থমকে আছে নদীর লুপ কাটিং কাজ, ভাঙছে জমি-বসতভিটা
জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতায় চাড়ালকাটা নদীর গতিপথ পরিবর্তনে কিশোরগঞ্জের পাথরঘাটা এলাকায় মাত্র সাড়ে ৭শ মিটার লুপ কাটিং কাজ গত দেড় বছর ধরে থমকে আছে।
মাত্র ১৩ একর জমি অধিগ্রহণের আওতায় এনে লুপ কাটিংয়ের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ মিললেও তা স্থানান্তর করা হয় একই প্রকল্পের অন্য কাজের অনুকূলে।
যথাসময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় এবারে বর্ষা মৌসুমে নীলফামারী সদর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় চাড়ালকাটা নদী সংলগ্ন ১০ কিলোমিটার এলাকা বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। বন্যার কারণে ভাঙনে নদী গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, বসতভিটা। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহুতল ভবন।
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, চাড়ালকাটা নদীতে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পানি প্রবাহের পরিমাণ প্রতি সেকেন্ডে আড়াইশ কিউবিক মিটার। এতে প্রতি বছরে এ নদীতে বন্যা দেখা দেয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
যুগের পর যুগ পলি ও বালু জমে নাব্যতা হারিয়েছে ওই নদী। বর্ষা মৌসুমে একটু ভারী বর্ষণ হলে দু’কূল ছাপিয়ে তা প্রবাহিত হয়। এতে বৃদ্ধি পায় ভাঙন। ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয় আবাদি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মসজিদ, মাদরাসা, ঘরবাড়ি, গ্রামীণ সড়ক ও কবরস্থান।
আগ্রাসী এ নদী থেকে পরিত্রাণ দিতে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় চাড়ালকাটা নদী সোজাকরণ এবং বুড়ি তিস্তা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষার্থে জলঢাকা উপজেলায় নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প হাতে নেয় নীলফামারী ও সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে এ সংক্রান্ত ১৪৭ কোটি ৫৫ লাখ ৯৯ হাজার টাকার ডিপিপি একনেক সভায় অনুমোদন পায়।
চাড়ালকাটা নদী সোজাকরণ সাড়ে ৭শ মিটার লুপ কাটিংয়ে ১৩ একর জমি হুকুম দখল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সৃষ্টি করা হয় এল এ কেস ০৬/১৯-২০। কিন্তু এ পর্যন্ত অধিগ্রহণ সংক্রান্ত নোটিশ পত্রাদি জারি করণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়নি। ফলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওই এলাকার মানুষজন।
নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বার্তা২৪.কমকে জানান, যথাসময়ে লুপ কাটিং শুরু হলে বেড়াডাঙ্গা যাদুরহাট এলাকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহুতল ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের মুখে পড়ত না। এ ভাঙনের ঝুঁকি ঠেকাতে নীলফামারী ডিভিশনকে জরুরি প্রতিরক্ষা কাজে ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ১০ কিলোমিটার এলাকা মাছের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। রক্ষা হবে জীববৈচিত্র। ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পাবে বিভিন্ন স্থাপনা ও ফসলি জমি, বসতভিটা।