মানিকগঞ্জে কলেজ ছাত্র খুনের ঘটনায় ৫ বন্ধু গ্রেফতার
জাতীয়
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে প্রেম ঘটিত বিষয়ের জের ধরে ঢাকার বেসরকারি কলেজ ছাত্র মো. তানভীর আহাম্মদ জিসানকে পাঁচ বন্ধু মিলে পাটুরিয়া ফেরিঘাটের অদূরে পদ্মা নদীর চরে নিয়ে রশি দিয়ে হাত বেধে চাকুর আঘাতে হত্যা করে। তার শরীরের ৩২ টি চাকুর আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত হলে নদীতে ভাসিয়ে দেয়। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে শিবালয় থানা পুলিশ।
নিহত জিসান ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ এলাকার শাহিন আলমের ছেলে এবং মোহাম্মদপুর হাজী মুকবুল হোসেন ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে আটককৃতরা।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) আসামিদের ১০ দিন রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, শিবালয় উপজেলার পাচুরিয়া এলাকার জুলহাসের ছেলে রাব্বি হোসেন ওরফে প্রান্তিক (১৮), ছোট শাকরাইল এলাকার ঝাড়ু মোল্লার ছেলে নাজমুল(১৮), সমেজ মোল্লার ছেলে শরিফ হোসেন (১৮), জামাল মোল্লার ছেলে আজিজুল (১৮), ঢাকাইজোড়া এলাকার শামীম হাসানের ছেলে হাসিবুন হাসান (১৮)।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ১৫ তারিখে জিসান ঢাকা থেকে নানার বাড়ি যাবার কথা বলে বাসা থেকে নিখোঁজ হন। জিসানের পরিবার অনেক খোঁজাখুজির পর মোহাম্মদপুর থানায় একটি জিডি করেন। এদিকে গত ১৮ তারিখে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের কাছে পদ্মায় অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জিসানের পরিবার ওই যুবকের জামাকাপড় দেখে নিশ্চিত হন ওই অজ্ঞাত যুবক তাদের জিসান। পরে বিষয়টি ঢাকার মোহাম্মদপুরের পুলিশের মাধ্যমে শিবালয় থানায় বিষয়টি অবগত করে। এঘটনায় শিবালয় থানা পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃহস্পতিবার সারা রাত অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের আটক করতে সক্ষম হন।
বিজ্ঞাপন
শিবালয় থানার ওসি ফিরোজ কবির বলেন, আমরা জিসানের বিষয়টি ওই থানা থেকে অবগত হবার পরই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ট্র্যাক্ট করেছিলাম। তখন জিসানের কল লিস্টে প্রান্তিক নামের একজনের ঠিকানা পাই। কিন্তু কোনভাবে আসামির বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছিলাম না। পরে অনেক তদন্ত করে জানতে পারি প্রান্তিক নামের ছেলেটির আরেক নাম রাব্বি। এক অভিযানে রাব্বিকে আটক করলে বিষয়টি সামনে আসতে থাকে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) আশীষ কুমার সান্যাল জানান, এ ঘটনায় জিসানের বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আসামিদের কোর্ট প্রেরণ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিবালয় সার্কেল) তানিয়া সুলতানা জানান, আসামিদের ভাষ্য মতে প্রধান আসামি রাব্বির সাথে এক মেয়ের প্রেমের সর্ম্পক ছিল। ওই মেয়ের সাথে দেখা করতে ঢাকায় গেলে জিসানের কয়েকজন বন্ধু রাব্বির মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় এবং অপমান করে।
এরপর থেকে রাব্বি প্রতিশোধ নেবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। জিসান পূর্ব পরিচিত থাকার সুবাদে রাব্বি সুযোগ খুঁজতে ছিল। জিসানের প্রেমিকার নানীর বাড়ি শিবালয়ের ছোট শাকরাইল এলাকায় থাকায় তাকে দেখা করতে খবর দেয় রাব্বি। চলতি মাসের ১৫ তারিখে রাতে জিসান গাড়ি যোগে পাটুরিয়া ঘাটে এসে নামে। এসময় রাব্বিসহ পাঁচ বন্ধু মিলে তাকে পাটুরিয়া ট্রাক টার্মিনালের কাছে নদীর চরে নিয়ে রশি দিয়ে হাত বেঁধে চাকু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। পরে নদীতে ভাসিয়ে দেয়।
