর তিন টাকা সিঙ্গারা খেতে খেতে বন্ধুত্বের গল্পগুলো জমে ওঠে শিক্ষার্থীদের। কারো মুখ ভার করে থাকার যেন এখানে অধিকার নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা ইঞ্চি হয়ে ওঠে ভীষণ প্রাণবন্ত, প্রতিটা মুহূর্তই জমে ওঠে জীবনের গল্পে; গল্পে গল্পে রচিত হয় যাপিত জীবনের এক অনন্য কথামালা।

এরই সঙ্গে ক্যারিয়ারের প্রথম নিয়ামক হচ্ছে আন্ডারগ্র্যাড-এর বছরগুলো। এই বছরগুলোতে ঠিক হয় একটা বাচ্চা কতোটা ‘এক্সপোজার’ পাবে, কতোটা স্কলার হয়ে নিজেকে গড়তে পারবে? ক্যারিয়ারে এগোনোর জন্য প্রাসঙ্গিক পুষ্টিগুলো তার মন ও মস্তিষ্ক পাবে কতোটা এই বছরগুলোতেই নির্ধারণ হয়! এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন কিছু বিশেষ শিক্ষকের সাহচর্য। আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি,তাদের আমি পেয়েছি।

ঠিক যেমনভাবে কথা বলার শিক্ষা, বর্ণশিক্ষা, নীতি ও আদর্শের শিক্ষা এসব আসে পরিবার থেকে। তেমনভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা অর্জন করি বিবেকবোধ, বুদ্ধিমত্তা, অভিজ্ঞতা, পরিচিতি, আর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টিকে থাকার শক্তি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে এখন পর্যন্ত যা দিয়েছে তা যদি জীবনের পরবর্তী ধাপগুলোতে ব্যবহার করতে পারি তবেই আমি মনে করি এই ঋণ ও গুরুদক্ষিণা শোধের ইচ্ছাটা পূরণ হবে। প্রাকৃতিক নিয়মের মত স্নাতক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইলফলক সমাবর্তন সজ্জার দিকে আমার যে ওডিসি চলছে তাকে অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও আমি চলতে দিতে বাধ্য।

এখন আমার খুব করে ইচ্ছে, বাবা-মাকে একসঙ্গে আমার সমাবর্তনে এনে নিজের অর্জনকে তাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া। যেই গর্বের ও তৃপ্তির হাসি আমার ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন তাদের মুখে আমি দেখেছিলাম, সে হাসি বার বার ফিরিয়ে দেওয়ার মতো সামর্থ্য চাই সৃষ্টিকর্তার কাছে। আমার বাবা কখনো তার জীবনে ঢাকায় আসেননি, আমার ক্যাম্পাসও দেখেননি। এজন্য মধুরতম সেদিনটির প্রতীক্ষায় আজকের বুক ভরা দুঃখকে বেদনা-হাস্যে বরণ করছি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

;

যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর
যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত

যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত

  • Font increase
  • Font Decrease

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

রোববার (৩০ জুন) রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য পাওয়া যায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। একই সঙ্গে, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ করতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নতুন কমিটি গঠন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। উক্ত কমিটিতে পদ প্রত্যাশীদের আগামী ১ জুলাই থেকে ৭ জুলাইয়ের মধ্যে (প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা) বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।

উল্লেখ, ২০২২ সালের ৩১ জুলাই তৎকালীন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) সোহেল রানাকে সভাপতি ও তানভীর ফয়সালকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য ছাত্রলীগের ১১ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করে।

;