সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখীর আশঙ্কা, সামনে মহাবিপদ

  • আনিসুর বুলবুল
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

হঠাৎ পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণায় ঈদের পর যেসব পোশাককর্মী গ্রামে অবস্থান করছিলেন তারা এরই মধ্যে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন। ঢাকামুখী মানুষের ঢল ছিল গতকাল ভোর থেকে রাত পর্যন্ত। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই ঢাকায় এসেছেন। কেউ পিকআপে চড়ে, কেউ ট্রাক বা ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে, কেউ বা রিকশায় বাড়ি থেকে রওয়ানা হয়েছেন। এদের অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না। স্বাস্থ্যবিধির ধার ধারেনি কেউই। এতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখীর আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের ৮০ শতাংশই গ্রাম থেকে এসেছেন। সেই গ্রামের মানুষ এখন ছুটছেন রাজধানীর দিকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চললে চিকিৎসাসেবা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এখনই সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালে আইসিইউ খালি নেই। বর্তমানে যেভাবে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে প্রচণ্ড মানসিক চাপে রয়েছেন ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা। লাশ আর রোগী দেখতে দেখতে তারা ক্লান্ত। মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পরে সবকিছু করা যাবে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে মহাবিপদ।

বিজ্ঞাপন

দেশে টানা সাত দিন ধরে করোনাভাইরাসে দুইশর ওপরে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহের হিসাবে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে গত সপ্তাহেই। গত ২৫ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দুইশর বেশি মানুষ। এই সাত দিনে মোট মারা গেছেন এক হাজার ৬৩৯ জন এবং মোট শনাক্ত হয়েছেন ৯৬ হাজার ১৪০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে গত ২৫ জুলাই মারা গেছেন ২২৮ জন, শনাক্ত হয়েছেন ১১ হাজার ২৯১ জন; ২৬ জুলাই মারা গেছেন ২৪৭ জন, শনাক্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ১৯২ জন; ২৭ জুলাই মারা গেছেন ২৫৮ জন, শনাক্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৯২৫ জন; ২৮ জুলাই মারা গেছেন ২৩৭ জন, শনাক্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ২৩০ জন; ২৯ জুলাই মারা গেছেন ২৩৯ জন, শনাক্ত ১৫ হাজার ২৭১ জন; ৩০ জুলাই মারা গেছেন ২১২ জন, শনাক্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৮৬২ জন এবং ৩১ জুলাই মারা গেছেন ২১৮ জন, শনাক্ত ৯ হাজার ৩৬৯ জন।

বিজ্ঞাপন

করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেছেন, মাস্ক পরাসহ মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর থেকে কঠোরতর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিনা মূল্যে মাস্ক বিতরণ করতে হবে। গ্রামের টিকা প্রদানের হার বাড়াতে হবে। কলকারখানার শ্রমিকরা যাতে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেছেন, লকডাউন স্থায়ী সমাধান না। লকডাউন সীমিত সময়ের জন্য। অর্থনীতির চাকা সচল রেখে জীবন-জীবিকা রক্ষার জন্য সরকার কলকারখানা খুলে দিয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক পরা নিশ্চিত করা গেলে সবকিছু করা সম্ভব। আর এ কাজগুলো করতে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ স্বাস্থ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অদ্যাবধি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৭৭ লাখ ৪০ হাজার ৮৯৪টি। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৬ লাখ ৯৫ হাজার ৩৬২টি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২০ লাখ ৪৫ হাজার ৫৩২টি। এপর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০ হাজার ৬৮৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ৩ জন এবং মহিলা ৬ হাজার ৬৮২ জন। এছাড়া এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ১০ লাখ ৭৮ হাজার ২১২ জন।