৩ শতাধিক করোনা রোগীকে সুস্থ করে সম্মাননা পেলেন ডা. অসিম
দেড়শ পুলিশ আর দেড় শতাধিক সাধারণ মানুষকে একাই করোনা চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন ডা. অসিম কুমার সাহা। তিনি বগুড়া পুলিশ লাইন্স হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। করোনা মহামারির সময় একাই দিন রাত ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়েছেন আক্রান্ত রোগীদের। কখনো মোবাইল ফোনে আবার কখনো পরিস্থিতি বিবেচনায় রোগীর বাড়িতে হাজির হয়েছেন। এভাবেই তার চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে ফিরেছেন তিন শতাধিক করোনা আক্রান্ত মানুষ। এ কারণেই ডা. অসিম কুমার সাহাকে জেলা পুলিশ দিয়েছেন বিশেষ সম্মাননা।
গত সোমবার (১০ আগস্ট) জেলা পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভায় বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা করোনা যোদ্ধা হিসেবে ডা. অসিম কুমার সাহাকে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট উপহার দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত মে-জুন মাসে বগুড়া জেলা পুলিশের সদস্যদের মধ্যে করোনায় আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে। ফলে আতঙ্ক দেখা দেয় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের মাঝে। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার জন্য পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুটি ভবনের একটিকে আইসোলেশন সেন্টার এবং অপরটিকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার ঘোষণা করে চিকিৎসা দেয়ার উদ্যোগ নেন বগুড়ার পুলিশ সুপার।
সেখানেই শুরু করা হয় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা। চিকিৎসক হিসেবে এক মাত্র ভরসা পুলিশ লাইন্স হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ অসিম কুমার সাহা।
করোনা জয় করে কর্মস্থলে যোগ দেয়া কয়েকজন পুলিশ সদস্য জানান, তারা যখন আইসোলেশন সেন্টারে অবস্থান করছিলেন সেই সময় ডা. অসিম কুমার সাহা প্রতিদিনই সেখানে গিয়ে আক্রান্তদের খোঁজখবর নিয়েছেন।
এছাড়া যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে মোবাইল ফোনে সাড়া দিয়েছেন তিনি। পুলিশ সদস্য ছাড়াও তাদের পরিবার, অবসর প্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরাও সেবা পেয়েছেন যেকোনো সময়। আর এভাবেই তিনি গত তিন মাসে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন ১৪০ জন পুলিশ সদস্যকে। এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৯ জন পুলিশ সদস্য।
এদিকে করোনা ও বগুড়া পরিস্থিতি নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাদের ফেসবুক পেজে করোনা চিকিৎসক হিসেবে যে কয়জন চিকিৎসকের নাম দিয়েছিলেন সেই তালিকায় প্রথমেই ছিল ডা. অসিম কুমার সাহার নামও মোবাইল নাম্বার।
এ কারণে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত প্রতিনিয়ত করোনা রোগী তাদের সমস্যা নিয়ে ফোন করতেন ডা. অসিম কুমার সাহার কাছে। আর এভাবেই তিনি আরও দেড় শতাধিক করোনা রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন গত তিন মাসে।
ডা. অসিম কুমার সাহা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘গণহারে পুলিশ সদস্যরা আক্রান্ত শুরু হলে নমুনা পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় না থেকে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ফলে তাদের পরিবারের সদস্যদেরকে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা গেছে। তিনি আরও বলেন পুলিশ সদস্যের বাহিরেও শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে করোনা আক্রান্ত মানুষ ফোন দিয়েছেন প্রতিনিয়ত। কখনও মোবাইল ফোনে আবার রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে গভীর রাতেও রোগীর বাড়িতে যেতে হয়েছে চিকিৎসা দিতে।’
তিনশতাধিক করোনা রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলার ব্যাপারে অনুভূতি জানতে চাইলে ডা. অসিম কুমার সাহা বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘তিন শতাধিক করোনা রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে পেরে চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে সার্থক মনে হয়েছে।’