পানির কাজ সিন্ডিকেটের হাতে!

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাজের অগ্রগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। এমনকি যারা কাজ পাচ্ছেন, তারা কাজ শেষ না করেই সরে যাচ্ছেন এমন অভিযোগও উঠেছে। কাজের মান ও গতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশের পাশাপাশি এর কিছু কারণও তুলে ধরেছেন প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা। মাত্র কয়েকজন ঠিকাদারের সিন্ডিকেটে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সব কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই ঠিকাদার ঘুরে ফিরে কাজ পাচ্ছে। এতে ওই ঠিকাদার সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্প ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি কাজের মান নষ্ট হচ্ছে।

রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে গত ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত বৈঠকে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম ও কয়েকজন কমিটি সদস্য বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘ঠিকাদাররা চুক্তিমূল্যে কাজ করলে লোকসান হয়।’

এ সময় তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘মাননীয় প্রতিমন্ত্রী এবং তিনিসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একাধিকবার সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখেছেন শরীয়তপুর প্রজেক্টে ঠিকাদারের লোকসান হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ কাজ মাত্র দশ-এগারো জন ঠিকাদারের মধ্যেই রয়েছে। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সম্প্রতি পদক্ষেপ নিয়েছে। যাতে একজনের কাছে অনেক কাজ না যায়। এক ঠিকাদারের কাছে অনেক লিজ দেয়া হলে বিলম্ব হয় এবং প্রকল্প ফলপ্রসূ হয় না।’

এর সঙ্গে যোগ করে কমিটির সদস্য ও সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘কাজের মান ঠিক রাখতে যা করা দরকার সেভাবেই হিসাব করতে হবে। কাটাছেঁড়া করে হিসাব করলে কাজের মান ভালো হবে না। সরিষার মধ্যে ভূত আছে কিনা তা দেখার প্রয়োজন রয়েছে।’ প্রয়োজনে বিষয়টি পরিকল্পনা মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করার আহ্বান জানান তিনি।

কমিটির সদস্য শামশুল হক চৌধুরী বলেন, ‘প্ল্যানিং কমিশন প্রজেক্ট মূল্যের ৫ শতাংশ কম বেশি করে। সেখানে ৫ শতাংশ কম দিয়ে যদি ১০ শতাংশ ক্ষতি হয়, তাহলে কম না দিয়ে ৫ শতাংশ বেশি করলে কাজের মান ভালো হবে। এক্ষেত্রে ওটিএম এর মাধ্যমে কাজ করলে ভালো হয়।’

তিনি বলেন, ‘এক ঠিকাদার অনেকগুলো কাজ করলে সে কাজ কীভাবে সময়মতো শেষ হবে? তাই কোনো ঠিকাদার নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না করলে, তাকে আর একটি কাজ দেয়া ঠিক হবে না।’

এদের সকলের কথা শোনার পর পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বৈঠকে বলেন, ‘প্রজেক্ট তৈরি করে প্ল্যানিং কমিশনে পাঠালে তারা নীতিমালা অনুসারে ইভ্যালুয়েশন করে একনেকে পাঠায়। এরপর একনেক বৈঠকে প্রজেক্ট চূড়ান্ত হয়। যে রেট ঠিক করে দেয়া হয়, তাতে ঠিকাদারদের লাভ হওয়ারই কথা। কিন্তু ঠিকাদাররা ঠিক সময়ে কাজ শুরু করতে পারে না। সময়ের ব্যবধানে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পায়, তখন তাদের লোকসান হয়। বেশি লাভ করার লক্ষ্যে তারা সময়ক্ষেপণ করে ধীরগতিতে কাজ করে। এক প্রজেক্টের নামে ঠিকাদাররা ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে অন্য প্রজেক্টে কাজ করে।’

কমিটির সভাপতি রমেশ চন্দ্র সেন বলেন, ‘যখন যে ঠিকাদার কাজ নেয়, তখন সে দেখে শুনেই কাজ নেয়। কাজ করবে না এমনটি হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে যে রেট ঠিক করে দেয়া হয়, সে রেট মেনেই চলছে। এখন নতুন করে যদি রেট ঠিক করা হয়, তাহলে আবার প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ঠিক করতে হবে।’