দুর্ভোগে পানিবন্দি মানুষ
পদ্মা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে কোথাও কোথাও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে আবার কোথাও পানি কমায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ।
ছয়টি নদীর ৯ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীগুলো হলো যমুনা, পদ্মা, আত্রাই, ধলেশ্বরী, মেঘনা ও গড়াই। ফলে এসব নদীসংলগ্ন এলাকার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। তবে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী দুই দিনের মধ্যে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি এবং কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, যমুনা নদীর পানি আরিচায় ৫ সেন্টিমিটার ও মথুরায় বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মা নদীর পানিও ৩ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে—গোয়ালন্দে ৫৩, সুরেশ্বরে ২৮ ও ভাগ্যকূলে ৪ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া আত্রাই নদী বাঘাবাড়ী পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার, মেঘনা নদী চাঁদপুরে ১৯ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদী এলাসিন পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার ও গড়াই নদী কামারখালী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৫৩ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাবনায় পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এক সপ্তাহ ধরে পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ফরিদপুরের চর ও নিম্নাঞ্চলে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এর সঙ্গে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। ফলে ভোগান্তিতে রয়েছেন সেসব এলাকার শতাধিক গ্রামের বাসিন্দারা।
জামালপুরের ইসলামপুরে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র ও দশআনী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এরই মধ্যে যমুনার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া জেলার অভ্যন্তরীণ ইছামতি, হুরাসাগর, গুমানি, চলনবিলসহ বেশ কিছু নদী-বিলের পানিও বেড়েছে। কুষ্টিয়ায় এক দিনে পদ্মায় ৮ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। এ সময় গড়াই নদীর পানি কমেছে ১১ সেন্টিমিটার।
যমুনার শাখা নদীগুলোতে পানি বাড়ায় মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার নতুনপাড়া গ্রামের শতাধিক বাড়ির আঙিনায় হাঁটু পানি জমে গেছে। মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনায় নতুন করে উচ্চতা না বাড়লেও শাখা নদীগুলোতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। কালীগঙ্গা, ধলেশ্বরী, গাজীখালী ও ইছামতী নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জে স্থিতিশীল রয়েছে যমুনা নদীর পানি। তবে চলনবিলসহ জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। টাঙ্গাইলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। টাঙ্গাইল পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে ধলেশ্বরী, বংশাই ও পুংলী নদীর পানি। এর মধ্যে ধলেশ্বরীর নদীর পানি ৭ সেন্টিমিটার ও পুংলী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র আরো বলছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তত্সংলগ্ন ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় প্রদেশের স্থানগুলোতে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর ফলে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায়; খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ সহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।