ঘুষের টাকা গ্রহণের ভিডিও ফাঁস, ওসিকে স্ট্যান্ড রিলিজ
স্যানিটাইজ করে ঘুষের টাকা গ্রহণের ভিডিও ফাঁস হওয়ার পর লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজ আলমকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে ঢাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশে বদলি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে বার্তা২৪.কম-কে বদলির হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা। ওসি মাহফুজকে ঢাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
জানা গেছে, লালমনিরহাট সদর থানার ওসি মাহফুজ আলম নিজ কার্যালয়ে বসে বাদী পক্ষকে ফাঁসাতে আসামি পক্ষকে পরামর্শ ও মামলা নেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে ১০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। টাকা গ্রহণের আগে করোনাভাইরাসের ভয়ে নিজে এবং দাতাকে হাত স্যানিটাইজ করেন। এমন একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি মাহফুজ আলম আসামির অবস্থান জানার পরও তাকে জামিন দিয়ে বাদীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে করোনাকালে ঘুষের টাকা নেওয়ার আগে তিনি হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করতেও ভোলেননি।
নিচে ২ পক্ষের কথোপকথন হুবহু তুলে ধরা হলো-
ওসি মাহফুজ: তোমাদের বাদীর (কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে বাদী দেখিয়ে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়) তো জামিন হয় নাই। জামিন না হতেই থানায় হাজির হয়ে এজাহার দেওয়া হলে তো বেআইনি হবে। জামিনের কাগজসহ এসো, অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে। মামলা না হওয়া পর্যন্ত কোনো ঝামেলা করা যাবে না। ঝামেলা হলে তোমরা প্যাঁচে পড়ে যাবে।
ঘুষ দাতা: আমরা ঝামেলা করি নাই, করব না। প্রয়োজনে ওদিকে (তাদের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদীর এলাকায়) কেউ যাব না।
ওসি মাহফুজ: মামলা এখানে একটা করে দেব, কোর্টেও একটা মামলা করবা এবং চেক ডিজঅনার করবে। এভাবে ঘুরবে (আঙুল ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেন), চরকির মতো ঘুরবে। যারা বুদ্ধিদাতা তারা হেরে যাবে। তোমাকে ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। গরম করা যাবে না।
ঘুষ দাতা: আস্তে আস্তে করতে হবে। একটা একটা করে। স্যার টাকা আজকে দিব নাকি মামলার দিন?
ওসি বললেন, সেটা তোমাদের ব্যাপার।
ঘুষ দাতা: স্যার, আপনাকে কমিটমেন্ট করতে হবে। যেদিন মামলা হবে, সেই দিনই আসামি ধরতে হবে।
ওসি: আসামিরা পুরুষ তো?
এরপর ঘুষ দাতা বলেন, স্যার স্যানিটাইজারটা একটু দেন।
এরপর ওসি মাহফুজ কাজ ফেলে স্যানিটাইজার দিয়ে নিজেও হ্যান্ড রাব করে নেন এবং ঘুষ দাতার হাতেও স্যানিটাইজার দেন।
ঘুষ দাতা এসময় বলেন, স্যার, টাকা থেকেও করোনা ছড়ায়। তদন্ত কর্মকর্তাকে আগে এক হাজার টাকা দিয়েছি স্যার।
এরপর ঘুষ দাতা পকেট থেকে টাকা বের করে টেবিলে রাখলে ওসি মাহফুজ আলম তা নিয়ে প্যান্টের পকেটে রেখে বলেন, টাকা দিয়ে বেশি ছড়াচ্ছে। এখানে কত টাকা দিয়েছ?
ঘুষ দাতা: ১০ হাজার আছে স্যার।
ওসি: ওহ ঠিক আছে। ওকে (মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে) আরও দুই হাজার টাকা দিও। সে মন খারাপ করেছে। তাকে খুশি রাখতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসি মাহফুজ আলমকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।