দক্ষিণাঞ্চলে কোরবানিযোগ্য পশুর সংকট
বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর চাহিদা অনুযায়ী কোরবানিযোগ্য পশুর সংকট দেখা দিয়েছে এবারও।
বিভাগের ছয় জেলায় এ বছর কোরবানির জন্য প্রায় সোয়া ৫ লাখ গবাদি পশুর চাহিদা নির্ধারণ করেছে বিভাগীয় প্রাণীসম্পদ অধিদফতর। কিন্তু বরিশাল বিভাগে এ বছরের চাহিদার প্রায় ৪ ভাগের ১ ভাগ গবাদিপশু মজুত আছে স্থানীয় খামারিদের হাতে। বাকি গবাদি পশুর সংকট থাকলেও পারিবারিকভাবে লালন-পালন করা ও বাহিরের জেলাগুলোতে আসা গবাদিপশু দিয়ে বরাবরের মতো এবারও কোরবানির কাঙ্ক্ষিত চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে বলে বার্তা২৪.কম-কে জানিয়েছেন বিভাগীয় প্রাণীসম্পদ অধিদফতর।
বরিশাল বিভাগীয় প্রাণীসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ছয় জেলায় এবার কোরবানির জন্যা ৫ লাখ ২৫ হাজার গবাদিপশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে বিভাগের ছয় জেলায় ২০ হাজার ৩৮৭ জন খামারির কাছে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু আছে ১ লাখ ৩৮ হাজার। এ হিসাবে অনুযায়ী বরিশাল বিভাগে চাহিদার প্রায় ৪ ভাগের ১ ভাগ গবাদিপশু মজুত আছে স্থানীয় খামারিদের হাতে।
আরও জানা গেছে, গত বছর এই বিভাগের ছয় জেলায় চামড়া সংগ্রহের ভিত্তিতে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৭১টি গবাদিপশু কোরবানি দেওয়া হয়েছিল। বিগত বছরের চেয়ে এ বছর কিছু সংখ্যক গবাদিপশু বৃদ্ধি ধরে কোরবানির জন্য এ চাহিদা নির্ধারণ করেছে প্রাণীসম্পদ অধিদফতর।
বরিশাল সিটির সোনা মিয়ার পুল এলাকার গরু ব্যবসায়ী আরিফ হাওলাদার বার্তা২৪.কম-কে জানান, সব সময়ই বরিশাল বিভাগে গবাদিপশুর সংকট থাকে। তাই বাধ্য হয়ে বাইরের জেলা থেকে গরু কিনে কোরবানির সময় বিক্রি করি। এবার করোনার ঝুঁকি নিয়ে কুষ্টিয়া ও যশোর থেকে ৩৫টি গরু কিনে বরিশালে আনছি।
গতবছরের তুলনায় এবার গরু দাম কয়েকগুণ বেশি। তাই এবার গতবারের তুলনায় চারভাগের একভাগ গরু আনছি। এখন বরিশালের হাটে বিক্রি করতে পারলেই হয়।
বরিশাল সিটির হরিণাফুলিয়া এলাকার আল বারকাহ অ্যাগ্রোর খামারির মালিক জামাল হোসেন জানান, করোনার কারণে গত বছর খামারে থাকা কোরবানির গরু বিক্রি করতে পারেনি।
এবার তাঁর খামারে শতাধিক গরু আছে। এবারও করোনার কারণে ক্রেতাদের সাড়া কম। গরু পালতে যে খরচ হইছে সে তুলনায় ক্রেতারা গরুর দাম কম বলে। সামনের কদিনে গরু বিক্রি না করতে পারলে ঋণের টাকা পরিশোধ করার উপায় থাকবে না।
বরিশাল বিভাগীয় প্রাণীসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক দীপক রঞ্জন রায় বার্তা২৪.কম-কে জানান, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার স্থানীয় খামারিদের কাছে কোরবানিযোগ্য যে পশু আছে তা বিভাগের নির্ধারিত চাহিদার প্রায় ৪ ভাগের ১ ভাগ ।
তবে করোনা পরিস্থিতিতে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মধ্যে আর্থিক সংকট দেখা দেওয়ায় কোরবানির চাহিদা কিছুটা কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী গবাদি পশুর জোগান কম থাকলেও অন্যান্য বছরের মতো এবারও বাহিরের জেলা থেকে গবাদি পশু আসায় বিভাগে গবাদিপশুর কোনো সংকট হবে না বলে তিনি জানান।
কেননা, লকডাউনের মধ্যেও কৃষিপণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বিভিন্নভাবে অনেক গরু ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে গবাদি পশু কিনে দক্ষিণাঞ্চলে নিয়ে এসেছে।
তিনি আরও জানান, করোনা ঝুঁকি মাথায় রেখে কোরবানিযোগ্য পশু কেনাবেচার জন্য অনলাইনে ‘ডিজিটাল হাট’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম খুলেছে প্রাণীসম্পদ অধিদফতর।
এখানে কোনও ধরনের হয়রানি ছাড়া গবাদিপশু কেনাবেচা করতে পারবে সকলে। ইতিমধ্যে বরিশালে বিভাগেও অনলাইনে গবাদিপশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে।
আর স্থানীয় প্রশাসন নির্ধারিত কোরবানির গরুর হাটগুলোতে করোনার বিস্তার রোধে সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। হাটে মাস্ক ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
পাশাপাশি শিশু ও বয়স্কদের হাটে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞ সহ হাটগুলোর প্রবেশদ্বারে সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা এবং একদিকে হাটের ভিতরে প্রবেশ করবে আরেক দিক থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা করতে বাজার কমিটি ও ইজারাদারদের কঠোরভাবে বলা হয়েছে।
এছাড়াও হাটগুলোতে অসুস্থ গবাদিপশু নির্ণয় করার জন্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলেও জানান এই পরিচালক।