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম জানান, মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিবালয় সার্কেল ও শিবালয় থানার যৌথ প্রচেষ্টায় মামলার রহস্য উদঘাটনসহ আসামিদের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি আদায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা নিঃসন্দেহে মাইলফলক।
রাজশাহীতে প্রথমবারের মতো নারীদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে একটি ব্যতিক্রমী ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী। নারী উন্নয়ন বিষয়ক সংগঠন লিসেনিং ওয়ার্ডসের উদ্যোগে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। অংশগ্রহণকারী সকল আলোকচিত্রীই নারী, আর দর্শকরাও শুধুমাত্র নারী। সৃজনশীল কাজের প্রতি নারীদের আগ্রহ বাড়াতে এবং তাদের দক্ষতা তুলে ধরতে এমন আয়োজন দেশব্যাপী দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে মনে করছেন আয়োজকরা।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) থেকে রাজশাহীর ভদ্রায় অবস্থিত ফোরসাইট স্কুল প্রাঙ্গণে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।
অনুষ্ঠিত এই এক্সিবিশনে প্রায় শতাধিক ছবি থেকে বাছাই করা অর্ধশতাধিক ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে।
আয়োজকরা বলছেন, এই ধরনের উদ্যোগ নারীদের সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করবে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। এ প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া আলোকচিত্রীদের মধ্যে সেরা তিনজনকে সেরা আলোকচিত্রী এওয়ার্ড প্রদান করা হবে। আরও পাঁচজনকে বিশেষভাবে মনোনীত করা হবে।
আয়োজকরা জানান, নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে লিসেনিং ওয়ার্ডস। নারীদের সৃজনশীলতার বিকাশে তাদের এ উদ্যোগ আলোকচিত্র শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
দর্শক এবং অংশগ্রহণকারীরা এ আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তারা বলছেন, নারীদের এমন সৃজনশীল কাজের সুযোগ দেওয়া হলে তারা আরও বেশি আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবেন। রাজশাহীতে এমন একটি আয়োজন নারীদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
প্রদর্শনীতে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আলোকচিত্রী নওরিন আনসারি। তার সাদা-কালো ছবি দেশের নানা জায়গায় প্রশংসা কুড়িয়েছে।
তিন দিনের মধ্যে ঢাকা মহানগর এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেয়া এমন নির্দেশনার প্রতিবাদ জানিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর জুরাইন রেলগেট এলাকায় বিক্ষোভে নেমেছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকেরা। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে রেলচলাচল। একই সঙ্গে এখন পর্যন্ত তিনটি ট্রেন আন্দোলনের কারনে মাঝ পথে আটকে আছে বলেও জানা গেছে।
শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) বার্তা২৪.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ রেলওয়ে কন্ট্রোলরুম।
