যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে হত্যাকাণ্ড: মন্ত্রণালয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা
যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তিন কিশোর খুন ও ১৫ জন আহতের ঘটনায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে ই-মেইলে ২৭ পৃষ্টার প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কমিটির প্রধান যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল লাইছ। তদন্তের বিষয়ে বিস্তারিত গণমাধ্যমে বলতে রাজি হননি তিনি।
তদন্ত কমিটির প্রধান যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল লাইছ জানান, ২৭ পৃষ্টার তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছি। এতে ৮টি পর্যবেক্ষণ ও ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও কর্মকর্তাদের দায় দায়িত্ব নিরূপণ করা হয়েছে। ঘটনার কারণ উল্লেখ করেছি। ঘটনা পরবর্তী গৃহীত পদক্ষেপ যথাযথ ছিল কিনা সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১৪ আগস্ট যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবুল লাইছকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। বাকি দুই সদস্য হলেন পুলিশ সুপারের একজন প্রতিনিধি ও সমাজসেবা অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক। কমিটিকে পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। গত ১৯ আগস্ট তদন্ত কমিটি আরও সাত দিন সময় চেয়ে আবেদন করে। অপরদিকে সমাজসেবা অধিদপ্তর গঠিত দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেখানে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অবহেলা ও গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ আগস্ট যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কিশোর ‘বন্দিদের’ অমানুষিক মারপিট করা হলে তিন কিশোর নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় ১৪ আগস্ট রাতে নিহত কিশোর পারভেজ হাসান রাব্বির বাবা রোকা মিয়া যশোর কোতয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষকে আসামি করা হয়। এ মামলায় কেন্দ্রের সহকারী পরিচালকসহ পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়।
তারা হলেন- যশোরের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহাদী হাসান কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্যা আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাধায়ক (প্রবেশন অফিসার) মাসুম বিল্লাহ, ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর একেএম শাহানুর আলম, সাইকো সোস্যাল কাউন্সিলর মো. মুশফিকুর রহমান ও কারিগরি প্রশিক্ষক (ওয়েল্ডিং) ওমর ফারুক।
গ্রেফতারের পর পাঁচ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। রিমান্ড শেষে ওই পাঁচ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
একই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আদালতের নির্দেশে গত ১৬ ও ১৭ আগস্ট কেন্দ্রের বন্দি ৮ কিশোরকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। তারা হলেন- গাইবান্ধার খালিদুর রহমান তুহিন, নাটোরের হুমাইদ হোসেন ও মোহাম্মদ আলী, পাবনার ইমরান হোসেন ও মনোয়ার হোসেন, রাজশাহীর পলাশ ওরফে শিমুল ওরফে পলান, কুড়িগ্রামের রিফাত আহমেদ ও চুয়াডাঙ্গার আনিছুজ্জামান। আদালত তাদেরকে চারদিন করে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে । মঙ্গলবার তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে। এছাড়াও পাঁচ সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তিন কিশোর বন্দি হত্যার ঘটনায় কর্মকর্তা ও বন্দিসহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।