শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে হাজারও মানুষ

  • মাসুদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, গোপালগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

বর্ষাকালে ভরা যৌবন ফিরে পায় গোপালগঞ্জের নদ-নদী, খাল-বিলগুলো। নতুন জলে কানায় কানায় পূর্ণ এখানকার শত শত খাল-বিলে শোভা পায় সবুজ ও সাদা রংয়ের শাপলা। শাপলা শুধু জাতীয় ফুল নয়, এটি এ অঞ্চলের মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও অধিক জনপ্রিয়। আর এ শাপলা তুলে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন গোপালগঞ্জের কয়েক হাজার দরিদ্র মানুষ।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী-মুকসুদপুরের চান্দারবিল, ননীক্ষীর বিল, সিংগার বিল এবং কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়ার বাঘিয়ার বিল, জোয়ারিয়ার বিল, কান্দির বিলসহ শতাধিক বিলে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেয় শাপলা। আর বিল এলাকার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ এ শাপলা তোলার পেশায় জড়িত। কোনো রকম পুঁজির প্রয়োজনীয়তা না থাকায় এ কাজে জড়িত হাজারো বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ।

বিজ্ঞাপন
এভাবে হাটে নিয়ে বিক্রি করেন দরিদ্র মানুষেরা

শাপলা আহরণকারীরা জানান, ভোরে নৌকা নিয়ে বিলে যেয়ে আমরা ঘুরে ঘুরে শাপলা তুলি। প্রতিদিন একশ থেকে চারশত আটি শাপলা তুলি। দুপুরে পাইকাররা আসে। তাদের কাছে বিক্রি করে দৈনিক তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা পাই। পাইকাররা আবার এসব শাপলা সংগ্রহ করে জেলা সদরসহ আশপাশের জেলার হাটবাজারে নিয়ে বিক্রি করে।

গোপালগঞ্জের চান্দারবিলে শাপলা সংগ্রহকারী শংকর মন্ডল জানান, বর্ষাকালে চান্দার বিলে প্রচুর শাপলা জন্মে। এসময় আমাদের এলাকায় কোন ফসল হয়না। তাই আমি প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এ বিলে শাপলা সংগ্রহ করি। তাতে আমার ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় রোজগার হয়। এভাবেই এখানকার অনেকে সংসার চালায়।

বিজ্ঞাপন
সকাল হতেই নৌকা নিয়ে বিলে শাপলা তুলতে যায় তারা

একই গ্রামের আশুতোশ মন্ডল জানান, চান্দার বিল থেকে পাইকাররা দৈনিক দুই-তিন নসিমন শাপলা গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, নড়াইল জেলার বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা ক্রয়কৃত এসব শাপলা আবার ওখানে বিক্রি করে। করোনার সময়ে কর্মহীন দিন কাটলেও শাপলা বিক্রির সুযোগ থাকায়ে এ কাজ করে কোন রকম সংসার চলছে।

শাপলার পাইকার ব্যবসায়ী আনিস মোল্লা জানান, আমারা ননীক্ষীর, উজানী, সাতপাড়, সিংগা ও হাতিয়াড়া এলাকার মানুষদের কাছ থেকে শাপলা কিনে গোপালগঞ্জ জেলা শহরসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে পাইকারি দরে বিক্রি করি। করোনার সময়ে এবছর একটু লাভ কম হচ্ছে। তবে মানুষের খাদ্য হিসেবে এই শাপলা বেশ চাহিদা রয়েছে।

এবিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অরবিন্দ কুমার রায় জানান, শাপলা গোপালগঞ্জের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি প্রাকৃতিক সবজি। অনেক আগে থেকেই শাপলা এই এলাকার মানুষ সবজি হিসেবে খেয়ে আসছে। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ শাপলায় রয়েছে আয়োডিন ও আয়রন এবং সাথে রয়েছে পানি। এছাড়াও শাপলা বিক্রি করে দৈনিক হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে। এতে শাপলা আহরণকারী ও ব্যবসায়ীরা ভালোই লাভবান হচ্ছে।