কন্ট্রোলরুমে ডিউটিরত কর্মকর্তা থেকে বার্তা২৪.কমকে জানানো হয়, জুরাইন রেলগেটে অটোরিকশা চালকরা আন্দোলন করছে। এর ফলে রেললাইন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
কন্ট্রোলরুম থেকে আরও জানানো হয়, ঢাকায় নকশীকাঁথা নামের একটি ট্রেন বসে আছে। শ্যামপুরে বসে আছে নারায়ণগঞ্জ কমিউটার ৫ এবং মাওয়াতে বসে আছে আন্তঃনগর মধুমতী। ঢাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ এবং পদ্মা লিংকের ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। বাকিগুলো সব ঠিকঠাক আছে।
এর আগে গতকাল প্রথম দিন রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন অটোরিকশা চালকরা। এতে বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষজন।
উল্লেখ্য, গত ১৯ নভেম্বর (মঙ্গলবার) ঢাকা মহানগর এলাকায় তিন দিনের মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
আদালতের ওই নির্দেশনার পর পরের দিন বুধবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর দয়াগঞ্জ মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রিকশাচালকরা। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে রিকশাচালকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রিকশাচালকরা ওইদিন কয়েক ঘণ্টা রাজধানীর কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে আন্দোলন করেন। তাতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
গাইবান্ধায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আয়োজিত "জনতার বাজারে" কম দামের সবজির পাশাপাশি গরুর মাংসও বিক্রি করছেন ছাত্ররা।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকাল ৮টার দিকে সবজির পাশাপাশি আজই প্রথম এই গরুর মাংস বিক্রি শুরু করেন তারা। প্রতি কেজি মাংসের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬২০ টাকা। যা স্থানীয় বাজারে তুলনায় কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কম।
গাইবান্ধা শহরের জিরো পয়েন্টে (পুরাতন জেলখানা মোড়) ছাত্রদের এই কম মূল্যের জনতার বাজার। যেখানে জেলার গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা-সাঘাটা, গাইবান্ধা-বালাসি ও গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়ক এসে মিলিত হয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে জেলা শহরের পুরাতন জেলখানা মোড়ে ছাত্রদের "জনতার বাজারে" গিয়ে দেখা যায়, সবজির দোকানের পাশেই বসানো হয়েছে মাংসের দোকান। সেখানে মাংস ক্রয়ের টোকেন হাতে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে মাংস নিতে অপেক্ষা করছেন ক্রেতারা। বিশৃঙখলা এড়াতে আগেই মাংসের দাম নিয়ে টোকেন হাতে ক্রেতাদের লাইনে দাঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। এসময় লাইন ছাড়াও মাংস কিনতে আসা ক্রেতাদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।
এসময় কম দামে মাংস কিনতে আসা বেসরকারি এনজিওতে চাকরিজীবী মিজানুর রহমান বলেন, এখানে বাজারের থেকে ৬০ টাকা কমে মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। কম দামে পাওয়ায় এক কেজি মাংস কেনার জন্য টোকেন হাতে দাঁড়িয়েছি।
মিষ্টি ব্যবসায়ী লাল মিয়া বলেন, দেড় কেজি মাংস কিনবো। দাম বাজারের থেকে কম। আমরা চাই ছাত্রদের এই আয়োজন অব্যাহত থাক। বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে আয়োজকদের সকলের সহযোগিতা করা উচিত।
