বিলুপ্তির পথে দেশি মাছ!
আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি। কিন্তু দিনে দিনে কমছে নদী-খাল-জলাশয়! যে সব নদী বা খাল রয়েছে তাও আবার বিভিন্ন বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে! ফলে দেশি প্রজাতির মাছ এখন বিলুপ্ত পথে।
এক সময় গোপলগঞ্জ জেলার বিভিন্ন খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় ও নদী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু প্রাকৃতিক আবাসভূমি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা এ সব মাছের অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন নাম রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চ্যাপিলা, বৈচা, চাটুয়া, চাঁদা, নামা চাঁদা, গোল চাঁদা, আইড়, গুলশা, পাবদা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, তিত পুঁটি, বাইলা, মেনি, ভেদা, শিং, কৈ, টাকি, শোল, ফলি, চেলি, মলা, ঢেলা, কানপোনা, দারকিনা, বাচা, বাটা, রিটা, পিয়ালি, জয়া, খৈলশা, ছোট টেংরা, বড় টেংরা, চান্দা, কাজলি, চ্যাং, ছোটচিংড়ি, বাতাশি, বড় বাইন, তারা বাইন, শালবাইন, চিকরা বাইন, কাকিয়া, কুচিয়া, তারা, খোকসা, খরকুটি, দেশি জাতের পটকা, বেলেসহ নাম না জানা অনেক প্রজাতির দেশি মাছ।
এক সময় দেশি জাতের এসব ছোট মাছের উৎস ছিল হাওর, বাওড়, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয় ও বিভিন্ন নদী-নালা। জেলার সদর উপজেলা, কোটালীপাড়া উপজেলা, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা, মুকসুদপুর উপজেলা, কাশিয়ানী উপজেলার বিভিন্ন হাওড়-বাওড় জলাশয় ছাড়াও মধুমতি, ঘাঘরনদী, কুমারনদী থেকে এক দশক আগেও প্রতিদিন জেলার ছোট বড় বিভিন্ন বাজারে দেশি জাতের পর্যাপ্ত ছোট মাছ আসত। এর মধ্যে মধুমতি, কুমার ও ঘাঘর নদী দখল আর দুষণের কবলে পড়ে অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। চাহিদা সত্বেও ক্রেতারা এখন এ জাতীয় মাছের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া গ্রামের কাজী মাহমুদ বলেন, কোনো রকম চাষ ছাড়াই আমাদের গ্রামের জলাশয়ে এক সময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বাজারগুলোও ভরে যেত দেশি মাছে। জলাশয়ের অধিকাংশ এলাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা ও নতুন নতুন ঘর-বাড়ি গড়ে উঠায় জলাশয়ের অস্তিত্ব নেই।
গোপালগঞ্জের মৎস্য চাষী মো: মনির মোল্লা বলেন, ছোট জাতের মাছের সরবরাহ অনেক হ্রাস পেয়েছে। দুটি কারণে ছোট মাছের চালান কমে গেছে। উৎপাদন কমে যাওয়া হচ্ছে প্রধান কারণ। এর সঙ্গে বেড়ে গেছে স্থানীয় চাহিদা।
জেলার মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই অনেক মাছ বিলুপ্ত হয়েছে। বিলুপ্তির পথে রয়েছে বহু মাছ। প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জলাভূমির সঙ্গে বিশেষ করে হাওর-বাওড় ও বিলের গভীরতা কমে যাওয়া, প্লাবন ভূমির সঙ্গে সংযোগ খাল ভরাট, জলাশয়ে বছরের অধিকাংশ সময় পানি না থাকা এবং প্রজনন মৌসুমে পানি প্রবাহ কমে যাওয়া। মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জমিতে রাসায়নিক সার ও অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজনন সক্ষম মাছ ও পোনা ধরা, কারেন্ট জালের ব্যবহার, মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করা এবং ক্ষতিকর মৎস্য আহরণ সরঞ্জামের ব্যবহার। তাই দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষায় মৎস্য বিভাগের নজর দেয়া জরুরি প্রয়োজন।