পাড়া-মহল্লায় আড্ডায় মেতেছে মানুষ
মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় রীতিমতো আড্ডায় মেতেছে মানুষ। এসব অলিগলির চায়ের দোকান খোলা রাখা হয়। বিকালের দিকে অলিগলির চটপটি ও ফুসকাসহ নানারকম মুখরোচক খাবারের স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানে নগরবাসীকে ভিড় করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে গলির মোড়ে মোড়ে ছিল তরুণদের আড্ডাবাজি। তাদের অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না।
বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে তৎপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহণ একেবারে ছিল না। তবে রিকশা চলতে দেখা গেছে। অল্প কিছু মানুষকে জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায় দেখা গেছে। ওষুধ অথবা নিত্যপণ্য কিনতে কেউ কেউ ঘর থেকে বের হন। আবার কেউ কেউ হেঁটে গন্তব্যে যান। তবে পাড়া-মহল্লায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।
রাজধানীরা উত্তর ভাষাণটেক এলাকায় গতকাল বিকেল থেকেই শুরু হয় তরুণদের আড্ডা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে, মহল্লার দোকানের সামনে চলে আড্ডাবাজি। বাইকে তিনজন করে ওঠে তরুণরা এদিক সেদিক ঘুরেছে। স্বাস্থ্যবিধির কেউই ধার ধারেনি।
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মাটিকাটা, পশ্চিম মাটিকাটা, ইসিবি চত্বর ও মানিকদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মোড়ে মোড়ে আড্ডা জমিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চায়ের দোকানে রয়েছে ছোটখাটো ভিড়। টহল পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে এসব চায়ের দোকান। দোকানদারেরা কেউ কেউ শাটার অর্ধেক নামিয়ে রাখছেন।
এমন চিত্র রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতেও দেখা গেছে। সন্ধ্যার পর অলিগলিতে উপচে পড়েছে মানুষ। অনেকেই মানছে না সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এমনকি মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে বহু মানুষকে।
বাগানবাড়ি এলাকার মুদি দোকানদার আনোয়ার মিয়া জানান, তার দোকানে বিকেল থেকেই মানুষজন একটু বেশি ভিড় করছেন। বিশেষ করে কোমলপানীয় বিক্রি হচ্ছে বেশি। তবে তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই এসব বিক্রি করছেন।
একই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসাইন শোয়েব বলেন, বিকেল থেকে পোলাপানদের বাইকের রেইসের শব্দে অস্থির হয়ে গেছি। এরা যে কবে মানুষ হবে! এদের বাবা-মায়েরাও কেমন? এভাবে করোনা আতঙ্কের মধ্যে এদের কেন বাইরে বের হতে দিয়েছে- বুঝতে পারি না।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে দুই সপ্তাহের এই বিধিনিষেধ কষ্ট করে হলেও সবাইকে মানতে হবে বলে মনে করছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, চলমান বিধিনিষেধ কষ্ট করে হলেও মানতেই হবে। কারণ এখন ডেঞ্জার লেভেলের অনেক ওপরে আছি। সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে নামতে হবে ও মৃত্যু দৈনিক ৫০ জনের নিচে নামতে হবে। তা না হলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে না। এখন যদি বিধিনিষেধ মানি, তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে ১৪ দিনের বেশি লাগতে পারে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিকের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, সরকারি নির্দেশনার বাইরে কোনো যানবাহনকে রাস্তায় চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা কঠোর অবস্থানে থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছি। মিরপুর এলাকার মোড়ে মোড়ে চেকপোস্টে পরিবহণের গতি রোধ করা হয়। সুনির্দিষ্ট কারণ ও প্রমাণ দিতে না পারলে সেগুলো ফেরত পাঠানো হয়।
এদিকে শুক্রবার বিনা প্রয়োজনের ঘর থেকে বের হওয়া ও লকডাউনের বিধিনিষেধ অমান্য করায় ঢাকায় ৪০৩ জন কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় ২০৩ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ২৭০ টাকা। এছাড়া ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক ৪৪১টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা।