রংপুরে ৯শ মণ্ডপে উৎসববিহীন দুর্গাপূজা

  • ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

অপেক্ষার পালা শেষ। দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় মাটি দিয়ে একেকটি প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে এসেছে পূর্ণতা। শৈল্পিক কারুকার্য আর রং তুলির নিপুণ ছোঁয়ার অলংকারে সেজেছে অনিন্দ্য সুন্দর প্রতিমাগুলো। আগমন ঘটেছে দুর্গাদেবীর।

বুধবার (২১ অক্টোবর) মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ। বৃহস্পতিবার দুর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবীর মহাষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হবে পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গাপূজা। ইতিমধ্যে মন্দিরে মন্দিরে প্রতিমা স্থাপন শুরু হয়েছে। এবার দেবীর আগমন দোলায়, তিনি ফিরবেন গজে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে করোনা মহামারির কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে হচ্ছে দুর্গাপূজা। শুধু উৎসবই নয়, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে দেবী দুর্গাকে স্বাগত জানানোর আমেজ থাকলেও মন্দিরে মণ্ডপে পূজায় থাকছে স্বাস্থ্যবিধির কড়া নির্দেশ। বছর ঘুরে দুর্গাদেবীর আগমনি বার্তায় করোনার কারণে ভাটা পড়েছে দুর্গোৎসবে।

বুধবার সায়ংকালে হয়েছে দেবীর বোধন। আর আগামীকাল সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠী বিহিত পূজা। সায়ংকালে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস। তবে মণ্ডপে মণ্ডপে থাকবে ঢাকের বোল, কাঁসর ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনিতে অশুভ শক্তিবধের প্রার্থনা। এ বছর রংপুর জেলায় ৯শ’র বেশি পূজামণ্ডপে সীমিত আয়োজনে হবে শারদীয় দুর্গাপূজা।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, এবার দুর্গাপূজায় কোনো উৎসব হবে না। হবে না কুমারী পূজাও। মন্দির বন্ধ হয়ে যাবে রাত নয়টার মধ্যে। জনসমাগম পরিহার করতে মন্দির কর্তৃপক্ষ প্রসাদ বা খিচুড়ি বিতরণ থেকেও বিরত থাকবে। হবে না বিজয়ার শোভাযাত্রা। করোনা পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ লাভের জন্য করা হবে বিশেষ প্রার্থনা।

রংপুর নগরীর আনন্দময়ী সেবাশ্রম মন্দিরের পুরোহিত রিপন চক্রবর্তী জানান, এবার করোনার কারণে সর্বক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পূজা অর্চনা করা হবে। পূজার পরিবেশ যাতে বিঘ্ন না হয়, সেজন্য শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ লোক সমাগম নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। দেবীদূর্গা এবার দোলায় চড়ে মর্তলোকে এলেও শস্য শ্যামলায় পরিপূর্ণ করে দিয়ে গজ বা হাতিতে করে স্বর্গে ফিরে যাবেন বলেও তিনি জানান।

অন্যদিকে ধর্মসভা রামগোবিন্দ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক পার্থ বোস বলেন, করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি রোধে পূজা উদযাপন পরিষদ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারিভাবে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা সেই সব বিধিনিষেধ মেনেই এবার দুর্গাপূজার আয়োজন করেছি। মুখে মাস্ক ছাড়া মন্দিরে কোনো ভক্তদের প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মণ্ডপে আঞ্জলি দেয়ার সময় গোল করে দূরত্ব বজায় রেখে ২৫ জন করে অংশ নেবে। এবার প্রসাদ বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিধিনিষেধ আছে। এ কারণে আমরা এবার উৎসব করছি না, শুধু পূজা করব।

পূজার সার্বিক প্রস্তুতি প্রসঙ্গে রংপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অজয় প্রসাদ বামন বলেন, রংপুর জেলায় ৮৯৮টি পূজামণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমাদের সকল প্রস্তুতি শেষ। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সন্তোষজনক। ২৬টি নির্দেশনা মেনে এবার উৎসব নয়, শুধু দেবী দুর্গার পূজা করা হবে।

এদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের ২৬ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের পাশাপাশি চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মধূসুদন রায়।

তিনি জানান, মেট্রোপলিটন এলাকার বাহিরে জেলায় এবার ৭৩২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। করোনার কারণে এবার কোনো মণ্ডপেই স্থায়ী পুলিশ টিম থাকবে না। তবে মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং টিম, মোটরসাইকেল পেট্রোলিং টিম এবং সাদা পোশাকে পুলিশি তৎপরতা থাকবে। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

পূজার সময়সূচি: রংপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২২ অক্টোবর দুর্গাদেবীর বেলষষ্ঠী পূজা, ২৩ অক্টোবর মহাসপ্তমী বিহিত পূজা, ২৪ অক্টোবর মহাষ্টমী, ২৫ অক্টোবর এক দিনে মহানবমী বিহিত পূজা এবং ২৬ অক্টোবর মহাদশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে করোনাকালের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।