পুলিশ উল্টে রাখছে রিকশা, কি অপরাধে?

  • নাজমুল হাসান সাগর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পুলিশ উল্টে রাখছে রিকশা, কি অপরাধে?

পুলিশ উল্টে রাখছে রিকশা, কি অপরাধে?

রাজধানীর কলাবাগান চেকপোস্ট। লকডাউনের প্রথম দিন। হুট করেই এক রিকশা চালকের ওপর গর্জে উঠলেন একজন পুলিশ সদস্য। কিছু বুঝে ওঠার আগেই উপর্যুপরি কয়েকটি চড়, থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন চালকের গালে মুখে! রোদে পুড়ে কালো হওয়া মুখ আঘাতে লাল হয়ে গেলো! হতবিহ্বল দৃষ্টি নিয়ে বোবার মতো তাকিয়ে থাকলেন রিকশাওয়ালা! এক হাতে রিকশার হ্যান্ডেল সামলাচ্ছেন আর অন্য হাত বোতাম খোলা বুকে চেপে ধরে আছেন! রিকশাচালকের চোখ ছলছল! কিছুক্ষণ পর চোখ গড়িয়ে পড়ল জল।

ঘটনাটি কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরের। ঘটনাটির বর্ণনা দিচ্ছিলেন রিকশায় থাকা যাত্রী মেহেরাজ সম্রাট।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুর একটা। ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার এলাকার রাসেল স্কয়ার পুলিশ চেকপোস্টের অদূরে রাস্তায় চারটি রিকশা উল্টে রাখা হয়েছে। পাশেই রোড ডিভাইডারে লাগানো বট গাছের নিচে সারিবদ্ধভাবে বসে আছেন চারজন রিকশা চালক। চার চালকের চোখে-মুখে যেন রাজ্যের অন্ধকার। ছায়ায় বসেও অনবরত ঘেমে স্নান হয়ে যাচ্ছেন তারা। কারণ এসব দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের একমাত্র জীবীকার বাহন যখন আটকা থাকে তখন আসলে কপাল চাপড়ানো আর মাথায় হাত দেওয়া ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা থাকে না।

এমন ঘটনা লকডাউনের পরের দিনগুলোতেও থেমে নেই। কোথাও রিকশা উল্টানো, কোথাও রিকশাচালককে কান ধরে উঠবস করানোর দৃশ্য চোখে পড়েছে। আজ শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) পর্যন্ত নগরীর প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন
কোথাও রিকশা উল্টানো, কোথাও রিকশাচালককে কান ধরে উঠবস করানোর দৃশ্য চোখে পড়েছে

অদৃশ্য শত্রু ভাইরাসের সাথে লড়তে দেশব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধ। সতর্ক অবস্থানে পুলিশ। নাগরিক চলাচল নিয়ন্ত্রণে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে স্থায়ী ও অস্থায়ী চেকপোস্ট। রিকশা ছাড়া ভারী কোন যানবাহন সড়কে নেই বললেই চলে। চেকপোস্টে প্রত্যেকটি রিকশা ধরে ধরে যাত্রী ও চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কাউকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে আবার কাউকে উলটো পথে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

শুক্রবার সকালে শ্যামলী সিনেমা হলের সামনে এভাবে প্রায় দশটি রিকশা উল্টে রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট কয়েক ঘণ্টা পরে আবার সেগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

আইনুদ্দিন নামে এক রিকশাচালকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের যাদের রিকশা চালকদের পরিচয় পত্র নাই তাদের রিকশা এভাবে উলটে রাখা হয়।কখনো কখনো চাকার হাওয়া ছেড়ে দেয়। আবার কখনো বা রিকশার সিট নিয়ে রেখে দেয়। হয়ত আমার মতো কেউ পরিচয়পত্র আনতে ভুলে গেছে বা নতুন হওয়ায় পরিচয়পত্র পায়নি এখনো তাই আমাদের রিকশা উল্টে রাখা হয়েছিলো। যেকারণেই হোক এভাবে রিকশা বন্ধ করে রাখলে আমাদের হাত, মুখে যায় না। অনাহার, উপোষ থাকতে হয়। তারপর জমার টাকা তো আছেই।

পাশে থেকেই আরেক রিকশাওয়ালা বলে উঠলেন, 'মামা এইসব কার্ড, ফার্ড কিছুই না। এডি নির্ভর করে পুলিশের মর্জির ওপর। হ্যারা চাইলেই রিকশাওয়ালাগো যেমনে খুশি হেমনে নাচাইতে পারে। রিকশাওয়ালাগো মারলে ধরলে কিছুই হয় না এইটা হইল আসল বিষয়। ঢাকা শহরে এত রিকশা ড্রাইভার, কয়ডার আইডেন্টি কার্ড আছে? বেশিরভাগই কার্ড ছাড়া রিকশা চালায়। কার্ড একটা অজুহাত।

আজ শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) পর্যন্ত নগরীর প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে

চলতি পথে কথা হয় আরেক রিকশা চালক জহিরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, এক দিন রিকশা আটকা থাকলে ওই ড্রাইভারের সপ্তাহ খারাপ যায়। এই অবস্থায় তো আরো খারাপ যাবে। যে দিন রিকশা আটকা থাকে সেদিন তো কামাই লস। নিজের থাকা-খাওয়া আর জমার টাকা পরিশোধ করতে কম কইরা হইলেও চার দিন লাইগা যায়। আমাদের মতো দিন আইনা দিন খাওয়া মানুষের পেটে লাথি মারা সহজ। এক বেলা ভাত নিয়া তো কেও আসে না কোন দিন।

শাহবাগ মোড়ে আরেক রিকশাচালক রাগ ও ক্ষোভ নিয়ে বলেন, এখন শুরু হইছে আরেক উৎপাত! রিকশা তোলে র‍্যাকারে! একবার র‍্যাকারে তুললে দেওয়া লাগে ১২ শ টাকা। আমাগো মতো মানুষ যদি ১২ শ টেকা জরিমানা দেয় তাইলে তার আর এক মাসেও কোমর তুইলা খাড়ান সম্ভব না। আমার বুঝে আসে না, রিকশা ক্যান র‍্যাকারে তুলতে হইব!

এ প্রসঙ্গে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, আসলে মানুষের সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই সব কিছু করা হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত রিকশার ক্ষেত্রে তো হাইকোর্টের নির্দেশনাই আছে, সেগুলো হাইওয়েতে  চলতে পারবে না। নিয়ম ও আইন মেনেই সব করা হয়েছে।

শুধু ব্যাটারিচালিত রিকশা নয় অন্যান্য সাধারণ রিকশাও তো উলটে রাখা হয়েছে এবং র‍্যাকারে দেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,  আমি যতটুকু জানি যে কয়টা রিকশা উল্টে রাখা হয়েছে বা র‍্যাকারে দেওয়া হয়েছে সবগুলোই ব্যাটারিত চালিত। যদি অন্যান্য রিকশাও উল্টে রাখা বা র‍্যাকারে দেওয়া হয় সেটা আমি জানি না। জেনে পরবর্তী সময়ে জানাতে পারব।