এসময় গাইবান্ধার ছাত্র প্রতিনিধি আবুজর গিফারি রাফি বলেন, গাইবান্ধার জনতার বাজারে আজই প্রথম সবজির পাশাপাশি গরুর মাংস বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে টাকা ৬২০। স্থানীয় বাজারের থেকে যা কেজিতে ৬০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত কম। একজন ক্রেতাকে ২৫০ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ দুই কেজি পর্যন্ত মাংস দেওয়া হচ্ছে।
এসময় এক প্রশ্নের জবাবে রাফি জানান, শহরের এক যুবক ব্যবসায়ী আমাদেরকে কোনো ধরণের মুনাফা ছাড়াই গরু ক্রয়ের জন্য ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন। অবশিষ্ট টাকা যোগ করে আমরা ৯৩ হাজার টাকায় স্থানীয় হাট থেকে একটি ষাঁড় গরু ক্রয় করেছি। তবে, ক্রেতাদের চাহিদার তুলনায় মাংস অনেক কম রয়েছে। সকলের সমর্থন থাকলে প্রতি সপ্তাহেই আমাদের মাংস বিক্রির এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে।
বিনা লাভে ছাত্রদের গরু ক্রয়য়ের সিংহভাগ টাকা দেওয়া ব্যবসায়ী যুবক মাহফুজ বলেন, "ছাত্র জনতার সবজির বাজারকে সমর্থন জানিয়ে কোনো মুনাফা ছাড়া গরু ক্রয়ে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছি। এখানে ২৫০ গ্রাম মাংসও বিক্রি করা হচ্ছে। এতে নিম্নবিত্ত মানুষরাও কম দামেই মাংস কিনতে পারবে। মূলত এই কারণেই আমি ডোনেট করেছি।
কাঁচা বাজারের দায়িত্বে থাকা ছাত্র প্রতিনিধি জিসান জানান, শুধু শুক্রবার আমাদের জনতার বাজার খোলা থাকে। তবে যেহেতু আজ গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। সেজন্য সবজির দোকানও চালু রেখেছি।
তিনি জানান, আমাদের জনতার বাজারে স্থানীয় বাজার থেকে ১০ টাকা কমে কুমড়া ৪০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, ৫ থেকে ৮ টাকা কমে বাঁধাকপি ৪০ টাকা, ১৫ থেকে ২৫ টাকা কমে করলা ৪৫ টাকা, ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে মুলা ৩০ টাকা এবং ১৫ থেকে ৩০ টাকা কমে পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহামুদ আল হাসান বলেন, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে ছাত্ররা তাদের জনতার বাজার শুরু করেছে। মূলত কাঁচাবাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে তাদের এই আয়োজন। আমরাও সেখান থেকে কম-বেশি বাজার করে থাকি। তাদের সার্বিক বিষয়ে আমাদের নজর রয়েছে।
জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ছাত্ররা ন্যায্য মূল্যে সবজি বিক্রি করবে বলে তাদেরকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। যা দিয়ে তারা জনতার বাজার নামক সবজির বাজার শুরু করেছিলো। আজ সেখানে তারা গরু জবাই করেছে। এই কার্যক্রমে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর সকালে গাইবান্ধায় "জনতার বাজারের" উদ্বোধন করেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ। সেদিন থেকেই সেখানে সবজি বিক্রি করছে ছাত্ররা। স্থানীয় বাজারে সবজির দাম স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন ছাত্র প্রতিনিধিরা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় একরের পর একর ‘বনের জায়গা’ দখল করে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন বাদশা গ্রুপ। সামান্য জায়গায় কিনে পাশে থাকা শত কোটি টাকা মূল্যের বনের জমি দখল করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে গ্রুপটির বিরুদ্ধে। দখলকৃত জমি উদ্ধারে বন বিভাগ একাধিক মামলা দায়ের করলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। দায়সারা গোছের এসব মামলা যোগসাজশে থেকেছে আলোচনার বাইরে। বার বার উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হলেও এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে বাদশা গ্রুপের এ সাম্রাজ্য ।
