সমন্বয়হীন স্বাস্থ্যখাত নিয়ে ক্ষুব্ধ কমিটি, নিশ্চুপ মন্ত্রণালয়

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক

করোনা অতিমারির শুরু থেকে স্বাস্থ্যখাতের বেহাল দশা ফুটে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তবে জবাব নেই মন্ত্রণালয়ের কাছে। সবশেষ গণটিকা কার্যক্রম নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থায় ক্ষুব্ধ সংসদীয় কমিটি। অনেকে সুরক্ষা অ্যাপসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করার পরেও টিকা গ্রহণের এসএমএস পাননি অন্যদিকে গণটিকা কার্যক্রম শুরুর দিন কেন্দ্রে এনআইডি দেখিয়ে টিকা নিয়েছেন অনেকে। বৈঠকে বলা হয়েছে যারা আগে রেজিস্ট্রেশন করেছে তাদের অপরাধ কি ছিল? তাদের না দিয়ে কেন রেজিস্ট্রেশন ছাড়া স্পট ভ্যাকসিন প্রদান করা হলো। এর কোন জবাব দিতে পারেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

তাছাড়া ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আগেই গণমাধ্যমে তথ্য আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি। বৈঠকে কমিটির সদস্যদের মধ্যে থেকে বলা হয়েছে, টিকা পাওয়ার আগেই নানা ধরনের তথ্য বের হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ায়, তাই বাইরে কথা কম বলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে ভ্যাকসিন প্রদানের বয়সসীমা ১২ বছর পর্যন্ত করা যায় কি না সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কথা তুলে ধরা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে ১২ বছরের উপরে সকল শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিন প্রদানের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বৈঠকে করোনা টিকা উৎপাদন ও প্রদান পক্রিয়া সহজতর করার লক্ষ্যে সরকার-সরকার (জিটুজি) পদ্ধতি অনুসরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে সভাপতি বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারে তাহলে ভ্যাকসিনের জন্য আর কারো মুখাপেক্ষী হতে হবে না।

বিজ্ঞাপন

সংসদীয় কমিটির কার্যপত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত ভ্যাকসিন প্রাপ্তি ও ভ্যাকসিন প্রদানের যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা গেছে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ২৪ শতাংশ সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করেছে। আর গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৭ জন, তার মানে ১২ দশমিক ৫৩ শতাংশ লোকের প্রথম ডোজ টিকা সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন হয়েছে ৪৯ লাখ ২ হাজার ১৭০ জনের। অর্থাৎ দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের টিকার আওতায় আনতে হলে সরকারি হিসেবে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৫৬ হাজার লোককে টিকা দিতে হবে। তাতে ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে ২৩ কোটি ৫৭ লাখ ১২ হাজার ডোজ।

গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত ভ্যাকসিনের সংখ্যা ২ কোটি ৭২ লাখ ৫৩ হাজার ৭১৯ ডোজ। তার মধ্যে ভ্যাকিসন প্রদান করা হয়েছে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ৬১৭ জন। ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৭ জন। দ্বিতীয় ডোজ ৪৯ লাখ ২ হাজার ১৭০ জন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এখনো ২০ কোটি ৮৪ লাখ ৫৮ হাজার ২১৮ ডোজ ভ্যাকসিন দরকার।

আগস্ট পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৩০০ ডোজ, ফাইজার ১ লাখ ৬২০ ডোজ, সিনোফার্ম ৯৮ লাখ ৯ হাজার ৭৯৯ ডোজ, মর্ডানা ৫৫ লাখ ডোজ। সর্বমোট ২ কোটি ৭২ লাখ ৫৩ হাজার ৭১৯ ডোজ।

গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৬৩ ডোজ, দ্বিতীয় ডোজ ৪৬ লাখ ৫৮ হাজার ৯৯৭ জন। মোট ১ কোটি ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০ জন। ফাইজারের প্রথম ডোজ নিয়েছে ৫০ হাজার ২৫৫ জন, দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে ২৭ হাজার ৫৯০ জন। মোট ৭৭ হাজার ৮৪৫ জন। সিনোফার্ম প্রথম ডোজ ৬৮ লাখ ২৭ হাজার ৩৮৩ জন, দ্বিতীয় ডোজ ২ লাখ ১১ হাজার ৮০০ জন। মোট ৭০ লাখ ৩৯ হাজার ১৮৩ জন। মোট ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৭১ হাজার ৬১৭ জন। তারমধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৭ জন। দ্বিতীয় ডোজ ৪৯ লাখ ২ হাজার ১৭০ জন।

১০ আগস্ট পর্যন্ত ভ্যাকসিন মজুদ আছে ৭৫ লাখ ৮২ হাজার ১০২ ডোজ। জাতীয় ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইনের আওতায় গত ৭ আগস্ট একদিনে সারাদেশে ৩০ লাখ ৯১ হাজার ৬৩২ ডোজ ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে।

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে করোনাকালীন চিকিৎসা প্রদান করতে গিয়ে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে শহীদ ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা’ দ্রুততম সময়ে তাদের পরিবারের নিকট পৌঁছানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাংলাদেশ কর্ম কমিশন কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত ডাক্তারদের দ্রুত নিয়োগদানের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সুপারিশের আলোকে চলতি মাসের ৯ আগস্ট পর্যন্ত শহীদ ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীর পরিসংখ্যান দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেই পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ২২ জন ডাক্তার এবং ৪০ জন স্বাস্থ্যকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন। তারমধ্যে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ১০ জন মৃত্যুবরণকারী ডাক্তার এবং ১০ জন স্বাস্থ্যকর্মীর ওয়ারিশগণের অনুকূলে সরকার ঘোষিত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে। ৯ জনের আবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৩৩ জনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ পূর্বক অধিদফতরকে তালিকা দিতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের আওতায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান কর্মরত নার্সিং ও মিডওয়াইফারি শহীদ হয়েছেন ৩৩ জন। চলতি মাসের ৯ আগস্ট পর্যন্ত ৩৩ জন্য নার্সিং কর্মকর্তা মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মধ্যে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ২২ জুনের অনুকূলে সরকার ঘোষিত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে। ৫ জনের ক্ষতিপূরণের আবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৬ জনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ পূর্বক আবেদন গ্রহণ করার জন্য মহাপরিচালক নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সংসদ ভবনে ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র ১০ম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য আ.ফ.ম. রুহুল হক, মুহিবুর রহমান মানিক, মো. মনসুর রহমান, মো. আব্দুল আজিজ, সৈয়দা জাকিয়া নুর এবং মো. আমিরুল আলম মিলন অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠকে ‘বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট বিল, ২০২১’ এর আরও পরীক্ষা নিরীক্ষার লক্ষ্যে কমিটির সদস্য আ.ফ.ম. রুহুল হককে আহবায়ক করে একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। সাব-কমিটির পর্যালোচনা শেষে বিলটি সংসদে উত্থাপনের সিদ্ধান্ত বৈঠকে গৃহীত হয়।

বৈঠকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বিভিন্ন সংস্থা প্রধানগণসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।