ডেঙ্গু: উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা
কেউ হাতে লাগানো ক্যানোলার যন্ত্রণায় ছটফট করছে। কেউ রক্ত নেয়ার সময় কান্না করছে। কেউবা ঘুমিয়ে আছে ক্লান্ত শরীরে। এ চিত্র রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ঢাকা শিশু হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত শিশুদের শান্ত করতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকেরা। পাশাপাশি চিকিৎসার খরচ জোগাতে উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত তারা।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে বর্তমানে মোট ৬৩টি শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। তিনদিন আগে ৮০ জন ছিল। ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গত ১৫ দিন আগে হাসপাতালটিতে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথমে একটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করলেও এখন সেটা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। যেভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে মনে হচ্ছে পুরো ওয়ার্ডটিই আমাদের নিয়ে নিতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যত শিশু ভর্তি হচ্ছে করোনার ক্ষেত্রে তার সংখ্যা অনেক কম ছিল বলে জানায় সূত্রটি।
ঢাকা শিশু হাসপাতালই নয়, ডেঙ্গু চিকিৎসা হয় এমন সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালেও ভর্তি হচ্ছে শিশু রোগী। এ ছাড়া সাধারণ রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিদিন। দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় বেড়েছে এডিস মশার বিস্তার। উত্তর ও দক্ষিণের কয়েকটি ওয়ার্ডে এখন ডেঙ্গুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন বয়সীরা।
কীটতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্যবিদরা বলেছেন, আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বরের ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বাড়বে। আগামী মাসের ২য় সপ্তাহ থেকে প্রাকৃতিক উপায়েই ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে পারে। বৃষ্টিপাত কমলে এডিসের বিস্তার কমবে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় মৌসুম এডিস সার্ভে ২০২১-এ উঠে এসেছে ডেঙ্গুতে ঝুঁকি পূর্ণ বিভিন্ন এলাকার তালিকা। সেখানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় মগবাজার ও নিউ ইস্কাটন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসাবো ও গোড়ান এলাকায় ডেঙ্গুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করা হয়েছে।
উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের মগবাজার ও নিউ ইস্কাটন এলাকায় ডেঙ্গু মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। সূচক (বিআই) অনুযায়ী ৫৬ দশমিক সাত শতাংশ। ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার মধ্যে অভিজাত এলাকাও রয়েছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, নিকুঞ্জ, কল্যাণপুর, দারুসসালাম, মিরপুর-১০ নম্বর, কাজীপাড়া, মহাখালী, নিকেতন, আফতাব নগর, মেরুল বাড্ডা ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসাবো, গোড়ান, এলিফ্যান্ট রোড, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, আর কে মিশন রোড, টিকাটুলী, বনশ্রী, মিন্টো রোড, বেইলী রোড, বংশাল এলাকা সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এসব এলাকায় এডিসের বিস্তার বাড়ায় অনেকেই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন।
দুই সিটি করপোরেশন বলছে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত কীটনাশক প্রয়োগ করা হচ্ছে। এডিসের লার্ভা ধ্বংসে কাজ করছেন মশককর্মীরা। ইতিমধ্যে সর্বাত্মক জনবল ও শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছে। যেসব স্থাপনায় লার্ভা মিলছে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।