মিরসরাইয়ে মাদক ছেড়ে সুস্থ জীবনে ফিরে এলো ৮৬ জন
মিরসরাই থানা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের অর্থায়নে মাদক বিক্রি ও উৎপাদনের সাথে জড়িত ৮৬ জন ত্রিপুরা আদিবাসী মাদকের অভিশপ্ত জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনে ফিরে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) সকাল ১১টায় তালবাড়িয়া রেল স্টেশনে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে সুস্থ জীবনে ফিরে আসা এসব মানুষের মাঝে কৃষি জমি, বিভিন্ন জাতের ফলজ চারা ও বীজ বিতরণ করা হয়। প্রতিটি পরিবারকে ১০টি লেবুর চারা, ৪৩ গ্রাম শিমের বিচি, ১০ গ্রাম লাউ বিচি, ১০ গ্রাম বরবটি বিচি, ২৫০ গ্রাম লালশাক বিচি, ৫০ গ্রাম বেগুনের বিচি ও একটি কীটনাশক স্প্রে ড্রাম বিতরণ করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ মজিবুর রহমান, ৯নং মিরসরাই সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এমরান উদ্দিন, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের প্রভাষক সালাউদ্দিন লাভলু, সাংবাদিক মো. হাসান প্রমুখ।
চট্টগ্রামের মিরসরাই থানা ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। মাদকের হাট মায়ানমার সীমান্ত থেকে কক্সবাজার জেলা হয়ে চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি সারাদেশে মাদক পাচারের সহজ রুট হচ্ছে ঢাকা -চট্টগ্রাম মহাসড়ক। মিরসরাই উপজেলার উপর দিয়ে জাতীয় মহাসড়ক হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন স্পটে মাদকের ব্যাপক ছড়াছড়ি ও সহজলভ্য হয়ে উঠে। মাদকের সহজলভ্যতার কারণে স্কুল কলেজগামী যুবকদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে।
গত চার মাসে মিরসরাই থানার ৬৮টি বিশেষ অভিযানে ৭১ জন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার ও এ সংক্রান্ত ৪৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, মাদকের ছোট ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনা না গেলে মাদক পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে না।
মিরসরাই থানা সূত্রে জানা গেছে, মার্চ মাসে একটি মাদক মামলায় ১০৫ পিস ইয়াবাসহ এক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়। এপ্রিলে মাদকের মামলা দুটি ও উদ্ধার হয় ৬৬ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৫০ লিটার চোলাইমদ। গ্রেফতার করা হয় আট মাদক ব্যবসায়ীকে। এছাড়া নিয়মিত মামলায় ১০ জন ও গ্রেফতারী পরোয়ানা মূলে ১৮৮ জন গ্রেফতার হয়।
মে মাসে মাদক সংক্রান্ত ১২টি মামলা হয়েছে। ৩৪৬ পিস ইয়াবা ও ১১৫ লিটার চোলাই মদ উদ্ধারের পাশাপাশি ২০ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ওই মাসে একটি বিদেশি পিস্তল, চার রাউন্ড গুলি, ১৫৮৩ কেজি ওএমএস এর চাল, ৭০ কেজি চোরাই ডাল, পরিত্যক্ত একটি মোটরসাইকেল, নগদ ৫৫৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। নিয়মিত মামলায় আসামি ১৬ জন ও গ্রেফতারী পরোয়ানা মূলে ৫৮ জন এবং তিনজন ডাকাত গ্রেফতার হয়েছে। জুন মাসে মাদকের ছয়টি মামলা হয়েছে। ৯০ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট, ২০ লিটার চোলাইমদ, ১২৫ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার হয়েছে। আটজন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে। এছাড়া একটি বিদেশী পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, ১০টি চোরাই মোবাইল সেট উদ্ধার হয়েছে। নিয়মিত মামলায় আসামি ১৪ জন, গ্রেফতারী পরোয়ানা মূলে দু’জন ও দু’জন ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জুলাই মাসে ২৩টি মাদক মামলা হয়েছে। ৩০৪৯ পিছ ইয়াবা, ২৭০ লিটার চোলাইমদ, ১৮ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার হয়েছে। ৩২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া দুটি চোরাই মোবাইল সেট, দুটি চোরাই গরু, গরু চুরির কাজে ব্যবহৃত একটি মিনি পিক-আপ গাড়ি উদ্ধার করা হয়। নিয়মিত মামলায় আটক করা হয় ৩৭৮ জনকে।
চলতি আগস্ট মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত ৩০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২০ লিটার চোলাইমদ উদ্ধার ও দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ হয়েছে। এ সংক্রান্ত দুটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে।