ঢাকাসহ সারা দেশে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা
জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানমালা ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সেইসঙ্গে রয়েছে বিশেষ টহল ও চেকপোস্ট। অনুষ্ঠানস্থল ঘিরে থাকছে পুলিশ-র্যাব-গোয়েন্দাদের সমন্বিত নিরাপত্তাবলয়। সেইসঙ্গে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ অন্যদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে চারপাশের সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
নিরাপত্তার স্বার্থে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা সবাইকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির পর আর্চওয়ের ভেতর দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। পাশাপাশি তল্লাশি, ব্লক রেইড, চেকপোস্ট, ডগ স্কোয়াড ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের কাজ চলবে। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর ও বনানী কবরস্থানকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানস্থল এবং আশপাশের এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় রয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ভার্চুয়াল বৈঠকে তিনি সব মহানগর, রেঞ্জ ও জেলার পুলিশ সুপারসহ ইউনিটপ্রধানদের এ বার্তা দেন।
এদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম শনিবার ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা প্রত্যেককে চেকপোস্টে আর্চওয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করে ভেন্যুতে প্রবেশ করানো হবে। প্রধানমন্ত্রী যতক্ষণ ভেন্যুতে অবস্থান করবেন, ততক্ষণ কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ও বনানী কবরস্থান পুরোটাই সিসিটিভির আওতায় থাকবে। মাস্ক ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
ঢাকার পুলিশ প্রধান বলেন, জঙ্গিদের হামলা চালানোর একটি প্রধান উদ্দেশ্যই হলো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসা। এক্ষেত্রে ১৫ আগস্টের ভেন্যুর আশপাশে না হোক, দুই কিলোমিটার দূরেও যদি বোমা ফাটাতে পারে, তাতেও আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। এদিক বিবেচনা করে জঙ্গিরা তৎপর। তবে যে গ্রুপটি সংঘবদ্ধ হচ্ছিল, সেটির পুরো ট্র্যাকই ধরা পড়ে গেছে। এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য পুলিশ তৎপর।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গণমাধ্যমকে বলেন, এবারও শোক দিবস ঘিরে যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিয়মিত টহল-চেকপোস্ট-নজরদারির পাশাপাশি প্রস্তুত থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্স। দিবসটি ঘিরে সুনির্দিষ্ট কোনো নিরাপত্তা-হুমকি নেই। তবু সতর্ক রয়েছে র্যাব।
ঢাকায় বিশেষ নজর থাকলেও সারাদেশেই শোক দিবসের অনুষ্ঠানমালার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে তৎপর থাকবেন গোয়েন্দারা। পোশাকধারী পুলিশ-র্যাব সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় অবস্থান নেবেন। চেকপোস্টে থাকবে কড়া তল্লাশি।
এদিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে সবার শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের সুবিধার্থে এর চারপাশের রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, অনুষ্ঠানে অতিথিদের যান সুষ্ঠুভাবে চলাচলের সুবিধার্থে ও যানজট এড়াতে ওই দিন ভোর থেকে অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য যানকে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হবে।
এর মধ্যে মিরপুর ও গাবতলী থেকে আসা রাসেল স্কয়ার-আজিমপুরমুখী যান মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ-ধানমন্ডি ২৭ থেকে ডানে মোড় নিয়ে শংকর-জিগাতলা-সায়েন্সল্যাব হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে। নিউমার্কেট ও সায়েন্সল্যাব থেকে আসা রাসেল স্কয়ারমুখী যানগুলোকে ধানমন্ডি দুই নম্বর সড়কের বামে মোড় নিয়ে জিগাতলা-শংকর হয়ে যেতে হবে। রেইনবো-এফডিসি থেকে আসা যান সোনারগাঁও ক্রসিংয়ে বামে মোড় নিয়ে বাংলামটর দিয়ে শাহবাগ হয়ে গন্তব্যে যাবে। আর আমন্ত্রিত অতিথিরা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ-ধানমন্ডি ২৭ নম্বর হয়ে মেট্রো শপিং মল থেকে ডানে মোড় এবং আহছানিয়া মিশন ক্রসিংয়ে বামে মোড় নিয়ে ৩২ নম্বরের পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছাবে।
জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি চলাকালে ঢাকাবাসীর যান চলাচলে সাময়িক বিঘ্ন ঘটবে বলে দুঃখ প্রকাশ করেছে ডিএমপি।