ময়মনসিংহের সড়কে কেন এতো লাশের মিছিল?
ময়মনসিংহে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। ঝরছে প্রাণ, দিনদিন দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল। গত ৮ আগস্ট ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বাস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সিএনজিচালিত অটোরিকশার সাত যাত্রী। এই মর্মান্তিক ঘটনার পরদিন বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় চালক ও যাত্রীদের জেল-জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে তাতেও সচেতন হয়নি এসব মানুষ। আগের মতোই বেশি যাত্রী নিয়ে চলছে এসব অটোরিকশা।
গত ১৮ আগস্ট ফুলপুরের বাশাটি এলাকায় ট্রাককে সাইড দিতে গিয়ে দ্রুত গতির একটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে গেলে তাতে প্রাণ হারান একই পরিবারের তিনজনসহ মোট আটজন।
এছাড়াও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অপরিকল্পিত রোড ডিভাইডারে ইউটার্ন নিতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ২২ আগস্ট ভালুকা উপজেলায় এভাবেই ঝরে গেল ছয়টি তাজা প্রাণ। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভালুকা সরকারি কলেজের সামনে একটি প্রাইভেটকার ইউটার্ন নিচ্ছিল। এ সময় ঢাকাগামী ইমাম পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস প্রাইভেটকারটিকে চাপা দেয়। এতে প্রাইভেটকারটি দুমড়ে মুচড়ে যায়। আর ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের চারজনসহ মোট ছয়জন নিহত হয়।
সর্বশেষ শুক্রবার (২৮ আগস্ট) সকালে ভালুকা এবং মুক্তাগাছায় ট্রাক ও প্রাইভেটকার চাপায় মারা গেলেন দুই মোটরসাইকেল আরোহী।
স্থানীয়রা বলছেন, ডিভাইডারে লাগানো গাছের কারণে রাস্তা পারাপারে ঘটছে প্রাণহানি। আর গতি নিয়ন্ত্রণে হাট বাজারের সামনে প্রয়োজন স্পিড ব্রেকার।
স্থানীয় মো. শাহজাহান নামে এক ব্যক্তি জানান, ডিভাইডারে যে গাছগুলো লাগানো হয়েছে, সেগুলোর কারণে গাড়ি আসছে কিনা তা দেখা যায় না। আবার চালকরাও দেখতে পারেন না যে মানুষ আছে কিনা। এজন্যই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া বিভিন্ন বাজারের আগে স্পিড ব্রেকার দেয়া প্রয়োজন।
পুলিশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, গত এক বছরে ময়মনসিংহ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোট মামলা হয়েছে ১৭৫টি, নিহত হয়েছে ১৯৩ জন এবং আহত হয়েছে ১৭৪ জন। এর মধ্যে চলতি আগস্ট মাসেই মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বেপরোয়া গতি, সড়কের পাশে গভীর খাদ বা পুকুর, অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই থ্রি-হুইলার, যত্রতত্র রাস্তা পারাপার ও ইউটার্ন নেয়ার প্রবণতা।
আইনের প্রয়োগ কম থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর ময়মনসিংহ শাখার সভাপতি আব্দুল কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকার সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নতুন আইন করলেও এর প্রয়োগ করা হচ্ছে না। প্রশাসন কেন এটি প্রয়োগ করতে পারছে না তা বোধগম্য নয়।
সকল পরিকল্পনার ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে জানিয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. আহমার উজ্জামান জানান, আইন প্রয়োগ, ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং, রাস্তাঘাটের বেহাল দশা ঠিক করা, গাড়ির যথাযথ ফিটনেট ঠিক করা এবং চালকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণই পারে সড়ক ও মহাসড়কে এমন মৃত্যুর মিছিল রোধ করতে।
সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রণয়নের পর ময়মনসিংহে যে মামলাগুলো হয়েছে তা ঘেটে দেখা গেছে এর সিংহভাগই হয়েছে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ২৭৯, ৩০৪ (খ) ধারায়। অর্থাৎ আইনের নতুন ধায়ায় মামলা করতে গেলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে পুলিশকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই আইন বাস্তবায়নে দৃশ্যমান ও অদৃশ্য বাধা দূরকরণে এখনই সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।