বনের জমি খেকো বাদশা গ্রুপের মালিক বাদশা মিয়া। ১৯৭৬ সালের দিকে জীবিকার তাগিদে মাদারীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে সুতার ব্যবসা শুরু করেন। একপর্যায়ে সুতার গদির মালিক হন বাদশা মিয়া। সুতার ব্যবসা শুরু করলেও প্রথমে স্থাপন করেন তৈরি পোশাক কারখানা। ২০০০ সালে গড়ে তোলেন পাইওনিয়ার সোয়েটার লিমিটেড। এরপর ২০০৪ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় একে একে স্থাপন করেন বাদশা টেক্সটাইল লিমিটেড এবং কামাল ইয়ার্ন লিমিটেড।
বাদশা মিয়া তার বাহাদুরিতে বনের একরের পর একর জমি দখল করে গাছ কেটে নির্মাণ করেছেন বড় বড় কারখানা। প্রকৃতিকে বিপর্যস্ত করে হয়েছেন আর্থিকভাবে বিত্তবান। নিজে বিত্তবান হলেও ব্যাপক ক্ষতি করেছেন বনায়নের।
বন কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, লোকবলের সংকট, পুলিশি সহায়তা না পাওয়া, মামলা জটিলতা ও নিয়মের বেড়াজালে উদ্ধার করা যাচ্ছে না বনের সরকারি জায়গা। ফলে দিন দিন বনের জায়গার বেদখল হয়ে যাচ্ছে।
ভালুকায় বাদশার সাম্রাজ্যে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশেই বনের শত শত একক জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছেন বাদশা গ্রুপের বিশাল কারখানা। যন্ত্রচালিত রিকশাতে করেও একপাশ থেকে অন্যপাশে যেতে লম্বা সময় কেটে যায়। মহাসড়কের একপাশে বাদশা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা। ওপর পাশে অবস্থিত পাইওনিয়ার সোয়েটার লিমিটেডের কারখানা। বাইরে থেকে দৃশ্যমান বিশাল এসব স্থাপনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ব্যক্তিগত প্রভাব এবং অসাধু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের জমির সঙ্গে থাকা বনের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে এসব কারখানা।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, ভালুকা উপজেলায় হাইওয়ে সড়কের পাশে ২০০৪ সালে একে একে স্থাপন করেন বাদশা টেক্সটাইল লিমিটেড এবং কামাল ইয়ার্ন লিমিটেড। সোনার চেয়েও মূল্যবান শত শত কোটি টাকার মূল্যের জমি দখল করে সীমানা প্রাচীর তুলে জমি দখল করে তারা। পরে পরিস্থিতি বুঝে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন বাদশা মিয়া।
বন বিভাগের মামলা সূত্রে জানা যায়, ভালুকা উপজেলাধীন ভালুকা রেঞ্জের হবিবাড়ির সিএস ৬৩ দাগের ১০ দশমিক ৭২ একর, ৬৯ দাগের ২৭ দশমিক ৫০ একর, ৭৪ দাগের ২৩ দশমিক ৪০ একর, সেইসাথে ৬৩ দাগের ১০ দশমিক ৭২ একর, ৬৯ দাগের ২৮ দশমিক ও ৭৪ দাগের ২৬ দশমিক ৪১ জমি দখল করেছে বাদশা গ্রুপ। সেই সময় নিম্ন আদালত বাদশা মিয়ার পক্ষে রায় দেয়।
বনবিভাগ মেহেরাবাড়ীর সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জেলা প্রশাসক প্রস্তাব দিয়েছিলো। কিন্তু এই উচ্ছেদ অভিযান এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। মেহেরাবাড়ীর মৌজার জমি উদ্ধারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ২০১৮ সালে ময়মনসিংহ জেলা যুগ্ম জেলা আদালত-৩-এ মামলা করেন বাদশা গ্রুপের বিরুদ্ধে। মামলা সূত্রে জানা যায়, ভালুকা উপজেলাধীন মেহেরাবাড়ীর মোজার ৬৩,৭৪ ও ৬৯ এই তিনটি দাগে বাদশা গ্রুপের মালিক বাদশা মিয়া ৬১ দশমিক ৫২ শতাংশ জায়গা দখল করে।
সরকারের এসব সম্পত্তি উদ্ধার ও বনভূমিতে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তৎকালীন ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাইদুর রশীদ ২০১৮ সাথে জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও ভালুকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত চিঠি দিয়ে সহায়তা চেয়েছিলো। দখলকৃত জমিতে যৌথ জরিপ নিষ্পত্তি না হওয়া সকল পক্ষকে স্থিতিঅবস্থা বজায় রাখতে অনুরোধ জানায় বনবিভাগ। কিন্তু সেই সময়কার প্রশাসন বনবিভাগকে কোনরকম সহায়তা করেনি বলে অভিযোগ করেছে বনবিভাগ। ফলে কোনরূপ বাধা ছাড়ায় নির্বিঘ্নে বাদশা গ্রুপ তাদের সাম্রাজ্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চালিয়ে যায়। বেদখল হতে শুরু করে বনবিভাগের এককের পর একর জমি।
বাদশা গ্রুপের দখল সাম্রাজ্য তৈরিতে পত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে বনবিভাগের বিরুদ্ধে। বাদশা গ্রুপ বনবিভাগের কত একর সম্পত্তি দখল করে আছে সেটা নিয়ে লুকোচুরি করছে। বনবিভাগের হিসেব মতে, এই গ্রুপটি দু'দাগে মোট ২০ একর সম্পত্তি দখল করার হিসেব দেখাচ্ছে। কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাদশা গ্রুপের সমস্ত সম্পত্তি নাকি বনবিভাগের দখল করা জমি। এটা কোনভাবেই মাত্র ২০ একর হতে পারে না।
এদিকে, বাদশা গ্রুপ ছাড়াও ভালুকা বনভূমির জমি বেদখলের সঙ্গে জড়িত রয়েছে দেশের নামিদামি শিল্পগোষ্ঠী। ঢাকা ময়মনসিংহ হাইওয়ের ভালুকা অংশের মহাসড়কের যেদিকে চোখ যায় সেদিকে দখলের রাজত্ব। বনের জায়গায় কেউ করেছেন বাড়ি কেউ করেছেন পার্ক ও কলকারখানা। একদিকে বনের জায়গায় কলকারখানা নির্মাণ অন্যদিকে কারখানার বর্জ্য সরাসরি খালের লাইন থাকায় বিপর্যস্ত প্রকৃতি।
এই বিষয়ে কথা বলতে বনবিভাগের ভালুকা রেঞ্জের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ দপ্তরে যায় বার্তা২৪ কম-এর প্রতিবেদক। তবে হারুনুর রশীদ বন বিভাগের কি পরিমাণ জমি বেদখলে আছে- তা জানতে রাজি হননি।
ভালুকা উপজেলা জবর দখলের মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি হিসেব করে জানাবেন, এই মুহূর্তে তার মনে নাই।
বাদশা গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাদশা গ্রুপের সব কারখানা বনের জায়গায় দখল করে নির্মাণ করা। বনের জায়গা দখলের জন্য এই গ্রুপের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা রয়েছে। তবে এই মুহূর্তে সংখ্যাটা বলা যাচ্ছে না।’
দখল হওয়া বনের জায়গা উদ্ধারে কি ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের তিনি বলেন, ‘দখল করা জায়গায় স্বয়ং এমপি সাহেব আমাদের ঢুকতে দেননি, গাছও লাগাতে দেয় নি। তাছাড়া সেখানে আমাদের ফরেস্ট অফিস পর্যন্ত নেই।’
বনের জায়গা দখল করে বাদশা গ্রুপের কারখানা নির্মাণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাদশা মিয়ার সাথে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে ফোনে মেসেজ পাঠানো হয়। তারও উত্তর দেননি বাদশা মিয়া।
‘পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া বনের জমি দখল করে কারখানা স্থাপনের সুযোগ নেই’ বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
‘বনের জায়গা দখল বা সরকারের খাস জমি দখল করে কলকারখানা স্থাপন করার কোন সুযোগ নাই। সাধারণত পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া কোন কারখানা করার এখতিয়ার নাই’- সেখানে বাদশ গ্রুপ কিভাবে বনের জায়গা দখল করে কারখানা স্থাপন করে-এই প্রশ্ন তোলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
