কুড়িগ্রামে যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে নির্যাতন
কুড়িগ্রামের উলিপুরে যৌতুকের দাবিতে এক নারীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি গর্ভের সন্তান নষ্টের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নারী।
রোমহর্ষক নির্যাতনের শিকার হয়ে শেষে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণি ইউনিয়নের বিজয়রাম তবকপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক মেসবাহুল আজমের মেয়ে তামান্না বেগম (২২)। তার অভিযোগ, মামলা করলেও আসামি গ্রেফতারে তালবাহানা করছে পুলিশ। এ নিয়ে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তামান্না বেগমের স্বামীর নাম নাইমুল ইসলাম লিমন (২৬)। তিনি উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেণি ইউনিয়নের দাড়িকা গ্রামের আব্দুল হামিদের ছেলে। এবং ভুক্তভোগী তামান্না বেগমের বাড়ি ধামশ্রেণি ইউনিয়নের বিজয়রাম তবকপুর গ্রামে।
নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ জানান, প্রেমের বিয়ে হলেও বিয়ের কিছু দিনের মাথায় তিনি জানতে পারেন তার স্বামী মাদকাসক্ত। এ নিয়ে তাকে বাধা দিতে গেলে তার ওপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। তারপর শুরু হয় যৌতুকের চাপ। প্রথম সন্তানের জন্ম হলে মুখ বুজে সব সহ্য করলেও যৌতুকের চাপে নির্যাতনের মাত্রা বাড়তে থাকে। স্বামীর সাথে যোগ দেন শ্বশুরও। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবার বাড়িতে ফিরে গিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চাইলে উভয় পরিবারের আলোচনায় মিমাংসা করে আবারও সংসার শুরু করি। কিন্তু সাময়িক বিরতি দিয়ে আবারও নির্যাতন শুরু হয়।
তামান্না বলেন, স্বামীতো মারেনই, সাথে শ্বশুর শাশুড়িও ছাড় দেন না। একদিন শ্বশুর রড দিয়ে আঘাত করে আমার বাম হাতের হাড় ভেঙে দেন। অসহনীয় নির্যাতনে বাবার বাড়ি চলে গেলে পরবর্তীতে আবারও লিখিত অঙ্গীকার নামায় সমঝোতা করে আমাকে স্বামীর সংসারে নিয়ে আসা হয়। তারপর কিছুদিন পর আবারও যৌতুক চেয়ে নির্যাতন শুরু হয়। এরমধ্যে আমি দ্বিতীয় বারের মত অন্ত:সত্ত্বা হয়ে পড়ি। তিন মাসের অন্ত:সত্ত্বা জানার পর আমার স্বামী আমাকে সন্তান নষ্ট করার চাপ দিতে থাকেন। আমি রাজি না হলে গত ২১ এপ্রিল তিনি আমাকে মারতে শুরু করেন। এসময় আমার শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে বাধা না দিয়ে উল্টো তাকে সহায়তা করতে থাকেন। এসময় আমার স্বামী আমার তলপেটে আঘাত করলে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। গুরুতর অবস্থায় তারা আমাকে চিকিৎসার কথা বলে উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির বাড়িতে নিয়ে গিয়ে একজন ধাত্রীর মাধ্যমে জোরপূর্বক আমার গর্ভপাত করান। আমার গর্ভের সন্তানকে হত্যা করেন।
নির্যাতনের শিকার এই গৃহবধূ আরও বলেন, গর্ভপাতের ফলে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে আমি বিষয়টি আমার বাবা মাকে জানাই। খবর পেয়ে আমার বাবা আমাকে ওই নরক থেকে উদ্ধার করে উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে কিছুটা সুস্থ্য হয়ে গত ২৬ এপ্রিল আমি থানায় মামলা করি। কিন্তু এখন মামলা তুলে নিতে আমাকে ও আমার পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মামলা হলেও আসামি গ্রেফতারে তালবাহানা করছে পুলিশ। তাহলে কোথায় আশ্রয় চাইবো! অভিযোগ করেন এই গৃহবধূ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৬ এপ্রিল ভুক্তভোগী গৃহবধূ বাদী হয়ে উলিপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলা নং-২২। এতে আসামি হিসেবে গৃহবধূর স্বামী নাইমুল ইসলাম লিমন ও শশুর আব্দুল হামিদসহ চার জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলার পর প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনও কোনও আসামিকে গ্রেফতার করেনি। ভুক্তভোগী গৃহবধূর অভিযোগ, আসামি পক্ষ টাকার বিনিময়ে পুলিশকে থামিয়ে রেখেছে।
উলিপুর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) ইমতিয়াজ কবির মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও আসামি গ্রেফতারে গড়িমসির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য নেওয়ার পাশাপাশি আসামি গ্রেফতারে চেষ্টা করছে পুলিশ।
গর্ভপাতের বিষয়ে সত্যতা পাওয়ার প্রশ্নে ওসি বলেন, এ বিষয়ে আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। তাদের মতামত পেলে এ নিয়েও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্ত্রীকে নির্যাতনের ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত স্বামী নাইমুল ইসলাম লিমনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।