যাতায়াতে ভরসা ট্রলার!

  • খন্দকার সুজন হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মানিকগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চরাঞ্চলবাসীর যাতায়াতে ভরসা ট্রলার

চরাঞ্চলবাসীর যাতায়াতে ভরসা ট্রলার

সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। আধুনিকতার ছোঁয়া এখন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে গ্রামের দৃশ্যপট। এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। তবে আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে এখনো বঞ্চিত মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের লক্ষাধিক বাসিন্দা।

হরিরামপুর উপজেলার সমতল ভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন ওই ইউনিয়নগুলো। পদ্মার বুকে জেগে ওঠা চরে বসবাস তাদের। নেই উন্নত রাস্তাঘাট। চরাঞ্চলে যাতায়াতের মাধ্যম ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। তবে বর্ষাকালে বিকল্প নেই ডিঙি নৌকার। আর এই চরাঞ্চল থেকে জেলা বা উপজেলায় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। এর মানে ট্রলারেই ভরসা চরাঞ্চলবাসীর।

বিজ্ঞাপন

উপজেলার আন্ধারমানিক থেকে হরিনাঘাট হয়ে যাতায়াত করেন লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক বাসিন্দা। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় যাত্রী নিয়ে পদ্মা পারাপারে ব্যস্ত ট্রলার চালকেরা। তবে বিকেল ৫টার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় যাতায়াত। কোনো রকমের দুর্ঘটনা বা জরুরি প্রয়োজন হলেও পদ্মা পারাপারের কোনো উপায় নেই তাদের। অপেক্ষা করতে হয় পরদিন সকাল ৭টার ট্রলারের জন্য।

পদ্মা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি-ভিটা

একইভাবে পৃথক দুইটি খেয়াঘাট দিয়ে যাতায়াত করেন উপজেলার আজিমনগর এবং সুতালরি ইউনিয়নের বাসিন্দারা। পদ্মা নদীর ভাঙা-গড়ার যুদ্ধে কোনো রকমে টিকে রয়েছে এসব জনগোষ্ঠী। যাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে কৃষিকাজ। তবে বন্যা আর নদী ভাঙনে দিশেহারা তারা। বন্যায় প্লাবিত হয়ে প্রতি বছরেই ক্ষতি হয় ফসলি জমির। আর বন্যার পানি কমে গেলে শুরু হয় পদ্মার ভাঙন। এই অবস্থা থেকে স্থায়ীভাবে পরিত্রাণ চান চরাঞ্চলের মানুষ।

বিজ্ঞাপন

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের হালুয়াঘাটা এলাকার হামিদ মুন্সী বলেন, ৮৮ সালের বন্যার পরের বছর থেকে এই চরে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি। চরাঞ্চলে রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই নাজুক। ডিঙি নৌকা ছাড়া বর্ষাকালে চলাফেরার কোনো সুযোগ নেই। আর উপজেলা বা জেলায় যোগাযোগ করতে হলে নির্ভর করতে হয় ট্রলারের ওপর। ট্রলার ছাড়া পদ্মা পারাপারের কোনো উপায় নেই বলে জানান তিনি।

হাবিবুর রহমান মৃধা নামে হরিনাঘাট এলাকার এক যুবক বলেন, চরাঞ্চলের বাসিন্দারা প্রকৃতির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে নামমাত্র টিকে রয়েছেন। সন্ধ্যার পর কোনো বিপদ হলেও পদ্মা পারাপারের উপায় নেই। গর্ভবতী মা এবং অসুস্থদের নিয়ে প্রায়ই বেশ বিপাকে পড়তে হয়। রাতের বেলা চলাফেরার জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত একটি স্পিডবোট থাকলেও সেটির সুবিধা পাওয়া বেশ দায় বলে জানান তিনি।

আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের হরিনাঘাট এলাকায় কথা হয় ট্রলার চালক আলাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আন্ধারমানিক থেকে হরিনাঘাটে যাতায়াতের জন্য মোট ১২টি ট্রলার রয়েছে। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ছয়টি করে ট্রলার চলাচল করে। বাকি ছয়টি ট্রলার চালককে রিজার্ভ ট্রিপের খোঁজে থাকতে হয়। রিজার্ভ না পেলে অলস সময় কাটে বলে জানান তিনি।

লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ হোসেন ইমাম বলেন, অর্ধলক্ষাধিক লোকের বসবাস তার ইউনিয়নে। ট্রলার ছাড়া পদ্মা পারাপারের বিকল্প কোনো মাধ্যম নেই। পদ্মার ভাঙনে প্রতিনিয়ত ছোট হচ্ছে লেছড়াগঞ্জ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষিজমি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার। দ্রুত সময়ের মধ্যে পদ্মার ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিনা ইয়াসমিন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, উপজেলার চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নের অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য একটি স্পিডবোট রয়েছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অবশ্যই তারা পদ্মা নদী পারাপারের ব্যবস্থা করবেন। তবে স্পিডবোটটি শুধুমাত্র অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য বলে জানান তিনি।