সেতু নির্মাণ: গ্রামবাসীর মুখে হাঁসি ফুটলেও মাঝি মাখনের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ

  • রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, (গৌরীপুর) ময়মনসিংহ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মাঝি মাখন

মাঝি মাখন

সুরিয়া নদীর মাঝি মাখন রবিদাস (৩৫)। গোদারা ঘাটে নৌকা পারাপার করে সংসার চালান। সম্প্রতি নদীতে সেতু নির্মাণ শুরু হলে দুই পাড়ের গ্রামবাসীর মুখে হাঁসি ফুটে উঠে। তবে সেই হাসির আড়ালে রোজগার বন্ধের শঙ্কায় মাখনের চোখেমুখে পড়েছে দুশ্চিন্তার ছাপ।

মাখন মাঝি বলেন, আমার ভিটেমাটি কিছু নেই। ঘাটে নৌকায় মানুষ পার করে পেট চালাই। সেতু হলে নৌকা চলবে না, রোজগার বন্ধ হবে। তখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো এটাই দুশ্চিন্তা।

বিজ্ঞাপন

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের মাওহা ইউনিয়নের নয়ানগর বাউশালী পাড়া ও নেত্রকোনার দক্ষিণ বিশিউড়া ইউনিয়নের দুঘিয়া গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে সুরিয়া নদী। দুই পাড়ের ঘাটে নৌকায় মানুষ পারাপার করে সংসার চালান মাখন।

মাখনের বাড়ি নেত্রকোনা সদরের লক্ষীগঞ্জে। স্বাধীনতার পর মাখনের দাদা গণপত্র রবিদাস নয়ানগর বাউশালী পাড়া গোদারা ঘাটে খেয়া পারের কাজ নেয়। এরপর বংশানুক্রমে বাবা নবীন্দ্র রবিদাসের হাত ধরে এই পেশায় আসে মাখন।

বিজ্ঞাপন

সুরিয়া পাড়ে অন্যের জমিতে ঘর তুলে স্ত্রী ও পাঁচ বছর বয়সী স্কুল পড়ুয়া এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করেন মাখন। তার মা মারা গেছে। বাবা থাকেন দক্ষিণ বিশিউড়া গ্রামে। তিনিও নদীর অন্য ঘাটে নৌকায় মানুষ পার করেন।

প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঘাটে নৌকা দিয়ে মানুষ পার করেন মাখন। বিনিময়ে ধানের মৌসুমে গ্রামবাসী তাকে ধান দেয়। তবে গ্রামের বাইরের লোকজন নদী পার হলে ২ থেকে ৫ টাকা দিয়ে থাকেন। এতে যা আয় হয়ে সেটা দিয়েই সংসার চলে তার।

জানা যায় স্বাধীনতার পর থেকে সুরিয়া নদীর গোদার ঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল দুই পাড়ের মানুষ। দাবি পূরণ না হওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে গ্রামবাসী নিজেরাই নদীতে স্টিলের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজ অধিকাংশ শেষ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) বিকালে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় স্বেচ্ছাশ্রমে গ্রামবাসী সেতুর পাঠাতন নির্মাণে কাজ করছে। পাশেই গোদারা ঘাটে নৌকা নিয়ে বসে আছেন মাখন। পারাপারের জন্য কেউ আসলে নৌকা নিয়ে ছুটে চলেন তিনি। তবে আয়-রোজগার বন্ধের শঙ্কায় তার চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।

সন্ধ্যায় সুরিয়া পাড়ে আলোচনায় বসে গ্রামবাসী। সেখানে ছুটে আসে মাখনও। সেতুর অগ্রগতি ও পরবর্তী নানা করণীয় নিয়ে পরামর্শ হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণের পর মাখনের কি হবে এটা নিয়ে কেউ কথা বলে না। এতে মনে কষ্ট পায় সে।

মাখন মাঝি বলেন অভাবের সংসারে আমার কোন পুজি নেই। নৌকা চালানো ছাড়া অন্য কাজ শিখিনি। গ্রামবাসীর দয়ায় খেয়ে পরে বেঁচে আছি। কিন্তু সেতু নির্মাণের পর রোজগার বন্ধ হলে পরিবার নিয়ে কোথায় যাবে, কি খাবে?

গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা ইসলাম উদ্দিন বলেন মাখনের তিন পুরুষ ঘাটে খেয়া পার করে গ্রামবাসীর সেবা করে গেছে। তার বিষয়ে সবার ভাবা দরকার। তবে হৃদয়বানরা সহযোগিতা করলে একটা দোকান কিংবা রিকশা দিয়ে তার কর্মসংস্থান করা যায়।