ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আতঙ্ক

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা ২৪
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

সারা দেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। মৃত্যু ও সংক্রমণে চলছে রেকর্ড ভাঙাগড়া। প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা উদ্বেগজনক। এর বাইরেও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এখন আবার নতুন আতঙ্ক 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস' রোগ। চট্টগ্রামে এরই মধ্যে দুজন ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে ঢাকায় একজন শনাক্ত হয়েছিল। ফলে অনেকের মধ্যে আতঙ্ক ভর করেছে।

চট্টগ্রামের দুজনের মধ্যে একজনকে গতকাল সোমবার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আরেকজন গত রবিবার শনাক্ত হয়েছে। নতুন শনাক্ত হওয়া ৪০ বছর বয়সী ওই পুরুষ রোগীর চোখে এ ছত্রাক বাসা বাঁধে। গত ৬ আগস্ট থেকে এ রোগী চমেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায়। তিনি ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী। এ রোগী করোনার দুই ডোজ টিকাও দিয়েছেন এবং করোনায় আক্রান্ত হননি। তারপরও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, গত ২৪ জুলাই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উপসর্গ নিয়ে ষাটোর্ধ এক নারীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে নমুনা পরীক্ষায় তিনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। তিনি করোনায়ও আক্রান্ত হয়েছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর তার শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। ওই নারীর ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে। গতকাল সোমবার ওই রোগীর অস্ত্রোপচার হয়। চমেক হাসপাতালের চক্ষু, নাক কান গলা, মেডিসিনসহ বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে।

চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, প্রথম ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হওয়া নারীর সোমবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। চোখ, নাক, কান গলা, মেডিসিনসহ বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ে অস্ত্রোপচার হয়। দ্বিতীয় রোগী কোভিড পজিটিভ ছিলেন না। তবে তার কিছু সিম্পটম ছিল। তিনি শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সোমবার তার ব্লাক ফাঙ্গাস নিশ্চিত হওয়া যায়। মেডিকেল বোর্ড বসিয়ে ওই রোগীর চিকিৎসার বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছিল কালো ছত্রাক বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হিসেবে পরিচিত 'মিউকরমাইকোসিস'। মিউকরমাইকোসিস হলো একধরনের ছত্রাক বা ফাঙ্গাস। এই ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে আক্রমণ করে। ডায়াবেটিস, এইডস বা ক্যান্সারে যারা আক্রান্ত, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দারুণভাবে দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এ সংক্রমণ প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।

এতে আক্রান্তদের মাথা ব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মুখের একপাশ ফুলে যওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া বা চোখে ব্যথা করা, চোখের পাপড়ি ঝরে পড়া, ঝাপসা দেখা এবং এক সময় দৃষ্টি হারানোর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে নাকের পাশপাশে চামড়ায় কালচে দাগ দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিউকরমাইকোসিসের স্পোরগুলো যখন বাতাসে ভেসে বেড়ায়, তখন নিশ্বাসের সঙ্গে শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে। প্রাথমিক অবস্থায় হালকা একটু অ্যালার্জি বা প্রদাহের সৃষ্টি করে। তবে দীর্ঘসময় ধরে বিদ্যমান থাকলে এবং দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে দ্রুত বাড়তে থাকে। স্পোরগুলো শাখা–প্রশাখার মতো বিস্তার লাভ করে ক্রমে অগ্রসর হতে থাকে এবং একসময় নাকের সাইনাস, চোখ বা চক্ষুকোটরের গভীরে ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে গত জুন মাসে খুলনার এক ব্যক্তির কালো ছত্রাক সংক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তিনি সেরে উঠেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ রোগের প্রধান ওষুধ ইনজেকশন অ্যামফোটেরিসিন-বি। তবে এই ইনজেকশনের দাম বেশি এবং দুর্লভ। তাই রোগীর চিকিৎসায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। এক রোগীর জন্য প্রতিদিন ৬ ভায়াল করে ১৪ দিন অ্যামফোটেরিসিন-বি ইনজেকশনটি দিতে হবে। প্রতি ভায়ালের মূল্য ১৫ হাজার টাকা করে হলে দিনেই ব্যয় ৮৪ হাজার টাকা। এই ইনজেকশন আনতে হয় ভারত থেকে। এর সঙ্গে আছে অন্যান্য চিকিৎসা ব্যয়।

চিকিৎসকরা বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা মূলত নির্ভর করে সংক্রমণের তীব্রতার ওপর। সেজন্য কিছু ওষুধ আছে। আবার তীব্রতা বেশি হলে ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। এ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম বেশি এবং রোগীর নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হয় বলে এই চিকিৎসা ব্যয়বহুল।