'বনের জায়গা দখল নিতে স্থানীয় প্রশাসন, বন বিভাগের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নিয়ে একটি চক্র কাজ করে। যার ফলে আইনি প্রক্রিয়ার সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দিকে যায়।'- বলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।
‘বনের জায়গা দখল বন্ধে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা নেওয়ার কথা পরিবেশ অধিদপ্তরের। কিন্তু তারা যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ। যা বিভিন্ন প্রতিবেদন ও আমাদের গবেষণায় ওঠে এসেছে। বনের জমি দখলকারীরা যে পরিচয়ের হোক- তাদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এখানে আইনের কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে পরবর্তীতে এই দখল কার্যক্রম বন্ধ হবে।‘- বলেছিলেন তিনি।
দখল ঠেকাতে এখন ‘অপূর্ব সুযোগ’ এখন উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকার যদি ভালুকার বনভূমি উদ্ধারে কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। ফলে শুধু ভালুকা নয় অন্য বনভূমির জমি উদ্ধার সহজ হবে। কারণ এই সরকারের ভয়ের কিছু নাই, তাদের কোন রাজনৈতিক এজেন্ডা নাই-হারাবার কিছু নাই। বর্তমান সরকারের যেহেতু কোন রাজনৈতিক পরিচয় নাই, তাই তাদের উচিত হবে দখলদারদের চিহ্নিত করে জবাবদিহিতার মধ্য নিয়ে আসা।’
ভালুকায় বনের জায়গা বেদখল নিয়ে প্রধান বন সংরক্ষক কর্মকর্তা মোঃ আমীর হোসাইন চৌধুরী বার্তা২৪ কমকে বলেন, ভালুকা সম্পত্তি নিয়ে অনেক সমস্যা রয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় মামলা হয়েছে। সেগুলো সমাধান না হলে আমরা কিছু করতে পারছি না।
বনের জমি উদ্ধারের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উচ্ছেদ করার ক্ষমতা আমার নেই। এটি জেলা প্রশাসক, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট করবেন। আমরা যেটা করেছি বনের জায়গা উদ্ধারে সব প্রস্তাব জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। নিয়ম হচ্ছে তারা কাগজ পত্রগুলো যাচাই বাছাই করে মামলা রজু করে উচ্ছেদ করে আমাদের কাছে ফেরত দেবেন।
উচ্ছেদ কার্যক্রমের জটিলতা নিয়ে প্রধান বন সংরক্ষক কর্মকর্তা বলেন, উচ্ছেদের কিছু নিয়ম কানুন আছে। রেকর্ড কার নামে সেটা উনি দেখবেন। উচ্ছেদ করার প্রস্তাব আমি দিলাম কিন্তু রেকর্ড সমস্যা থাকলে উনি আবার উচ্ছেদ করবেন না। জমি-জমার জটিলতা অনেক। একটি মামলা করলে সারাজীবন চলে যাবে এটার আর সমাধান হয় না।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের অধীন ভালুকা রেঞ্জ। বনের মধ্যে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা ভালুকা রেঞ্জের। এই রেঞ্জের অধীনে থাকা মল্লিকবাড়ি বিট মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। ১৫৯৯ একর জমির মালিক হয়েও মল্লিকবাড়ি বন বিট এখন নিজেই ভূমিহীনে পরিণত হয়েছে। শুধু ভূমিহীন না বলে বাস্তহারা বললেও ভুল হবে না, কারণ তার নিজের দাঁড়াবার জন্য সামান্য ঠাঁইও নেই। অন্য বিটের অফিসে আশ্রিত হিসেবে রয়েছেন খোদ বিট অফিসার।
ভালুকা রেঞ্জ ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ের পাশে অবস্থিত হওয়ায় জমি সোনার চেয়েও দামি। এক শতাংশ জমির দাম ক্ষেত্র বিশেষে ১০ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এখানে জমি জবরদখলে নামিদামি কোম্পানিও পিছুপা হয়নি। স্কয়ার, ওরিয়ন, এনভয়, লভেলো আইসক্রিম, লাবিব ডাইং ও ব্র্যাকের মতো জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান বনের জায়গা দখলে রেখেছে। বন বিভাগ মামলা দিয়ে তাদের দায় সেরেছে।