বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য সরকারের অনেক প্রকল্প রয়েছে, তেমনি বেসরকারি উদ্যোগেও কাজ হচ্ছে। তবে প্রচারনা এবং সচেতনতার অভাবে সুবিধা এবং উপকারভোগের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিরা। ফলে সকল উদ্যোগ এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের মধ্যে সহজ যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সমন্বিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এই সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে একটি কেন্দ্রীয় তথ্য ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেন তারা।
বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে প্রেরণা ফাউন্ডেশন এবং দৈনিক সমকাল ও দ্যা ডেইলি স্টার এর উদ্যোগে সোমবার (ডিসেম্বর ০৭) সন্ধ্যায় 'প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কল্যাণে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ' শীর্ষক এক বিশেষ সংলাপে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট সরকারি, বেসরকারি এবং উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা এই সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির মূল বিষয় কাউকে পেছনে ফেলে অগ্রগতি নয়। এসডিজিতে প্রতিবন্ধীদের মূল স্রোতধারায় আনার বিষয়টি রয়েছে। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের বিষয়ও আছে। নগরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষরা কীভাবে চলবে, সে বিষয়টিও আছে। আছে অংশীদারিত্বের বিষয়। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মন্ত্রণালয়গুলোর মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের কথা মাথায় রাখা হচ্ছে।
প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের শতভাগ ভাতা দেয়া হয়, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়া হয় সকলকে সমান ভাবে, তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাদের শিক্ষাকে আরো সহজ করা হচ্ছে, তবে প্রচারণা এবং সচেতনতার অভাবে অনেকেই এই সেবাগুলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একটি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সচেতনতা এবং প্রচারনা বৃদ্ধির উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।
প্রেরণা ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির পরিচালক মুবিনা আসাফ বলেন, বিশেষ মেধা সম্পন্ন ব্যাক্তিদের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষমতায়ন এবং দেশের মূলধারার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা প্রয়োজন। তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তোলা এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে মূলধারার কর্মস্রোতে অর্ন্তভুক্ত করার জন্য সকলের সমন্বয়ে একটি যৌথ পরিকল্পনা থাকতে হবে।
এই সমন্বয়ের উদ্যোগ হিসেবে ‘অগ্রগতির অনুপ্রেরণা’ নামে একটি ওয়েবসাইট ভিত্তিক প্লাটফর্ম চালুর তথ্য প্রদান করে তিনি বলেন, একটি সমন্বিত তথ্য সেবা গড়ে তোলার জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি, বেসরকারি সকল উদ্যোগ এখানে উল্লেখ থাকবে। একই সঙ্গে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষেরা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা যেমন বলতে পারবেন, তেমনি প্রয়োজনীয় তথ্যও পাবেন। একটি কেন্দ্রী তথ্য কেন্দ্র থাকলে সেখান থেকে সংশ্লিষ্টরা চ্যালেঞ্জগুলোকেও চিহ্নিত করতে পারবেন।
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষের জন্য একটি অর্ন্তভুক্তিমূলক ব্যবসায়িক মডেল নিয়ে কাজ করছে প্রেরণা ফাউন্ডেশন। তাদেরকে স্বনির্ভর করতে দীর্ঘ মেয়াদী টেকসই জীবিকা নির্বাহ নিশ্চিত করতেই প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান মুবিনা আসাফ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরোডিজ অর্ডার অ্যান্ড অটিজমের (ইপনা) প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক ডা. মাজহারুল মান্নান বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে সরকার অনেক কাজ করছে। তবে ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যেককে নিজের বিবেক জাগ্রত করতে হবে। প্রতিবন্ধীদের অধিকারের বিষয় সবাইকে চিন্তা করতে হবে। প্রতিবন্ধীদের অধিকারের বিষয়টি মানুষের চিন্তাধারায় প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।
বিশেষ এই সংলাপে আলোচক হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অটিজম সেলের প্রধান সমন্বয়ক যুগ্মসচিব ডা. এ এম পারভেজ রহিম, এডিডি ইন্ট্যারন্যাশনাল বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর শফিকুল ইসলাম।
দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির সঞ্চালনায় সংলাপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, দ্যা ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম।