‘মতিন খসরুর আবেগভরা বক্তৃতা এখনো কানে বাজে’

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রয়াত আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে আবেগআপ্লুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমি তাকে প্রথমে প্রতিমন্ত্রী তারপর মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তাছাড়া একজন নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগ কর্মী, ছাত্রলীগ-যুবলীগ তারপর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ প্রেসিডিয়াম মেম্বার করি।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ আদেশ দিয়ে খুনিদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। আমি আর আমার ছোট বোন রেহানা বেঁচে ছিলাম, আমাদের বিচার পাবার কোন অধিকার ছিল না বা ১৫ আগস্টে আমরা যারা স্বজনহারা আমরা কেউ কিন্তু বিচার চাইতে পারতাম না, সেই অধিকার আমাদের ছিল না। যেটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর সেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করি। আর সেই বিলটি উপস্থাপন করেছিল আব্দুল মতিন খসরু। তার সেই আবেগভরা বক্তৃতা এখনো আমার কানে বাজে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (০২ জুন) বিকেলে সংসদ অধিবেশনে প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরু ও আসলামুল হকসহ অন্যান্য সংসদ সদস্য ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নামে আনিত শোক প্রস্তাবের আলোচনায় সংসদ নেতা একথা বলেন। এর আগে বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের ত্রয়োদশ অধিবেশন শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলমান সংসদে করোনায় অনেক অনেক সাথীকে হারিয়েছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে খুনিদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। আমি আর আমার ছোট বোন রেহানা বেঁচে ছিলাম। আমাদের বিচার পাবার কোন অধিকার ছিল না, বা ১৫ আগস্টে আমরা যারা স্বজনহারা আমরা কেউ কিন্তু বিচার চাইতে পারতাম না, সেই অধিকার আমাদের ছিল না। যেটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর সেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করি, আর সেই বিলটি উপস্থাপন করেছিল আব্দুল মতিন খসরু। তার সেই আবেগভরা বক্তৃতা এখনো আমার কানে বাজে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমি তাকে (মতিন খসরু) প্রথমে প্রতিমন্ত্রী, তারপর মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তাছাড়া একজন নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগ কর্মী। ছাত্রলীগ-যুবলীগ তারপর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ প্রেসিডিয়াম মেম্বার করি। সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের নির্বাচন যখন করতে যায় তাকে নমিনেশন দেওয়া হয়। আমি তাকে বলেছিলাম বেশি ঘোরাঘুরি না করতে কিন্তু তার আগ্রহ ছিল তাকে জিততেই হবে। আর তাই সারা বাংলাদেশ সফর করে। তারপরই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়। আমি প্রতিদিন তার স্বাস্থ্যের খবর নিতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে তাকে আর বাঁচানো গেলো না, আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছে।

আসলামুল হক সম্পর্কে বলেন, আসলামুল হক আমাদের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। আমাদের সকল আন্দোলন-সংগ্রাম সবকিছুতে সে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। এলাকার উন্নয়ন জন্য অনেক কাজ করেছে, এজন্য সে বারবার নির্বাচিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রতি অন্যরকম একটা টান ছিল, এলাকার উন্নয়নের জন্য সব থেকে নিবেদিতপ্রাণ ছিল, হঠাৎ করে চলে গেল। এই সংসদ চলমান অবস্থায় এসেছিল কিন্তু এখান থেকে হঠাৎ করে সে চলে গেল তার পরেই তার মৃত্যুর সংবাদটা আসলো, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কয়েকজন গণপরিষদ সদস্যকেও হারিয়েছি। আজকে আমরা যে সংবিধান পেয়েছি সেই সংবিধানে তাদের স্বাক্ষর রয়েছে। যেমন খন্দকার আব্দুল মালেক শহীদুল্লাহ, গণপরিষদ সদস্য আবুল হাশেম সাহেব। স্বাধীনতার পর যে সংবিধান আমরা পেয়েছি এটা তাদেরই অবদান। তাছাড়া আওয়ামী লীগের অনেক নেতা কর্মী সাবেক এমপি যেমন সাহরা বেগম কবরী, মিরাজ মোল্লা, আমজাদ হোসেন মিলন, ফরিদা রহমান তাদের হারিয়েছি। ফরিদা রহমান আমি একসাথে ছাত্রলীগ করেছি।

বাংলা একাডেমির দুই মহাপরিচালক প্রসঙ্গে বলেন, শোক প্রস্তাবে কয়েকজনের কথা না বললেই না। শামসুজ্জামান সাহেবের কথা বলব। বাংলা একাডেমির চেয়ারম্যান তাকে করেছিলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, আমার দেখা নয়া চীন, প্রত্যেকটা বই লেখায় সব সময় আমরা একসাথে কাজ করেছি। দুর্ভাগ্য বেবী মওদুদ এই সংসদের সদস্য ছিল, তিনিও আমাদের মাঝে নাই, জামান (শামসুজ্জামান) ভাই সর্বশেষ তিনিও চলে গেলেন। কয়েকজন মিলে আমরা একসাথে কাজ করতাম। একে একে সবাইকে হারিয়ে ফেললাম। জাতির পিতার আরেকটি লেখা স্মৃতিকথা সেটারও কাজটা সংশোধনীর কাজ এটাও কিন্তু শামসুজ্জামান খান সাহেব করে রেখে গেছেন। আমরা এই বইগুলোর যখন বের করি তিনি সব সময় আমাদের পরামর্শ দিতেন। প্রত্যেকটা জিনিস সংশোধনের কাজ তিনি করতেন, কোথাও কোন বানান ভুল আছে কিনা সেটা খুব ভালোভাবে দেখে দিতেন। আমরা যারা কাজ করতাম সকলের জন্য আলাদা আলাদা কলম ছিল। শামসুজ্জামান সাহেবের জন্য লাল কলম, আমার জন্য একটা সবুজ কলম, বেবির জন্য একটা কালো কলম, এভাবে রেখে আমরা যে যখন যেটা পারতাম সংশোধন করে বইটা বার বার পড়ে প্রত্যেকটা বই প্রকাশ করেছি, সেখানে তার (শামসুজ্জামান) যথেষ্ট অবদান রয়েছে। বাংলা একাডেমির উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ তিনি করেছেন। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। এরপর হাবীবুল্লাহ সিরাজী সাহেবকে যখন করলাম, তিনিও কাজ করতে শুরু করলেন। কিন্তু পর পর দু'জনই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। আসলে সত্যি খুব দুঃখজনক এভাবে একজন একজন করে হারাচ্ছি। যেটা আমাদের জন্য সত্যি খুব কষ্টকর।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে জীবনটাই হয়ে গেছে এমন, কে যে কখন আছে, কে যে কখন নাই তার কোনো হিসেব ই নাই। আর বিশেষ করে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন এলো। আমরা আবার চেষ্টা করলাম সেটাকে কোন ভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে, কিন্তু হঠাৎ করে আবার আমাদের সীমান্ত জেলাগুলোতে প্রকোপ দেখা দিয়েছে। সেখানে আবার আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, কিন্তু আমি সবাইকে বলব আমাদের স্বাস্থ্যবিধিটা যেন সকলে মেনে চলে। বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে আমার এটা আহ্বান থাকবে। টিকাদান থেকে শুরু করে সব রকম ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি, কিন্তু তারপরেও নিজেদের সুরক্ষিত থাকতে হবে।